ন্যাশনাল ডেস্ক : পদমর্যাদা নির্ণয় না করেই দায়িত্ব-কর্তব্য নির্ধারণ করা হলো জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের। শপথ নেওয়ার ৫ মাসের মাথায় বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যদের দায়িত্ব ও কার্যাবলি নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেক স্বাক্ষরিত ‘জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যগণের দায়িত্ব ও কার্যাবলি বিধিমালা-২০১৭’-এ পরিষদের চেয়ারম্যানের ৭টি কাজ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বিধিমালায় পরিষদের সদস্যদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আইনের অধীনে গঠিত বিভিন্ন কমিটি ও স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের। তবে, কোনও জেলা পরিষদে স্থায়ী কমিটি গঠিত না হলে, সে ক্ষেত্রে সদস্যদের ১৫টি কাজ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সদস্যদের কর্তব্যের বেশিরভাগই সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণমূলক। পরিষদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যদেরও সামাজিক সচেতনতামূলক ৫টি কাজ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর দেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে ১১ জানুয়ারি পরিষদের চেয়ারম্যান ও ১৮ জানুয়ারি পরিষদের সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যরা শপথ নেন। আইন অনুযায়ী একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও ৫ জন সংরক্ষিত আসনের নারী নিয়ে জেলা পরিষদ গঠিত হয়।
বিধিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন শুক্রবার বলেন, ‘আইনের আলোকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও অন্য সদস্যদের দায়িত্ব-কার্যাবলি ঠিক করে বিধিমালা জারি করেছে মন্ত্রণালয়। এখন থেকে এই বিধিমালার আলোকে পরিষদের সবাই স্ব-স্ব অধিক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করবেন।’ পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মর্যাদা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাদের মর্যাদা এখনও ঠিক করা হয়নি। যখন হবে, তখন জানতে পারবেন।’
অবশ্যই সম্প্রতি স্থানীয় সরকার সচিব আবদুল মালেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের মর্যাদা প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘সংসদ সদস্যরা জেলা পরিষদের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের মর্যাদা ঠিক করা হবে। তবে, এটুকু বলতে পারি যে, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের মর্যাদা ডিসিদের নিচে হবে না।’
বিধিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ কামরুজ্জামান টুকু বলেন, ‘এতদিন আমরা আইনের আলোকে দায়িত্ব পালন করছি। শুনেছি বিধিমালা হয়েছে। কিন্তু এখনও হাতে পাইনি। আশা করছি, এতে অনেক বিষয় স্পষ্ট করা হবে।’
পদমর্যাদার বিষয়ে কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ টুকু বলেন, ‘বিধিমালার থেকে আগে দরকার ছিল আমাদের পদমর্যাদা। পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আমরা দায়িত্ব পালন করছি ঠিকই, কিন্তু আমাদের অবস্থান কোথায় সেটা জানি না।’
পদমর্যাদার কারণে অনেক সময় রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে বিব্রত হতে হয় মন্তব্য করে শেখ টুকু বলেন, ‘মর্যাদা পাব কি পাব না, এসব চিন্তা করে অনেক সময় জেলার সরকারি অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।’
প্রসঙ্গত, জেলা পরিষদ আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০১৬)এর কয়েকটি ধারায় জেলা পরিষদের কার্যক্রমের কথা বলা হয়েছে। পরিষদের বাধত্যমূলক ও ঐচ্ছিক এই দুই ধরনের কাজ রয়েছে। বাধ্যতামূলক কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে (১) জেলার সব উন্নয়ন কার্যক্রম পর্যালোচনা, (২) উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা, (৩) সাধারণ পাঠাগারের ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণ, (৪) উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা বা সরকারের সংরক্ষিত নয়, এমন জনপথ, কালভার্ট ও ব্রিজ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন, (৫) রাস্তার পাশে ও জনসাধারণের ব্যবহার্য স্থানে বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণ, (৬) জনসাধারণের ব্যবহারার্থে উদ্যান, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থানের ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণ, (৭) সরকারি, উপজেলা পরিষদ বা পৌরসভার রক্ষণাবেক্ষণে নয় এমন খেয়াঘাটের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ, (৮) সরাইখানা, ডাকবাংলা, বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণ, (৯) জেলা পরিষদের অনুরূপ কার্যাবলি সম্পানরত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা, (১০) উপজেলা ও পৌরসভাকে সহায়তা-উৎসাহ দেওয়া, (১১) জেলা পরিষদের ওপর সরকারের অর্পিত উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও (১২) সরকারের আরোপিত অন্যান্য কাজ।
আর ঐচ্ছিক কাজের মধ্যে রয়েছে, শিক্ষা, সাংস্কৃতি, সমাজকল্যাণ, অর্থনৈতিক কল্যাণ, জনস্বাস্থ্য, গণপূর্ত ইত্যাদি। এছাড়া কয়েকটি ক্ষেত্রে টোল আদায়ের কাজও পরিষদের রয়েছে।