খেলার খবর : দুই দলের প্রথম সাক্ষাতে বেক্সিমকো ঢাকার বিপক্ষে মাত্র ১৪৬ রান করেই ৩৭ রানের ব্যবধানে জিতেছিল জেমকন খুলনা। পরে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের সঙ্গে প্লে-অফের টিকিটও নিশ্চিত করে নেয় তারা। এবার দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের খুলনাকে হারিয়ে প্রতিশোধ নেয়ার পাশাপাশি সেরা চারের টিকিটও নিশ্চিত করে ফেলেছে মুশফিকুর রহীমের ঢাকা।
সাব্বির রহমানের ফিফটির সঙ্গে নাইম শেখ ও আকবর আলির ঝড়ো ব্যাটে ১৭৯ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় ঢাকা। জবাবে রবিউল ইসলাম রবির অফস্পিনের জবাবই খুঁজে পায়নি খুলনা। নিজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন রবি, খুলনা অলআউট হয়ে গেছে ১৫৯ রান। ফলে ২০ রানের জয়ে তৃতীয় দল হিসেবে প্লে-অফে পৌঁছে গেছে মুশফিকুর রহীমের দল।
রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে খুলনা। একপ্রান্ত ধরে রেখে জহুরুল ইসলাম অমি ফিফটি করলেও হতাশ করেন টপঅর্ডারের অন্য ব্যাটসম্যানরা। আসরে নিজের প্রথম ফিফটিতে ৩৬ বলে ৫৩ রান করেন জহুরুল। ইনিংসের ১৩তম ওভারে সাজঘরে ফেরার আগে ৪ চারের সঙ্গে ২ ছয়ের মারে সাজান নিজের ইনিংস।
হতাশ করেন জাকির হাসান (৪ বলে ১), সাকিব আল হাসান (৮ বলে ৭), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (২৬ বলে ২৩), আরিফুল হক (৯ বলে ৭) ও মাশরাফি বিন মর্তুজারা (২ বলে ১)। আশা জাগিয়েছিলেন শামীম পাটোয়ারি, মাত্র ৯ বলে খেলেন ২৪ রানের ঝড়ো ইনিংস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কাজে লাগেনি। শেষদিকের ব্যাটসম্যান হাসান মাহমুদ ৯ বলে ১৫ রান করলেও জয়ের ব্যবধান কমে ঢাকার।
খুলনাকে ১৫৯ রানে অলআউট করার পথে একাই ৫ উইকেট নিয়েছেন ঢাকার অফস্পিনার রবিউল ইসলাম রবি, ৩.৩ ওভারে ২৭ রান খরচায় ৫ উইকেট নেন তিনি। এছাড়া দুই পেসার রুবেল হোসেন ও মুক্তার আলি নেন ২টি করে উইকেট। অন্য উইকেটটি নেন নাসুম আহমেদ।
এর আগে টস হেরে ফিল্ডিং করতে নেমে আগের ম্যাচের মতোই দুই প্রান্ত থেকে বোলিং শুরু করেন মাশরাফি বিন মর্তুজা ও সাকিব আল হাসান। মাশরাফির করা প্রথম ওভারে আসে মাত্র ৩ রান। কিন্তু পরের ওভারেই সাকিবের ওপর চড়াও হন ঢাকার বাঁহাতি ওপেনার নাইম শেখ। সেই ওভারে হাঁকান ৪টি ছক্কা। প্রথম দুই বলে সোজা সীমানাছাড়া করেন লংঅন দিয়ে। পরে আবার শেষ দুই বলে হাঁকান স্কয়ার লেগ ও কাউ কর্নার দিয়ে।
