নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনলাইন মাধ্যমে তথা ভার্চুয়ালি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্বের শর্ত মানতেই এই পদ্ধতিতে সভা অনুষ্ঠিত হলো। আর এই সভায় ৪৭৬ কোটিটিাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৭৬ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে।
সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরার বেড়িবাঁধ ভেঙে সমুদ্রের লবণাক্ত জোয়ারের পানি কৃষি এলাকায় ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে এই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানিয়েছেন।
একনেক বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সাতক্ষীরার পোল্ডার, নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পোল্ডারের ভেতরের নদী খালগুলো পুনঃখনন এবং পুনরাকৃতির মাধ্যমে এলাকায় লবণাক্ত পানি ঢুকতে না দিতেই এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।”
একইসঙ্গে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ সুবিধা দিয়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করাও এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য বলে জানান মন্ত্রী।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমানে ওই এলাকায় চিংড়ি চাষের জন্য সমুদ্রের লবণাক্ত পানি প্রবেশ করানো হয়। এই কাজে কয়েকটি জায়গা থেকে পানি নেওয়ার ফলে সুষ্ঠূ ব্যবস্থাপনা ছিল না, যার ফলে বাঁধ নষ্ট হয়ে গেছে।
“প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন থেকে নির্ধারিত একটি জায়গা থেকে লবণাক্ত পানি নিতে হবে। ওই জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পানি নিতে গেলে যে খরচ হয় সেটা যেন ব্যবসায়ীরা দেন।”
মন্ত্রী জানান, অনেক দিন ধরে ওই এলাকার নদী খনন না হওয়ায় বাঁধগুলো নিচু হয়ে যায়। এমন অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড শিগগির প্রকল্পটি শুরু করে ২০২৩ সালের জুনে শেষ করবে।
এ প্রকল্পের আওতায় ওই এলাকার ৬০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার নদী পুনঃখনন করা হবে। নদী ড্রেজিং করা হবে ২০ দশমিক ৫০ কিলোমটার। খাল পুনঃখনন করা হবে ৩৪৪ কিলোমিটার। বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ করা হবে ১১৩ কিলোমিটার এবং ২৭টি নিষ্কাশন রেগুলেটর মেরামত ও পুনর্গঠন করা হবে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা নিরসন এবং নদী-খালের প্রাণ ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলনরত সাতক্ষীরার নাগরিক অধিকার আদায়ের গণসংগঠন নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরার সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম বলেন, ”আমরাসহ সাতক্ষীরার সচেতন নাগরিকবৃন্দ দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল, আন্দোলন করে আসছিল সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে। আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় এই প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় আমরা সাতক্ষীরাবাসী তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এখন আমাদের সচেতনভাবে খেয়াল রাখতে হবে এখানে যেন কোন দুর্নীতি না হয় এবং প্রকল্পের কাজ শতভাগ স্বচ্চতার সাথে বাস্তবায়িত হয়। তবেই সাতক্ষীরাবাসী জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে এবং আমাদের নদী-খালগুলো প্রাণ ফিরে পাবে।”
সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যাপক ভিত্তিতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলাসহ এই প্রকল্পে অধীনে বেতনা নদীর ৪৪ কিলোমিটার পুনঃখনন, মরিচ্চাপ নদীর ২২ কিলোমিটার পুনঃখনন এবং শহরের আশেপাশে ও নদীর সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য ৮৮টি খাল পুনঃখনন করা হবে বলে জানা গেছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার ১, ২, ৬-৮, এবং ৬-৮ (এক্সটেনশন) এর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক এই প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে সাতক্ষীরাবাসী জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবে বলে মনে করেন নাগরিক নেতৃবৃন্দ।
মঙ্গলবার (০২ জুন) একনেক সভা শেষে এক ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, দেশের ইতিহাসে প্রথম ভার্চুয়াল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১৬ হাজার ২৭৬ কোটি ৩ লাখ টাকা খরচে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত টাকার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে ১৪ হাজার ৪০১ কোটি ৫২ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণ ১ হাজার ৮৮১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার ১, ২, ৬-৮, এবং ৬-৮ (এক্সটেনশন) এর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প (তৃতীয় পর্যায়)’ প্রকল্প। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘কোভিড-১৯ এমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যান্ডামিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্প ও ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স এমার্জেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্স’ প্রকল্প। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (সপ্তম পর্যায়)’ প্রকল্প। বিদ্যুৎ, জ্বালানি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ) (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প ও ‘শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প; কৃষি মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘কৃষি যন্ত্রপাতি ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ব্যবস্থাকে অধিকতর লাভজনক করা’ প্রকল্প ও ‘মানসম্পন্ন মশলা বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিতরণ’ প্রকল্প।উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এটি দেশের ইতিহাসে প্রথম ভার্চুয়াল এবং করোনাকালীন সাধারণ ছুটির পর প্রথম সভা।