দেশের খবর : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ‘ইয়াস’ শক্তি বাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের দিকে ধেয়ে আসছে। ঘুর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে পারে ভারতের আরেকটি সমুদ্র উপকূলবর্তী রাজ্য উড়িষ্যাতেও। বাংলাদেশেও আঘাত হানতে পারে ইয়াস। আজ রোববার কলকাতার আলীপুর আবহাওয়া দফতর ইয়াসের সর্বশেষ অবস্থান জানিয়ে সেই ইঙ্গিতই দিয়েছে।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী বুধবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ ও উড়িষ্যার পারাদ্বীপের মাঝামাঝি আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। রোববার দুপুরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই নিম্নচাপটির অবস্থান ছিল পশ্চিমবঙ্গের দিঘা সৈকত থেকে ৬৭০ কিলোমিটার দূরে।
গত বছর ঘূর্ণিঝড় আমফান কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলাগুলোকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল। সেই ক্ষয়ক্ষতি এখনো পুরোট কাটিয়ে উঠেনি মানুষজন। তাই এবার উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ ও সম্পত্তি রক্ষা করতে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বাংলাদেশেও প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
ভারতের জাতীয় আবহাওয়া দফতরের (আইএমডি) প্রধান মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র বলেছেন, ‘আমফান’ এর চেয়েও শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ বুধবার পারাদ্বীপ ও সাগরদ্বীপে আঘাত হানবে। তখন এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ থাকবে ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার। এতে বিপুলি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
রোববার দুপুরে আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানায়, এই মুহূর্তে আন্দামানের পোর্ট প্লেয়ার থেকে ৫৬০ কিলোমিটার উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম, উড়িষ্যার বালেশ্বর থেকে ৬৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এবং পশ্চিমবঙ্গের দিঘা থেকে ৬৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে ইয়াস।
রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আলিপুর আবহাওয়া দফতর সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আগামীকাল সোমবার সকালে এই নিম্নচাপটি আরও শক্তি সঞ্চয় করে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। আর মঙ্গলবারের মধ্যে তা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, আগামী বুধবার সকালে পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যার স্থলভাগে পৌঁছানোর পর ওইদিন সন্ধ্যায় ‘ইয়াস’ পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করবে। এর ফলে প্রচুর বৃষ্টি হবে কলকাতা, দুই চব্বিশ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি ও বর্ধমান জেলায়। একই সঙ্গে চলবে ঝড়ের তাণ্ডব।
ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতোমধ্যে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সতর্কতা জারি করেছে রাজ্যের গোটা সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে। গতকাল শনিবার বিকেল থেকেই পশ্চিমবঙ্গের দিঘা, মন্দারমণি, বকখালি, তাজপুর এলাকায় মাইকে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
সমুদ্রতীরবর্তী বাসিন্দাদের বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষকে ইতোমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ইয়াস আঘাত হানার আগেই তারা যেন নিরাপদ স্থান অথবা সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নেয়। এছাড়া রাজ্য সরকার ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য মজুত রেখেছে।
দিঘা, শঙ্করপুর, মন্দারমণিতে মোতায়েন হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী বা এনডিআরএফ। দিঘাতে জলোচ্ছাস হওয়ার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার থেকে এসব এলাকায় রেড এলার্ট জারি করা হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সতর্কতা জারি হবে অন্যান্য উপকূলীয় এলাকায়।
আম্পানের চেয়ে ইয়াস ভয়াবহ রূপ নিতে পারে, এমন শঙ্কা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা আগেভাগে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় পর্যবেক্ষণ ও নানা প্রস্তুতি সরেজমিনে দেখতে তিনি ঘূর্ণিঝড়ের আগেই সারা রাত রাজ্য সচিবালয় নবান্নে অবস্থান করবেন।