রাজনীতি ডেস্ক : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামিকাল শনিবার সকালে। সভায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিতে করণীয় বিষয়ে একটি ‘গাইড লাইন’ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্ধিত সভায় দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে যেসব নির্দেশনা দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনসহ দলীয় ঐক্য সুদৃঢ়করণ, সরকারের উন্নয়নের চিত্র জনগণের কাছে তুলে ধরা। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াওসহ তাদের দুর্নীতির চিত্র মানুষের কাছে কিভাবে পৌঁছানো যায়, তারও নির্দেশনা দেবেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি সর্বশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বর্ধিত সভা নিয়ে তৃণমূল নেতাদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের কয়েকজনের মতে, এটি হবে নিয়মরক্ষার সভা। তারা বলেন, জাতীয় সম্মেলনের পরে একটি বর্ধিত সভা করতে হয়। এটি গঠনতন্ত্রের বিধান। এ বিধান অনুযায়ীই মূলত এ বর্ধিত সভা। এর বাইরে আর কিছুই নয়। তবে দল গোছানো, দ্বন্দ্ব-সংঘাত দূর করা, ঐক্য নিশ্চিত করে দলকে সুসংগঠিত করা, জনগণের আস্থা অর্জন ও আগামী নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে করণীয় কী হতে পারে, তার একটি ‘গাইড লাইন’ আসবে এই সভায়। আর তা দেবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।
সভায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় পরিষদ সদস্যরা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সংসদ সদস্য, সব জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, দফতর ও উপ-দফতর সম্পাদক, প্রচার ও প্রকাশনা, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদকরা উপস্থিত থাকবেন। বর্ধিত সভার পরে রবিবার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দফতর ও উপ-দফতর সম্পাদক, প্রচার ও প্রকাশনা, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদকদের নিয়ে আবার বৈঠক করবেন।
আওয়ামী লীগ নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেন, বর্ধিত সভায় ৮ বিভাগের আট জন তৃণমুল নেতার বক্তব্য শুনবেন শেখ হাসিনা। এরপরই বক্তব্য রাখবেন দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপরই আগত নেতাদের উদ্দেশে বিশেষ নির্দেশনা দেবেন দলীয় সভাপতি।
জানা গেছে, নির্বাচন কেন্দ্রিক বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হবে তৃণমূল নেতাদের। নীতি-নির্ধারণী নেতারা বলেন, সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলো দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার জানা। সুতরাং সেগুলো নতুন করে কারও মুখ থেকে শোনার সম্ভাবনা একেবারেই কম।
বর্ধিত সভায় দলের সদস্য সংগ্রহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী জেলার নেতাদের গঠনতন্ত্র ঘোষণাপত্র নির্বাচনি ইশতেহার ও বিএনপি জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভিডিওচিত্র নেতাদের হাতে তুলে দেবেন। এই ভিডিওচিত্র ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানা পর্যায়ে পৌঁছে দিয়ে তা পাড়া-মহল্লা, বাজারে প্রচার করার নির্দেশ দেওয়া হবে। পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নচিত্র নিয়ে নির্মাণ করা ভিডিওচিত্র ও প্রকাশনা প্রচারের জন্যে দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সংগঠনের কোথায় কী সমস্যা, তা ভালো করেই জানা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সেগুলো নতুন করে শোনার সম্ভাবনা কম। তবে প্রধানমন্ত্রী একটি গাইড লাইন দেবেন, সেখানে দলের ব্যাপারে আাগামী নির্বাচনের ব্যাপারে করণীয় কী, কে কিভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, তার একটি ম্যাসেজ দেবেন দলীয় সভাপতি।’ তিনি বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। ফলে বর্ধিত সভা আমাদের জন্যে বেশি গুরুত্বের। এর ফলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হবেন।’
জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা সাংগঠনিকভাবে অনেক গুরুত্বের। এই সভায় শেখ হাসিনা দিক-নির্দেশনা দেবেন দলের নেতাদের উদ্দেশে।’
এদিকে শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে এক আলোচনা সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগামী নির্বাচনরে প্রস্তুতির জন্য আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভার আয়োজন করেছে শনিবার। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। এর মাধ্যমে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতির অগ্রযাত্রা শুরু করব আমরা।’
দলটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জেলা থেকে আসা নেতাদের দলের গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্রসহ সরকারের উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকাশনাপত্র দেওয়া হবে। এর বাইরে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালা-পোড়াও প্রকাশনা ও ভিডিওচিত্রও দেওয়া হবে। এসব চিত্র ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে পাড়া-মহল্লা ও বাজারে সম্প্রচার করার নির্দেশনা দেওয়া হবে।’