আশাশুনি ব্যুরো : মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই আশাশুনির বিভিন্ন ইউনিয়নে শুরু হয়েছে পানির সংকট। সংশ্লি¬ষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রয়োজনের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত, নদীর নাব্যতা হ্রাস ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
নানা কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনের তুলনায় কম বৃষ্টি, নদীর নাব্যতা হ্রাস, নদীর উৎস মুখ বাধাগ্রস্ত হওয়া ও ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের তুলনায় স্তরে পানি না জমা অন্যতম। এর ফলে বিভিন্ন উৎপাদক নলকূপ সমূহের পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এছাড়া এর প্রভাব পড়ছে টিউবওয়েলের ওপর। এ কারণে টিউবওয়েল থেকেও মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় কম পানি পাচ্ছে।
আশাশুনিতে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলায় গ্রামের পর গ্রাম মিলছে না পানের উপযোগী পানি। তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে পানির সংকট। উপজেলা সদরে রয়েছে সুপেয় পানির সংকট। উপজেলার অধিকাংশ জায়গায় পানির স্তর নিচে নামতে শুরু করেছে। ফলে নলকূপে পানি উঠানো কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ অনুপযোগী পানি পান করে আক্রান্ত হচ্ছে জটিল ও কঠিন রোগে। উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের লোক সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। এর মধ্যে ৯০ ভাগ মানুষ সুপেয় পানি পান থেকে বঞ্চিত।
আশাশুনির পানিকে স্থান বিশেষ শূন্য দশমিক ৫ থেকে শূন্য দশমিক ৯ মিলি লিটার কেলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া রয়েছে পরিসংখ্যান অনুযায়ী আশাশুনি উপজেলায় পানি শুধু পান অনুপযোগী নয় ব্যবহার অনুপযোগী রয়েছে। আশাশুনি উপজেলার খাল বিল, হাওড়, পুকুর, সর্বত্র লোনা পানি তুলে অপরিকল্পিকত ভাবে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে।।এতে সমগ্র এলাকায় পানি, মাটি, এবং পরিবেশ হয়ে পড়ছে দূষিত। ফলে আশাশুনির মানুষ মাইলের পর মাইল পেরিয়ে পানি সংগ্রহ করছে। সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামগুলোর অবস্থা আরো করুণ। তথ্যানুযায়ী, আশাশুনির গভীর নলকূপের ক্ষেত্রে নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত পানির স্তর দ্রুত নামতে থাকে। ফলে অধিকাংশ পানি নলকূপ দিয়ে উঠে না। এ কারণে উপজেলার অধিকাংশ মানুষ পান করতে বাধ্য হয় অনুপযোগী পানি। পানিতে স্বাভাবিক লবণাক্ততার ১ থেকে ৩ হাজার মিলোসিস সেন্টিমিটার। বাংলাদেশের প্রতি ১০০ মিলিমিটার পানিতে সর্বোচ্চ চারটি কেলিফার্ম ব্যাকটেরিয়া গ্রহণযোগ্য। জেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের রিপোর্ট অনুযায়ী উপজেলার ৯০ ভাগ নলকূপের পানিতে গ্রহণ যোগ্যতা মাত্রার চেয়ে অধিক আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে আশাশুনির দক্ষিণ অঞ্চলের অবস্থা আরও খারাপ।
আশাশুনি উপজেলার মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়না গাঁটের টাকা খরচ করে সুপেয় পানি সংগ্রহ করা। অথচ আশাশুনির যে দিকে চোখ যায় পানি আর পানি, অফুরান্ত পানি। তবে তা ব্যবহার অনুপোযোগী, অপেয় লবণাক্ততা। আশাশুনির প্রতাপনগর, খাজরা, শ্রীউলা ,অনুলিয়া, শোভনালি, কাদাকাটি, বড়দল এলাকার অধিকাংশ লোকের পানি সংগ্রহ করতে হয় ১০ হতে ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে। এরা সপ্তাহে দুই দিন কলস কিংবা জারিক্যানে ভরে পানি সংগ্রহ করে থাকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অফিস সূত্রে জানা যায় মতে মাত্রারিক্ত আর্সেনিক,আয়রন,লবনাক্ততা এবং ব্যকটেরিয়া যুক্ত পানি পান করলে হৃদরোগ, যৃকত রোগ, ডায়রিয়া, আমাশয়, চর্মারোগসহ বিভিন্ন কঠিন ও জটিল রোগ হতে পারে।
পূর্ববর্তী পোস্ট