নিজস্ব প্রতিনিধি :
নির্মানের মাত্র ২ মাসের মধ্যেই ঘরের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে, খসে পড়ছে পলেস্তারা, বসে যাচ্ছে ঘরের মেঝে। সাতক্ষীরা সদরের ভোমরা ইউনিয়নের হাড়দ্দহা এলাকার একটি সরকারি খালের দুই পাশে দুই সারিতে ৯৪ শতক জমির উপর মোট ৪৭টি ঘরের অধিকাংই একই অবস্থা।
খালের ধারে তোলা মাটির উপর তড়িঘড়ি করে এসব ঘর নির্মাণ করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে হাড়দ্দহ রাধানগর খাল সংলগ্ন আশ্রয়ন প্রকল্পে গেলে কয়েকটি নব নির্মিত কয়েকটি বাড়ির দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়া, মেঝে বসে যেয়ে প্লাস্তার ভেঙে যাওয়ায় সম্প্রতি পুটিং করে দেওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে।
যদিও প্রধানমন্ত্রী ঘরের বিষয়ে তদন্তের টিম পাঠানোর খবর পেয়ে ইতোমধ্যে ঠিকাদার মিস্ত্রি পাঠিয়ে মেরামতের কাজ শুরু করেছেন।
প্রকল্পের পরিপত্র অনুযায়ী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি), প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিলে ঘর বরাদ্দের তালিকা প্রস্তুত করবেন। প্রাক্কলন অনুযায়ী, ১৯ ফুট ৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও ২২ ফুট ৬ ইঞ্চি প্রস্থের ঘরের ভেতরে দুটি কক্ষ, রান্নাঘর ও শৌচাগার থাকবে। নকশা অনুযায়ী ঘর নির্মাণে ৬ হাজার ইট, ৫০ বস্তা সিমেন্ট, ২০০ ঘনফুট বালু এবং ভিটা নির্মাণে ৫০ ফুট বালু ব্যবহার করার কথা।
হাড়দ্দহে রাধানগর খালের দু’ পাশে প্রায় দু’ একর জমির মধ্যে ৯৪ শতক সরকারি খাস জমিতে ৪৭টি ভূমিহীন পরিবারের বসতি নির্মাণ করা হয়েছে। জমিসহ একটি ঘরের খরচ ধরা হয় এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। ফেব্র“য়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাণের কাজ শুরু হয়। মে মাসের দিকে নির্মান কাজ শেষ হয়। তবে তিনটি ঘরের কাজ জুলাই এর প্রথম সপ্তাহে শেষ হয়েছে। ৪৭টি ঘরের মধ্যে ৩০টির দলিল রেজিষ্ট্রি হয়েছে। বাকী ১৭টা খুব শ্রীঘ্রই রেজিষ্ট্রি হবে।
উপকারভোগী ৫ নং ঘরের মালিক বৃদ্ধা রহিমা খাতুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘর পেয়ে উপকৃত হয়েছি। কিন্তু ঘরে উঠার পরে দেখছি পূর্বে পাশের দেওয়াল, বারান্দায় ফাটল দেখা দিয়েছে। গত রাববার মিস্ত্রি এসে পুটিং করে দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসী জানান, তৎকালিন ইউএনও তড়িঘড়ি করে খালের পাশে মাটি ভরাট করে ঘরগুলো নির্মাণ করেছেন। এছাড়া বরাদ্ধের পুরো টাকা ঘরের পিছনে খরচ করা হয়নি। ফলে মাত্র দু মাসের মধ্যে ঘরগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে। দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় এসব ঘর বেশিদিন টিকবে না।
উপকারভোগী মালিক মিন্টু মোল্লা বলেন, ঘরে ওঠার মাত্র কয়েকদিন পরে ঘরের পলেস্তারা খসে পড়তে শুরু করেছে। ঘরের বিভিন্ন স্থানে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। সাংবাদিকরা আসার খবরে মিস্ত্রি এসে পুটিং দিয়ে মেরামত করে দিছে।
আম্বিয়া খাতুন জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৌলতে হাড়দ্দহ আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর পেয়ে দু’ সপ্তাহ সেখানে অবস্থান করছেন। কিন্তু ঘরে ওঠার পরদিন থেকে দেয়ালের ও ঘরের মেঝের কয়েকটি জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়তে দেখেন। কয়েকদিন আগে সাংবাদিকরা আসে। এ খবর পেয়েই গত রোববার তড়িঘড়ি করে সরকারিভাবে নতুন করে দেয়ালে ও মেঝেতে পুটিং করে দেওয়া হয়েছে।
একই কথা জানান মারুফা খাতুনও। তার ঘরের পলেস্তারা খসে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে এমন খবর পাওয়ায় তড়ি ঘড়ি করে পুটিং করা হয়েছে তার ঘর। ৪৭টি বাড়ির প্রত্যেকটিতে একই অবস্থা। নিম্ন মানের বালি, ইট ও সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে অভিযোগ করে মারুফা বলেন, ঘরের মেঝের তলায় একটির বেশি দু’টি ইট নেই। ফলে একটু ঝড় হলেই এ ঘরের টিন উড়ে যেয়ে ও দেয়াল চাপা পড়ে মরতে সময় লাগবে না।
ঠিকাদার শহীদুল ইসলামের পুত্র সুজন জানিয়েছেন ঘর প্রতি ইট লেগেছে ৭ হাজার ৩০০, সিমেন্ট ৫৫ বস্তা, বালি ৩৫০ ফুট। এখানে কাজ কয়েকটি ভাগে ভাগ করে দিয়েছিলেন ডিসি সাহেব। সে অনুযায়ী আমরা শুধুমাত্র মিস্ত্রির জন্য ঠিকাদারী নিয়েছিলাম ঘর প্রতি ৩৫ হাজার টাকায়। আর কাঠের পাটকেলঘাটার আলমগীর, ইট রেজাউল ইসলাম, টিন খুলনার মুশফিকুর রহমান এবং রড সিমেন্টের ঠিকাদারী পেয়েছিলেন শহরের নারকেতলা মোড়স্থ এস এম ট্রেডার্স।
তবে মিস্ত্রি গাজী রহমান বলেন আমরা ঘরপ্রতি ২৫ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। এছাড়া ঠিকাদারের জামাতা ইমরান সাহেব একজন মিস্ত্রি দিয়ে কাজ না করিয়ে একাধিক মিস্ত্রি দিয়ে করিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ভোমরা ইউপি চেয়ারম্যান গাজী ইসরাইল বলেন, ওই স্থানটি খাল ছিল তোলা মাটির উপর ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাকে খুব বেশি জানানো হয়নি। সবই করেছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা এবং ঠিকাদাররা। ঘর ফাটার বিষয়টি তাকে কেউ জানায়নি।
সাতক্ষীরা সদরের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইয়ারুল ইসলাম কিছু কিছু বাড়ির দেয়াল ও মেঝের প্লাস্তার খসে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর তা আবার সংস্কার করা হয়েছে। তবে তোলা মাটির উপর ঘর নির্মাণের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ঘরের পাশে ছোট একটি নালা রয়েছে। ওটাকে খাল বলা যাবে না। শুধু পানি নিস্কাশনের জন্য ওটা আমরাই কেটেছিলাম।