এমন উড়ন্ত শুরুটা অবশ্য ধরে রাখতে পারেননি নাইম। মাশরাফির দ্বিতীয় ওভারে ফের ৩ রান নেয় ঢাকা। চতুর্থ ওভারে বোলিংয়ে আসেন শহীদুল ইসলাম। তার ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে পরের ডেলিভারিতেই সাজঘরের পথ ধরেন নাইম শেখ। আউট হওয়ার আগে ৫ ছক্কার মারে ১৭ বলে ৩৬ রান করেন তিনি। উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ৪১ রানে। যতক্ষণ নাইম হাঁকাচ্ছিলেন, হাত খোলেননি সাব্বির রহমান।
তবে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর তিন নম্বরে নামা আলআমিন জুনিয়রকে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন সাব্বির। দুই প্রান্ত থেকেই চালিয়ে খেলতে থাকেন সাব্বির ও আলআমিন। বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন আলআমিনই। দুজনের জুটিতে আসে ৪২ বলে ৬৪ রান। ইনিংসের ১১তম ওভারে ৪ চার ও ১ ছয়ের মারে ২৫ বলে ৩৬ রান করে আউট হন আলআমিন। নাজমুল অপুর ওভারে বাউন্ডারিতে দারুণ ক্যাচ ধরেন শামীম পাটোয়ারি।
আলআমিন আউট হওয়ার ঠিক পরের বলেই ডাউন দ্য উইকেটে বড় ছক্কা হাঁকান সাব্বির। ইনিংসের ১১ ওভারেই তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১১১ রান। কিন্তু ১২তম ওভারেই আসে বড় ধাক্কা। মাশরাফি বিন মর্তুজার ব্যক্তিগত শেষ ওভারের শেষ বলে নিজের উইকেট হারান ঢাকার অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম (৫ বলে ৩)। মাশরাফির স্লোয়ারটি অনসাইডে খেলার চেষ্টা করেন মুশফিক, লিডিং এজ হয়ে বল চলে যায় গালিতে। সেখানে ফুল লেন্থ ডাইভ দিয়ে মুশফিককে সাজঘরের পথ ধরান শামীম। নিজের ৪ ওভারে ২৬ রান খরচায় এই ১ উইকেট নেন মাশরাফি।
মুশফিককে অল্পেই ফেরানোর পর ইনফর্ম ইয়াসির রাব্বিকে রানের খাতাও খুলতে দেয়নি ঢাকা। এতে অবশ্য দায় শুধু ইয়াসিরের নিজেরই। সাকিবের বলে কভারে ঠেলে দিয়েই রানের জন্য ছোটেন সাব্বির, সাড়া দিয়েছিলেন ইয়াসিরও। কিন্তু তা শেষ করতে পারেননি। মাহমুদউল্লাহর দারুণ থ্রোতে কোনো বল খেলার আগেই রানআউট হয়ে যান ইয়াসির। দুই ওভারে আসে মাত্র ৮ রান।
নাজমুল অপুর করা ১৫তম ওভারে ফের দ্বিতীয় ওভারের পুনর্মঞ্চায়ন করেন আকবর আলি, হাঁকান ৪টি ছক্কা। প্রথম দুই বলে ছক্কা হাঁকানোর পর ডট দেন তৃতীয়টি। পরের দুই বলে আবারও সোজা পাঠিয়ে দেন সীমানার ওপারে। তবে আকবরের ইনিংসও বড় হয়নি। হাসান মাহমুদের ওভারে মাশরাফির হাতে ক্যাচ দেয়ার আগে মাত্র ১৪ বলে খেলেন ৩১ রানের ঝড়ো ইনিংস।
অন্যদিকে নিজের ক্যারিয়ারের ১৬তম ফিফটি তুলে নেন সাব্বির রহমান। তিনি আউট হন ১৭তম ওভারে। সাজঘরে ফেরার আগে ৩৮ বলে ৫ চার ও ৩ ছয়ের মারে ৩৮ বলে ৫৬ রান করেন সাব্বির। তিনি ফেরার পর শেষের ২০ বলে মাত্র ১৩ রান নিতে পেরেছে ঢাকা। তাদের ইনিংস থামে ৭ উইকেটে ১৭৯ রানে।
ডেথে দুর্দান্ত বোলিং করেন হাসান মাহমুদ। সবমিলিয়ে ৪ ওভারে মাত্র ২৩ রান খরচায় ১ উইকেট নেন হাসান। এছাড়া শহীদুল ইসলাম নেন ২টি উইকেট।