কলারোয়া প্রতিনিধি: সরকারি চিকিৎসকদের সিংহভাগ সরকারি হাসপাতালের বদলে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ব্যস্ত থাকে, এটি ওপেন সিক্রেট। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের চাকরিটি তারা বজায় রাখে দুটি কারণে। প্রথমত এ চাকরির মাহাত্ম্য অনেক, যা ব্যবহার করে প্রাইভেট প্র্যাকটিস কিংবা বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে দুই হাতে টাকা উপার্জন করা যায়। দ্বিতীয়ত সরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের ডিউটি মূলত হাজিরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ডা: মো: ইসমাইল হোসেন মা ও শিশু বিষয়ে অভিজ্ঞ হলেও নিজস্ব ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন অপারেশনসহ সকল রোগের৷
রবিবার (২৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরা কলারোয়া উপজেলার আমানুল্লাহ কলেজ সংলগ্ন শিশু ও জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায় সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা: ইসমাইল হোসেন ফ্যামিলি হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা থাকলেও তিনি তখন অপারেশন করে ক্লিনিকে তার চেম্বারে সেবা নিতে আসা রোগীদের সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি না মেনেই দিচ্ছেন রোগীদের চিকিৎসা ও ব্যবস্থা পত্র৷ এসময় তার মাস্ক ও সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় উপকরনের ব্যাবহার নেই৷ দীর্ঘদিন যাবত তার তত্ত্বাবধানে অনিবন্ধিত ক্লিনিকেই গড়ে উঠেছে ফার্মেসি এমনকি রিসিপশনিস্ট পরিচালনা করেন ল্যাব টেকনিশিয়ানের কাজ৷
ভুক্তভোগী অনেক রোগী নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় যত্রতত্র পরীক্ষার রিপোর্ট যেখানে নিন্মমানের সেবা দিয়ে গলাকাটা অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন এ ক্লিনিক কতৃপক্ষ৷
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক্তার ইসমাইল হোসেন তার ফ্যামিলি হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বর্তমান করোনা সংক্রমনের কারণে হাসপাতলে করোনার উপরে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে চিকিৎসার পরে হোম কোয়ারেন্টাইন এ থাকতে হয়৷ আর এখন আমার ফ্যামিলি হোম কোয়ারান্টিনে থাকার কথা৷
ফ্যামিলি হোম কোয়ারান্টাইনে থাকার কথা থাকলেও কেন মুখে মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চিকিৎসা দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নে দায়সারা ও হাস্যকর উত্তরে বলেন, কোন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে মাস্ক ও স্বাস্থ্য বিধি যথাযথ ব্যবহার করা হচ্ছে ? আর আমার এখানে যারা আছে তাদের অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করছে না৷ ইকুইপমেন্ট সবই আছে কিন্তু যারা পরেনি এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার৷ তিনি এক প্রকার অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন আপনারা লেখেন ক্লিনিক ও আমার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ যা ব্যবস্থা নেয় নেবে৷
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: হাবিবুর রহমান জানান, বর্তমান করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে স্পেশালিস্ট ডাক্তার হিসেবে তিনি দায়িত্বরত আছেন৷ দায়িত্বে অবহেলায় আপনাদের কাছে যে তথ্য আছে তার উপরে আপনারা নিউজ করেন রিপোর্টের কপি পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব৷
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা: হোসাইন শাফায়েত জানান, কলারোয়া শিশু ও জেনারেল হাসপাতালের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ আমরা দ্রুতই অনিবন্ধিত এসকল ক্লিনিক এর বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেব৷
সুশীল সমাজের অনেকেই জানান, একজন চিকিৎসক যে প্রতিষ্ঠানে কাজে আগ্রহী হবে এবং তার নথিপত্র জমা দেবে সেখানেই তাকে সেবা দিতে হবে। একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তারা সেবা দিতে পারবে না। সরকারি চিকিৎসকদের ঢালাওভাবে একাধিক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনে বাদ সাধার উদ্যোগ প্রশংসাজনক। তবে এটি যাতে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে প্রশাসনের৷