অনলাইন ডেস্ক : হেফাজত নেতা মামুনুল হক বলেছেন, ‘স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে, স্ত্রীকে খুশি করতে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে কোনো সত্যকে গোপন করারও অবকাশ রয়েছে।’
আজ বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে এসে মামুনুল হক এ কথা বলেন।
ব্যক্তিগত ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। তিনি বলেন, আমি সবার কাছে দোয়া চাই। আমার ব্যক্তিগত অসাবধানতার কারণে যে ক্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণে যে ক্ষতির সম্মুখীন ব্যক্তিগতভাবে হয়েছি; সেজন্য নিজেই মর্মাহত। আমার কারণে আজকে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের কাছে আমি হাত জোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
লাইভে মামুনুল বলেন, আমি পুলিশকে তথ্য দিয়েছি। দুই স্ত্রীর নাম আলাদা করে বলেছি। আমার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ আমেনা তৈয়বার নামটি সামনে এনেছেন। জান্নাত আরা ঝর্ণার কাছ থেকে আমার অনুমতি ছাড়া তার স্টেটমেন্ট ও মন্তব্য ধারণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নারী সদ্যস্যরা। তারা কার অনুমতি নিয়ে জনসম্মুখে এসব প্রচার করেছে? আমার পর্দানশীন স্ত্রীর পর্দা তারা লঙ্ঘন করেছে। দেশ ও জাতির সামনে তার পর্দার বিধান লঙ্ঘন করে যে অধিকার তারা ক্ষুণ্ণ করেছে সেটার জন্য জনতার আদালতে বিচার দায়ের করলাম।
ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে মামুনুল হক বলেন, বিশ্বের মুসলমান ভাইদেরও তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। একের পর এক মামলা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে অনেক মানুষকে হয়রানি করা হবে। অথচ প্রকৃত যারা দোষী, যারা গিয়ে হামলা করলো- সেই সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে রাষ্ট্র নীরব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ তাদের নাম পরিচয় দিবালোকের মতো পরিষ্কার। ইনশাআল্লাহ, ইতোমধ্যে তাদের ব্যাপারে আমি এজাহার দায়ের করেছি। আরও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
তিনি আরো বলেন, যেভাবে একেরপর এক মানুষের ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁস করা হচ্ছে, এটি দেশের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। মাওলানা রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে তার নামেও অপবাদ দেওয়া হয়েছে। এই যে এতোগুলো ফোনালাপ ফাঁস করা হলো, তাতে কী প্রমাণ মিলেছে- সে আমার বিবাহিতা স্ত্রী নয়? অথচ শুধু শুধু আমার একান্ত ব্যক্তিগত কথাগুলো কোন উদ্দেশ্যে ফাঁস করা হলো?
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমি সেদিন নারায়ণগঞ্জের রয়াল রিসোর্টে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে যে, আমি কেন এই পরিস্থিতিতে রিসোর্টে গেলাম। হ্যা, আমি স্বীকার করছি, এমন অসাবধানতাবশতঃ সেখানে আমার যাওয়া সমীচীন হয়নি। তবে, আমি জানতাম না যে দেশের মানুষের ব্যক্তিগত নিরপাত্তা চরমভাবে ভেঙ্গে পড়েছে।
এর আগে গত শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্ট নামে একটি আবাসিক অবকাশ যাপন কেন্দ্রে জান্নাত আরা ঝর্ণা নামে এক নারীকে নিয়ে সময় কাটাতে যান হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাদের অবরুদ্ধ করে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
মামুনুল ওই নারীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে দাবি করলেও সাংবাদিকদের প্রশ্ন ও পরে পুলিশের জেরায় তিনি যেসব তথ্য দেন, তাতে অনেক গরমিল পাওয়া যায়। রিসোর্টের সঙ্গীর নাম, তার বাবার নাম ও বাড়ির ঠিকানা নিয়ে দুই ধরনের তথ্যের পর বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ফেসবুকে ফাঁস হওয়া বেশ কিছু ফোনালাপ হেফাজত নেতার বিয়ের দাবির সত্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়।
ফোনালাপের একটিতে বোঝা যায়, ঘটনার পরপরই মামুনুল তার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে তিনি বলেন, সেই নারী (ঝর্ণা) তার পরিচিত শহীদুল ইসলামের স্ত্রী। ঘটনার কারণে চাপে পড়ে ওই নারীকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে তিনি বাধ্য হয়েছেন। এ নিয়ে যেন তার স্ত্রী ভুল না বোঝেন। পরে বাসায় এসে বুঝিয়ে বলবেন।
পরে আরেকটি কথোপকথন ফাঁস হয়, যা মামুনুলের সঙ্গে তার রিসোর্টের সঙ্গীনির মধ্যকার বলে প্রতীয়মান হয়। সেখানে ওই নারী জানান, তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার মায়ের একটি বন্ধ মোবাইল নম্বর দিয়েছেন। আর অন্য একজন যখন তাকে কোথায় বিয়ে হয়েছে জিজ্ঞেস করেছেন, তখন তিনি বলেছেন, এটা জানেন না। মামুনুলের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।
আরও একটি কথোপকথনে বোঝা যায়, মামুনুলের বোন কথা বলেছেন হেফাজত নেতার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর সঙ্গে। তিনি তাকে বুঝিয়েছেন, কেউ যদি তাকে ফোন করে, তাহলে তিনি যেন বলেন, তিনি এই দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন এবং তার শাশুড়ি এই বিয়ের আয়োজন করেছেন। এরই মধ্যে মামুনুলের রিসোর্টের সঙ্গীনির বড় ছেলে ফেসবুক লাইভে এসে মামুনুলের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তিনি তার মায়ের সঙ্গে বাবার সংসার ভাঙার জন্য মামুনুলকে দায়ী করেন।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন মামুনুল হক। তিনি শিক্ষকতা করেন মোহাম্মদপুরের জামিয়া রহমানিয়া মাদ্রাসায়। বুধবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে ওই মাদ্রাসায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরীর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন মামুনুল হক।
রিসোর্ট-কাণ্ডের পর ৬ এপ্রিল রাতে পুলিশের কাজে বাধা, হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক ইয়াউর রহমান বাদী হয়ে মামুনুল হককে প্রধান আসামি করে ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। সন্ত্রাস বিরোধী আইনে আরিফ হাওলাদার বাদী হয়ে ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে অপর মামলাটি করেন।
দেশব্যাপী তাণ্ডবের পর হেফাজতে ইসলাম কঠোর হাতে দমনে হুশিয়ারি দিয়েছেন সরকারের মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।