‘একমাত্র তার খেলাই গাঁটের টাকা খরচ করে দেখতে চাইব আমি’ ব্রায়ান লারা সম্পর্কে কথাগুলো বলেন ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান রাহুল দ্রাবিড়। ক্রিকেট বিশ্বে লারার মতো নিখুঁত ব্যাটসম্যান নেই আর একজনও। ক্রিকেট বল পেটানোটাকে রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যান এই ক্যারিবীয় বাটসম্যান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও টেস্টে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি তাঁর দখলে। টেস্টে নয়টি ডাবল সেঞ্চুরি ও দুটি ট্রিপল সেঞ্চুরি করা একমাত্র ক্রিকেটার এই ব্রায়ান লারা। রেকর্ড ভাঙা গড়াটাকে নিয়মিত অভ্যাস বানিয়ে ফেলায় রেকর্ডের বরপুত্র বলা হয়। ক্রিকেট দেবতার আশীর্বাদপুষ্ট এই ব্যাটসম্যানকে ক্রিকেটের বরপুত্রও বলা হয়। কিংবদন্তি এই ক্রিকেটারের আজ জন্মদিন। ১৯৬৯ সালের আজকের দিনেই ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোব্যাগোর স্যান্টা ক্রুজে জন্মগ্রহণ করেন ব্রায়ান চার্লস লারা।
১১ ভাইবোনের মধ্যে দশম ছিলেন লারা। আদর করে সবাই তাঁকে প্রিন্সি বলে ডাকতেন। ছয় বছর বয়সেই তাঁকে স্থানীয় ক্রিকেট কোচিং ক্লাবে ভর্তি করে দেওয়া হয়। এখানেই ব্যাটিংয়ে হাতেখড়ি হয় তাঁর। এরপর সেন্ট জোসেফ রোমান ক্যাথলিক প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন লারা। চৌদ্দ বছর বয়সে ফাতিমা কলেজে ভর্তি হন তিনি। পেশাদার ক্রিকেটের পাঠটা এখানেই শেখেন তিনি। স্কুল বয়েজ লিগে ১২৬ গড়ে করেন ৭৪৫ রান। দুর্দান্ত এই পারফরম্যান্সের কারণে সেই বছরই তিনি ত্রিনিদাদ অনূর্ধ্ব ১৬ দলে ডাক পান। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৫ বছর।
১৯৮৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যুব ক্রিকেট টুর্নামেন্টে কার্ল হুপারের করা ৪৮০ রানের রেকর্ড ভেঙে দিয়ে ৪৯৮ রানের নতুন রেকর্ড গড়েন। পরের বছর প্রথম শ্রেণির ম্যাচে অভিষেক হয় ব্রায়ান লারার। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই ম্যালকম মার্শাল ও জোয়েল গার্নারদের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে করেন ৯২ রান।
ক্যানসারে বাবার মৃত্যু অনেকটাই ভেঙে দেয় তাঁকে। তবে শোক কাটিয়ে আবার ক্রিকেটে ফেরেন তিনি। ১৯৮৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘বি’ দলের নেতৃত্ব দেন লারা। ওই মৌসুমে লারার ব্যাটিং ছিল দেখার মতো। ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফুলঝুরি ছোটন। ফলশ্রুতিতে, পরের বছর, ১৯৯০ সালে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। পাকিস্তানের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে ভালো করতে পারেননি লারা। প্রথম ইনিংসে করেন ৪৪ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৫।
সেই সিরিজেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতেও অভিষেক হয় লারার। ভালো করতে পারেননি অভিষেক ওয়ানডেতেও। মাত্র ১১ রান করে ওয়াকার ইউনিসের বলে আউট হন তিনি।
শুরুর কয়েকটা বছর সেভাবে সাফল্য পাননি তিনি। লারা নিজেকে পুরোপুরিভাবে মেলে ধরেন ১৯৯২-৯৩ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরে। তৃতীয় টেস্টের আগে সিরিজের ১-০ তে পিছিয়ে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রেইগ ম্যাকডরমেট, মার্ভ হিউজ, শেন ওয়ার্নদের মতো বোলারদের সামনে ২৭৭ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেন লারা। টেস্টে এটাই লারার প্রথম সেঞ্চুরি। পরের বছর আরো বিস্ফোরক হয়ে ওঠেন এই ক্রিকেটার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৭৫ রানের একটা ইনিংস খেলে স্যার গ্যারিফিল্ড সোবার্সের ২৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে দেন তিনি। এরপর কাউন্ট্রি ক্রিকেটে ইয়র্কশায়ারের হয়ে করেন ৭ ইনিংসে ৬টিতেই সেঞ্চুরি করেন এই বরপুত্র। যা আজও বিশ্বরেকর্ড হয়ে আছে। তিনি এখানেই খেলেন ৪২৭ বলে ৫০১ রানের বিরল এক ইনিংস।
এর পর থেকেই ক্রিকেটে শুরু হয় লারা যুগ, যা চলেছে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। যে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলে ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি, ২০০৬ সালে সেই দলটির বিপক্ষেই সর্বশেষ টেস্টও খেলেন এই ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান। অধিনায়ক হিসেবেও সফল ছিলেন লারা। দেশকে ৪৭ টেস্টে নেতৃত্ব দেন তিনি। ক্রিকেটের একমাত্র ৪০০ রানের ইনিংসটি অধিনায়ক হিসেবেই খেলেন তিনি। ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। শুভ জন্মদিন ব্রায়ান লারা।