বিদেশের খবর : ইউক্রেনকে এড়িয়ে সরাসরি জার্মানিতে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে প্রায় প্রস্তুত এক পাইপলাইন ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ নামের এই ‘বিতর্কিত’ প্রকল্প নিয়ে মতবিরোধ কাটাতে স্থানীয় সময় বুধবার একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র। বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী, ৫০ মিলিয়ন (পাঁচ কোটি) মার্কিন ডলারের পাশাপাশি ‘ট্রানজিট ফি’ না পাওয়ায় ইউক্রেন যে ক্ষতির সম্মুখীন হবে, সে অর্থ তাদের দেওয়ার গ্যারান্টিও চুক্তিতে থাকছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমল থেকেই দল-মত নির্বিশেষে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকেরা ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ প্রকল্প বর্জন করার জন্য জার্মানির ওপর চাপ দিয়ে আসছিলেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জার্মানি এমনকি দেশটির খোদ চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের দলের মধ্যেও এই প্রকল্পবিরোধীর সংখ্যা কম নয়৷ মেরকেল নিজে এই প্রকল্পকে বাণিজ্যিক হিসেবে গণ্য করে প্রকল্পের কাজ শেষ করার ওপর জোর দিয়ে আসছেন৷ এবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি হওয়ায় বাল্টিক সাগরের নিচ দিয়ে গ্যাস পাইপলাইনের চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ শেষ হবে৷ প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি ডলার মূল্যের এক হাজার ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইনের প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে৷
জার্মান চ্যান্সেলর হিসেবে সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র সফরে অ্যাঙ্গেলা মেরকেল বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বিতর্কিত ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ প্রকল্প নিয়ে সমঝোতায় আসার চেষ্টা শুরু করেছিলেন৷ এবার সেই চুক্তি হয়ে গেল।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে—যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির মধ্যে চুক্তি হওয়ায় রাশিয়া যদি ইউক্রেন বা পূর্ব ইউরোপের কোনো দেশের ক্ষতি করার চেষ্টা করে, সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি মস্কোর বিরুদ্ধে যৌথ পদক্ষেপ নিতে পারবে৷ বাইডেন প্রশাসন প্রয়োজনে সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা চাপানোর অধিকারও ছাড়বে না৷ দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় এই বোঝাপড়া চূড়ান্ত রূপ পেল৷ সেইসঙ্গে জার্মানি ১০০ কোটি ডলার অঙ্কের নতুন এক তহবিলে অর্থ দিয়ে ইউক্রেনকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির পথে অগ্রসর হতে সাহায্য করবে৷
এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ওয়াশিংটন ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ পাইপলাইন প্রকল্পকে জার্মানি ও ইউরোপের জন্য খারাপ চুক্তি হিসেবে বিবেচনা করছে৷ তবে, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে প্রকল্পটি বন্ধ করার সম্ভাবনা কম বলেও জানান তিনি৷ এর চেয়ে হাতিয়ার হিসেবে রাশিয়ার জ্বালানি প্রয়োগের বিষয়টি বন্ধ করার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন৷ তারই রেশ ধরে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করল যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি।