আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক ডা. রেড্ডি’স ল্যাবরেটরিজ-এর সঙ্গে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির আওতায় দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশটিতে; নিজেদের উৎপাদিত করোনাভাইরাস টিকার ১০ কোটি ডোজ সরাসরি সরবরাহ করবে রাশিয়া।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এক ঘোষণায় একথা জানিয়েছে, টিকা গবেষণায় মূল অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (আরডিআইএফ)। আন্তর্জাতিক বাজারে টিকা রপ্তানিতে এটি মস্কোর এক বড় সাফল্য হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
আরডিআইএফ হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ তহবিল। পাশাপাশি সংস্থাটি ভারতের উৎপাদকদের সঙ্গে স্পুতনিক-ভি ভ্যাকসিনের মোট ৩০ কোটি ডোজ উৎপাদনের চুক্তি করেছে। ভারত রুশ জ্বালানি তেল এবং সমরাস্ত্রের অন্যতম শীর্ষ ক্রেতা।
তৃতীয় বা শেষধাপের পরীক্ষা শেষ না করেই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত টিকার অনুমোদন দিয়েছিল রাশিয়া। কিন্তু, ভারতে জনসাধারণের মধ্যে প্রয়োগের আগে এটির শেষধাপের বড় পরিসরের পরীক্ষা চালাতে হবে।
ভারতে স্পুতনিক- ভি’র ক্লিনিক্যাল এ ট্রায়াল পরিচালনা করবে দেশটির অন্যতম শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারক ডা. রেড্ডি’স। পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে অনুমোদনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ভারতের কেন্দ্রীয় ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। আরডিআইএফ তাদের বিবৃতিতে এসব কথা জানায়। অর্থাৎ, এই হিসেবে অনুমোদন পূর্ব উৎপাদনের চুক্তি হয়েছে, এবং সবুজ সংকেত পাওয়া মাত্রই বিপুল পরিমাণে টিকার ডোজ উৎপাদন করা যাবে। আবার রাশিয়ায় উৎপাদিত ভ্যাকসিন চালানও এসে পৌঁছে যাবে।
সম্মতি পেলে চলতি বছর বা ২০২০ সালের শেষদিকেই ভারতের বাজারে পাওয়া যাবে রুশ ভ্যাকসিনটি। তার আগে অবশ্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রতিষেধকটির নিবন্ধনও নিতে হবে। খবর রয়টার্সের।
তৃতীয় স্তরে ভ্যাকসিনের সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা যাচাইয়ে দশ সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবীর দেহে বড় পরিসরে পরীক্ষামূলক প্রার্থী টিকা দেওয়া হয়। কিন্তু রাশিয়াই প্রথম দেশ যারা এ ধারাবাহিকতা ভঙ্গ করে নতুন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় স্পুতনিক-ভি’র অনুমোদন দেয়। দেশটির এ পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ এবং নিন্দার ঝড় ওঠে বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসক মহলে। অনেক শীর্ষ বিশেষজ্ঞই এর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন।
তবে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রেক্ষিতে ডা. রেড্ডিস- এর কো-চেয়ারম্যান জি ভি প্রসাদ জানান, রুশ টিকাটির প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল আশাব্যঞ্জক ছিল।
‘ভারতে কোভিড-১৯ বিরোধী লড়াইয়ে এটি নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে’ প্রসাদ বলছিলেন।
ভারতে স্পুতনিক-ভি বিক্রির দর বা স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে কেমন খরচ হবে; সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়নি আরডিআইএফ। তবে ইতোপূর্বে তারা জানিয়েছিল, খরচ ওঠানো ছাড়া এ ভ্যাকসিন বিক্রি করে মুনাফা অর্জন তাদের মূল লক্ষ্য নয়।
এমন সময় রুশ ভ্যাকসিন নিয়ে এ সংবাদ জানা গেলো; যখন ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধকোটি ছাড়িয়েছে। রোগীর চাপ বাড়ছে দেশটির হাসপাতাল ব্যবস্থায়। বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ চাহিদা এবং সঙ্কটাপন্ন রোগীর জীবন বাঁচাতে অসম এক লড়াইয়ে অবতীর্ণ দেশটির স্বাস্থ্য কর্মীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ৫০ লাখ আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ভারত। জরুরি ভিত্তিতে কিছু টিকা অনুমোদনের কথা ভাবা হচ্ছে, বলে চলতি সপ্তাহেই জানিয়েছিল দেশটির জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। সে সময় বলা হয়, বয়স্ক এবং সংক্রমণের উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের দেওয়ার লক্ষ্যেই এ অনুমোদনের বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।
এদিকে আরডিআইএফ ভারতের আগেই- কাজাখস্তান, ব্রাজিল এবং মেক্সিকোর সঙ্গে ভ্যাকসিন সরবরাহের চুক্তি করেছে। আর স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে চুক্তি করেছে সৌদি আরবের একটি রাসায়নিক কোম্পানির সঙ্গেও।