অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক খেলোয়াড় নাঈমুর রহমান দুর্জয় সংসদ সদস্য (এমপি) হওয়ার পর পরিচালক বনে যান একটি পাওয়ার প্লান্টের। আর এমপি হওয়ার পর তার আয়ও বেড়ে যায় আট গুণ।
২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন ও ২০১৮ সালের সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দুর্জয়ের দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
দুর্জয় নামে তিনি পরিচিত হলেও তার নির্বাচনী নাম এএম নাঈমুর রহমান। পিতা মরহুম এএম সায়েদুর রহমান, মাতা নীনা রহমান। তার গ্রামের নাম খাগ্রাটা, ডাকঘর বৈকুণ্ঠপুর, উপজেলা ঘিওর ও জেলা মানিকগঞ্জ। শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি।
জাতীয় সংসদের ১৬৮ মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকের জোরে তিনি দু’বারই জয়লাভ করেন। আর প্রথমবার এমপি হওয়ার পরপরই তার বাড়তে থাকে আয় ও সম্পদ।
নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা থেকে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে সে সময় এবং অতীতে ফৌজদারি কোনো মামলা ছিল না।
দুর্জয় তার পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, ব্যবসা। দু’টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। হলফনামায় তিনি নিজেকে চেজ ট্রেডিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চেজ পাওয়ার লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
যদিও ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে পূর্বে তিনি যে হলফনামা দাখিল করেন, সেখানে তার পেশার বিবরণীতে পাওয়ার প্লান্টের পরিচালক পদটি ছিল না। সে সময় তিনি দু’টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত বলে উল্লেখ করেছিলেন। যার একটিতে তিনি নিজেকে চেজ ট্রেডিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং অন্যটিতে ফুওয়াং ফুড অ্যান্ড বেভারেজের পরিচালক হিসেবে দাবি করেছিলেন।
অর্থাৎ প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যেই তিনি বনে যান পাওয়ার প্লান্টের পরিচালক।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সময় তিনি বছরে আয় দেখিয়েছেন ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার ২শ টাকা। এক্ষেত্রে কৃষিখাত থেকে বছরে ৫২ হাজার ৮শ টাকা, পারিতোষিক ও ভাতাদি থেকে আয় ২৩ লাখ ৪২ হাজার ৪শ টাকা এবং মৎস্য চাষ থেকে আয় দেখিয়েছেন ১৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
এই হলফনামা দেওয়ার পাঁচ বছর পূর্বে দশম সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি বছরে আয় দেখিয়েছিলেন ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। যেখানে কৃষিখাতে ১ লাখ টাকা এবং ব্যবসা থেকে ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা আয় ছিল তার।
অর্থাৎ প্রথমবার এমপি হওয়ার পর পাঁচ বছরের মধ্যে তার বাৎসরিক আয় বাড়ে ৭ দশমিক ৬৮ গুণ।
দশম সংসদ নির্বাচনের সময় তার কাছে ছিল ৬ লাখ টাকা ও স্ত্রীর কাছে ছিল ১ লাখ টাকা। এর মধ্যে তার হাতে নগদ ছিল ১ লাখ টাকা ও ব্যাংকে ৫ লাখ টাকা।
পাঁচ বছর পর একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ব্যাংকে কোনো অর্থ থাকার তথ্য উল্লেখ না করলেও হাতে নগদ ৩৫ লাখ টাকা ছিল বলে উল্লেখ করেন হলফনামায়। অর্থাৎ জমা অর্থের পরিমাণ তার পাঁচ বছরে বাড়ে ৫ দশমিক ৮৩ গুণ।
দশম সংসদ নির্বাচনের সময় তার ৪০ লাখ ও ২০ লাখ টাকা করে মোট ৬০ লাখ টাকা মূল্যের দু’টি গাড়ি ছিল। আর একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় তিনটি গাড়ির মালিকানা দেখান তিনি। এগুলোর মধ্যে একটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের টয়োটা গাড়ি, ৩৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি সেলুন কার ও ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ল্যান্ড ক্রুজার।
এছাড়া এ সময় তিনি ব্যবসায়িক মূলধন হিসেবে ৩৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৭ টাকা ও ৫০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী থাকার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে দশম সংসদ নির্বাচনের সময় নিজের নামে ১৫ হাজার টাকার ও স্ত্রীর নামে ৩৫ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ছিল। এছাড়া অন্যান্য অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে ১ লাখ টাকার সম্পদ ও স্ত্রীর নামে ৩০ হাজার টাকা মূল্যের সম্পদের উল্লেখ করেন।
দশম সংসদ নির্বাচনের সময় তার স্ত্রীর নামে ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার থাকলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় হলফনামাফায় অলংকার নিয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি দুর্জয়।
স্থাবর সম্পদের হিসেবে দশম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি নিজ নামে ৫০ লাখ টাকা মূল্যের কৃষি জমি, ২০ লাখ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি, ১০ লাখ টাকা মূল্যের একটি দালানের মালিকানার কথা উল্লেখ করেন। আর স্ত্রীর নামের দেখান ৩ কাঠা অকৃষি জমি।
আর একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় স্থাবর সম্পদ হিসেবে তিনি হলফনামায় নিজ নামে ১২ বিঘা কৃষি জমি, ১৫ শতাংশ অকৃষি জমি ও ১টি একতলা দালান থাকার কথা উল্লেখ করেন।
দশম সংসদ নির্বাচনের পূর্বে তার ব্যাংক ঋণ বা দায়-দেনা না থাকলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি ঋণ থাকার উল্লেখ করেন। সে সময় তার আইএফআইসি ব্যাংকে ২১ লাখ ৮২ হাজার ৭১১ টাকার ব্যক্তিগত ঋণ ছিল।