বিশেষ ডেস্ক : কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে ২০০১ সালে দৈনিক ১৩০ টাকা বেতনে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি নেন নুরুল ইসলাম (৪১)। ওই চুক্তিভিত্তিক চাকরি থেকে সময়ের পরিক্রমায় হয়ে গেছেন কোটিপতি। বর্তমানে তিনি ৪৬০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। সম্প্রতি তিনি সাভারে একটি রিসোর্ট ও বন্দরে একটি জাহাজও কিনতে চেয়েছিলেন।
দালালিসহ অবৈধ পন্থায় অর্জিত অর্থের মাধ্যমে তিনি ঢাকায় তার ছয়টি বাড়ি ও ১৩টি প্লট মালিক হয়েছেন। এছাড়া সাভার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, ভোলাসহ বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে মোট ৩৭টি প্লট, বাগানবাড়ি ও বাড়ি রয়েছে। অবৈধভাবে অর্জিত তার এসব সম্পদের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪৬০ কোটি টাকা।
চাকরির সুবাদে বন্দরের সংশ্লিষ্ট মানুষের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে নুরুল ইসলামের। একপর্যায়ে গড়ে তোলেন সিন্ডিকেট। দালালি, পণ্য খালাস, বৈধ পণ্যের আড়ালে অবৈধ মালামাল এনে অল্প সময়েই কোটি টাকার মালিক হয়ে যান এ কম্পিউটার অপারেটর।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব জানায়, প্রতারণা করে সে ৬টি বাড়ি ও ১৩টি প্লট ক্রয় করেছে। এছাড়াও সাভার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, ভোলাসহ বিভিন্ন জায়গায় নামে/বেনামে সর্বমোট ৩৭টি জায়গা/প্লট/বাগানবাড়ি/বাড়ি রয়েছে। তার অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের আনুমানিক মূল্য ৪৬০ কোটি টাকা। তার নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ১৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, দালালির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া টেকনাফ বন্দরের সাবেক চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলামকে (৪১) রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে আটক করা হয়। এসময় তার নিকট থেকে জাল টাকা, বিদেশি মুদ্রা ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।
মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আল মঈন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একটি গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের যৌথ অভিযানে গত মধ্যরাতে ঢাকা মহানগরীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কম্পিউটার অপারেটর মো. নুরুল ইসলামকে (৪১) গ্রেফতার করা হয়। উক্ত অভিযানে উদ্ধার করা হয় জাল নোট ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা, মিয়ানমারের মুদ্রা ৩৮ লাখ কোয়াট, ইয়াবা ট্যাবলেট ৪,৪০০ পিস এবং নগদ ২ লাখ ১ হাজার ১৬০ টাকা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত নুরুল ইসলাম তার অপরাধ সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত জানায়, সে ২০০১ সালে টেকনাফ স্থলবন্দরে চুক্তিভিত্তিক দৈনিক ১৩০ টাকা হারে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি নেয়। বন্দরে কর্মরত থাকাকালীন তার অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে সে চোরাকারবারী, শুল্ক ফাঁকি, অবৈধ পণ্য খালাস, দালালি ইত্যাদির কৌশল রপ্ত করে। অতঃপর তার অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে সে বন্দরে বিভিন্ন রকম দালালির সিন্ডিকেটে যুক্ত হয়। এক পর্যায়ে একটি দালালি সিন্ডিকেট তৈরি করে। ২০০৯ সালে সে চাকরি ছেড়ে দেয়। তারই আস্থাভাজন একজনকে উক্ত কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করে। কিন্তু সে দালালি সিন্ডিকেটটির নিয়ন্ত্রণ রেখে দেয়। এভাবে সে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নুরুল টেকনাফ বন্দর কেন্দ্রিক দালালি সিন্ডিকেটের অন্যতম মূলহোতা। তার সিন্ডিকেটের ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে। যারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে দালালি কার্যক্রমগুলো করে থাকে। এই সিন্ডিকেটটি পণ্য খালাস, পরিবহন সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পথিমধ্যে অবৈধ মালামাল খালাসে সক্রিয় ছিল। সিন্ডিকেটের সহায়তায় পার্শ্ববর্তী দেশ হতে কাঠ, শুটকি মাছ, বরই আচার, মাছ ইত্যাদির আড়ালে অবৈধ পণ্য নিয়ে আসা হত। চক্রটির সদস্যরা টেকনাফ বন্দর, ট্রাক স্ট্যান্ড, বন্দর লেবার ও জাহাজের আগমন-বর্হিগমন নিয়ন্ত্রণ করত। গ্রেফতারকৃতদের সাথে চিহ্নিত মাদক কারবারীদের যোগসাজশ ছিল বলে সে জানায়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এছাড়া সে অন্যান্য অবৈধ পণ্যের কারবারের জন্য হুন্ডি সিন্ডিকেটের সাথে সমন্বয় এবং চতুরতার সাথে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েজ কারসাজি করত। অবৈধ আয়ের উৎসকে ধামাচাপা দিতে সে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে; তন্মধ্যে, এমএস আল নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ, এমএস মিফতাউল এন্টারপ্রাইজ, এমএস আলকা এন্টারপ্রাইজ, আলকা রিয়েল স্টেট লিমিটেড এবং এমএস কানিজ এন্টারপ্রাইজ অন্যতম। ইতিমধ্যে ঢাকা শহরে তার ৬টি বাড়ি ও ১৩টি প্লট ক্রয় করেছে। এছাড়াও সাভার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, ভোলাসহ বিভিন্ন জায়গায় নামে/বেনামে সর্বমোট ৩৭টি জায়গা/প্লট/বাগানবাড়ি/বাড়ি রয়েছে। তার অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের আনুমানিক মূল্য ৪৬০ কোটি টাকা। তার নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ১৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। বর্তমানে সে জাহাজ শিল্প ও ঢাকার সন্নিকটে বিনোদন পার্কে বিনিয়োগ করছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।