অনলাইন ডেস্ক : করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে সরকার কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে। ফলে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর এতেই মানুষের ঢল নেমেছে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার। ট্রাক, মিনিট্রাক ও গণপরিবহণসহ বিভিন্ন যানবহনে চড়ে কর্মমুখী মানুষ ঢাকা ছাড়ছে।
ঢাকা ছেড়ে যাওয়া এসব মানুষের অধিকাংশই শ্রমজীবী। তাঁরা বলছেন, সরকার লকডাউন ঘোষণা করেছে। করোনা পরিস্থিতি দিনদিন খারাপ দিকে যাচ্ছে। ফলে লকডাউনের সময় বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনও হতে পারে, ঈদের আগে আর লকডাউন উঠে যাচ্ছে না। পরিস্থিতি যদি এমন হয়, সেক্ষেত্রে পেটে-ভাতে যারা শ্রম দেন; তাঁদের অবস্থা হবে শোচনীয়। এভাবে লকডাউনের মধ্যে ঢাকায় থেকে রোজা রাখাও মুশকিল বলে তাঁদের অভিমত।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা। রাজধানীর কারওয়ান বাজার বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায়, গ্রামমুখী শত শত মানুষ। শুধু বাসস্ট্যান্ডে নয়, পুরো কারওয়ান বাজার এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষকে দেখা গেছে। যারা তল্পিতল্পা গুছিয়ে বের হয়েছেন। এদের অধিকাংশ রিকশাচালক ও ভ্যানচালক। উদ্দেশ্য, যাঁর যাঁর গ্রামে ফেরা।
কায়সার মিয়া (৫৪) একজন রিকশাচালক। তিনি ৩২ বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালান। সোমবার রাতে তাঁকে কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার চত্বরে বসে থাকতে দেখা যায়। ওই স্থানে কায়সারের সঙ্গে আরও ৪০ জন বসেছিলেন। সবাই রিকশাচালক। কায়সার যাবেন কুড়িগ্রামে।
কথা প্রসঙ্গে কায়সার এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, ‘বাস কাউন্টারে গেলাম, বাস ছাড়বে না। তয়, কাউন্টারের একজন লোক কইল, দেড় হাজার টাকা দিলি পরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবানি। এত টাকা কই পামু আমি? ওখান থেকে সন্ধ্যার দিকে কারওয়ান বাজার চলি এলাম। এখন রাত ১২টার বেশি বাজে, কখন যেতে পারব জানি না। কারওয়ান বাজারে ট্রাক ড্রাইভারের কাছে লোক পাঠাইছি। শুনেছি এক হাজার করি নিবে। তাও তো যাওয়া যাচ্ছে না।’
গ্রামে ফিরছেন কেন- এমন প্রশ্নে কায়সার মিয়া আরও বললেন, ‘আগে রিকশা চালিয়ে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত ইনকাম করছি। লকডাউন দেওয়ার পর থেকে ৫০০ টাকার বেশি করতে পারি না। সামনের লকডাউনে শুনলাম ঘর থেকে বের হতে দেবে না। তাহলে রিকশা চালাতে পারব না। ঢাকায় থেকে কী করব? রোজা রাখতেও সমস্যা হবে। তাই কুড়িগ্রাম যাচ্ছি। লকডাউন উঠে গেলে আবার চলে আসব।’
রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের বিপরীত পাশে দেখা যায় শত শত মানুষ। কারওয়ান বাজার থেকে পণ্যবাহী ফিরতি ট্রাক সেখানে গিয়ে পৌঁছালে মানুষ হুমড়ি খেয়ে উঠার চেষ্টা করে তাতে। রাত ১২টার দিকে একটি ট্রাক গিয়ে দাঁড়ায় সেখানে। সঙ্গে সঙ্গে অন্তত ৩০ জন উঠে পড়ে তাতে। ট্রাকটি পরে নাটোরের বনগ্রামের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করে।
ট্রাকে উঠে সাইফুর নামের এক ভ্যানচালক বলেন, ‘সেই বিকেল থেকে এখানে অপেক্ষা করছি। এখন ট্রাকে উঠেছি। এক হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। খাব কী এখানে থেকে? ওর চেয়ে বাড়িতে গিয়ে রোজা-কালাম করি।’
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিভিন্ন সড়কে যানজট দেখা গেছে। দেখা গেছে, ঘরমুখী মানুষের ঢল। দূরপাল্লার বাস না চললেও মানুষ নানা উপায়ে ঢাকা ছাড়ছে। রাজধানীর গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা গেছে গ্রামমুখী মানুষ। তাঁরা তল্পিতল্পাসহ কেউ হেঁটে যাচ্ছে, কেউ-বা আবার ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারে ঢাকা ছাড়ছেন।
গাবতলী থেকে একটু দূরে, অর্থাৎ আমিনবাজার ব্রিজের গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন দৃশ্য। সেখানে কয়েকটি বাসে যাত্রী পরিবহণ করতে দেখা গেছে। পিকআপে ও ট্রাকে মানুষকে ঢাকা ছাড়াতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়েও ঢাকা ছাড়ছে। এসব মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কয়েকগুন বেশি ভাড়া দিয়ে তাঁরা গ্রামের উদ্দেশ্য ঢাকা ছাড়ছেন।
এ ছাড়া ঘরমুখী মানুষের ভিড়ের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তীব্র যানজট দেখা গেছে। আজ সকাল থেকেই শনিরআখড়া থেকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ভয়াবহ যানজট শুরু হয়। শুধু সড়ক-মহাসড়কে নয়, এই চাপ পড়েছে মাওয়া ঘাটেও। বেলা ১১টার দিকে মাওয়ার শিমুলিয়া ঘাটে দেখা যায়, সেখানে অনেক স্পিডবোট রয়েছে। এতে করে মানুষ পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন। ফেরিতে যানবহনের পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে পার হচ্ছেন।