নোটবন্দি ঘোষণার পর থেকেই এ দেশে ডিজিটাল ট্রানজ্যাকশনের প্রচলন ক্রমশ বাড়ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য এখনও নগদ টাকায় আদান-প্রদানছাড়া উপায় নেই। কিন্তু এমন দেশও পৃথিবীতে রয়েছে যেখানে ভিক্ষুকরা পর্যন্ত ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভিক্ষে নিয়ে থাকেন। চীনের জিনান প্রদেশের এ হেন ডিজিটাল ভিক্ষের খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। জিনান চীনের এমন একটি জায়গা যেখানে প্রতি বছরই প্রচুর পরিমাণে বিদেশি পর্যটক বেড়াতে যান। সেই জিনান প্রদেশেরই ওয়াংফু পুল এলাকায় ভিক্ষুকরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভিক্ষে গ্রহণ করছেন।
কী ভাবে সম্ভব হচ্ছে এই ডিজিটাল ভিক্ষা? ভিক্ষুকরা নিজেদের ভিক্ষাপাত্রে কিউআর কোড সমন্বিত একটি কার্ড রেখে দিচ্ছেন। যারা ভিক্ষে দিতে ইচ্ছুক, তারা তাদের মোবাইলের ‘আলিপে’ কিংবা ‘উইচ্যাট ওয়ালেট’-এর মতো ডিজিটাল ওয়ালেট খুলে ওই কিউআর কোডটি স্ক্যান করে নিচ্ছেন। তার পর নিজের ইচ্ছেমতো অঙ্ক দান করছেন ভিক্ষে হিসেবে।
কিন্তু কেন এই পদ্ধতি? আসলে জিনান প্রদেশে ঘুরতে আসা বিদেশি পর্যটকরা স্থানীয় ভিক্ষুকদের প্রতি বেশ দয়াপরবশই থাকেন। কিন্তু তাদের কাছে অনেক সময়েই চৈনিক মুদ্রার খুচরো থাকে না। ডিজিটাল ট্রানজ্যাকশনে খুচরোর এই সমস্যা দূর করে।
কিন্তু এই পদ্ধতিতে ভিক্ষা গ্রহণ করতে হলে তো ভিক্ষুকের কাছেও মোবাইল ফোন থাকা প্রয়োজন। চীনের সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, চীনের ভিক্ষাজীবীদের কাছে মোবাইল ফোন থাকা এমন কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। বহু ভিক্ষুকই নিজের কাছে মোবাইল ফোন রাখেন।
চীনা মিডিয়া আরও জানাচ্ছে যে, উইচ্যাট ওয়ালেট অনেক সময়ে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ভিক্ষুকদের কিউআর কোড দিয়ে থাকে। কেউ দয়াপরবশ হয়ে সেই কিউআর কোড স্ক্যান করলেই কানেকশনটি একটি বিশেষ প্রোফাইলে রিডিরেক্ট হয়ে যায়। তার পর ভিক্ষাপ্রদানকারী কোনও টাকা না দিলেও একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ উইচ্যাটের তরফে ওই ভিক্ষুককে দিয়ে দেওয়া হয়। এতে শেষ পর্যন্ত উইচ্যাটেরই প্রচার হয় এবং লাভ হয়।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, জিনান প্রদেশের এক জন ভিক্ষুক প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৪৫ ঘণ্টা কাজ করেন। আর উইচ্যাটের কিউআর কোড স্ক্যান করেই এক জন ভিক্ষুক প্রতি সপ্তাহে গড়ে ভারতীয় মুদ্রার হিসেবে ৭ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত রোজগার করেন।