রাজনীতির খবর : শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের স্বাক্ষর জাল করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অভিযোগ উঠেছে। সত্যতা জানতে প্রার্থীরা সংশ্লিষ্ট ইউপির রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে হাজির হলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এমপি স্যারের সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে যে চিতলিয়া ইউনিয়নে কোনো নির্বাচন হবে না, সবাই সিলেক্টেড হবে। এই কথা এমপি মহোদয় বলেছেন।’
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিয়ে চিতলিয়া ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেনের গোপনে ধারণ করা একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ২ মিনিট ৫১ সেকেন্ডর এই ভিডিওতে রিটানিং কর্মকর্তাকে কয়েকজন প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। রিটার্নিং কর্মকর্তাকে প্রার্থীরা জিজ্ঞেস করছেন, আমরা কোন স্বাক্ষর করলাম না, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলাম না, তাহলে কীভাবে এই নয়টি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সবাই নির্বাচিত হলেন। রিটানিং কর্মকর্তা তাদের বলেন, ‘এমপি স্যারের সাথে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে চিতলিয়া ইউনিয়নে কোনো নির্বাচন হবে না সবাই সিলেক্টেড হবে, এই কথা এমপি মহোদয় বলেছেন।’ একজন প্রার্থী বলেন আমি বাংলাদেশের নাগরিক আমি নির্বাচন করতে চাই তাহলে এখন আমার কী হবে? রিটার্নিং কর্মকর্তা তার প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
জানতে চাইলে চিতলিয়া ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে কিছুর করার নেই তার। আর ভিডিওটি সম্পর্কে তিনি বলেন, একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে আমার তো এ রকম বলার কথা না। আমি এমপি সাহেবকে নিয়ে যদি বলে থাকি, তবে কোন প্রেক্ষিতে বলেছি মনে পড়ছে না।
আগামী ১১ নভেম্বর শরীয়তপুর সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ছিল চিতলিয়া ইউনিয়ন। এখানে চেয়ারম্যান পদে তিন জন, সাধারণ সদস্য পদে ৪৮ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১২ জন মনোনয়ন পত্র জমা দেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে দুই জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩৯ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে নয় জনের মনোনয়ন প্রত্যাহার হয়েছে। এই ইউনিয়নে প্রতিটি পদেও বিপরীতে মাত্র এক জন করে প্রার্থী থাকায় তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।
সদস্য প্রার্থীরা অভিযোগ করে বলেছেন, তারা কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। তাদের স্বাক্ষর জাল করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা বলছেন, ‘আপনারাই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। আমার কাছে তার প্রমাণ আছে। আপনারা চাইলে আদালতে যেতে পারেন। সেখানে প্রমাণ হবে আপনাদের স্বাক্ষর জাল নাকি আসল।’
চিতলিয়া ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হারুন অর রশিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন। তিনি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি ওই ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের সদস্য ও তিনটি সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে পছন্দের লোকদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন করতে স্বাক্ষর জাল করেছেন বলে অন্য প্রার্থীরা অভিযোগ তুলেছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে হারুন অর রশিদ বলেন, ‘সদস্য পদে মনোনয়নপত্র কারা প্রত্যাহার করেছেন, কেন করেছেন, জানি না। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে কাউকে কোনো চাপ দেওয়া হয়নি। প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এক সদস্য প্রার্থী বলেন, আমাদের স্বাক্ষর জাল করে কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ছুটে এসেছি। কিন্তু তিনি কোনো সহযোগিতা না করে এমপি স্যারের এমন সিদ্ধান্ত ছিল, তা জানিয়ে দিয়েছেন। আবার যিনি চেয়ারম্যান হয়েছেন, হারুন অর রশিদ, তিনি মোবাইল ফোনে বাড়াবাড়ি না করার জন্য শাসাচ্ছেন।
চিতলিয়ার ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আয়ুব আলী খান ও সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন সদস্য পদে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। গতকাল সকালে প্রতীক নিতে এসে জানতে পারেন, তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ওই দুই নেতা জানান, তাদের স্বাক্ষর জাল করে কেউ এমন কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগ দেশ চালায়, আর এমন সময় তাদের সঙ্গে এ আচরণ কীভাবে করা হলো! তাঁরা অভিযোগ করেন, ওই ওয়ার্ডে বিএনপি-সমর্থিত এক ব্যক্তিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করা হয়েছে।
চিতলিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য পদপ্রার্থী শফিক পেদা জানান, আমি মঙ্গলবার রাতে জানতে পারি চিতলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে। আমি বুধবার সকালে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে গিয়ে বলি, আমি প্রতীক নিতে এসেছি। আমি মনোনয়ন প্রত্যাহার করিনি। তাহলে আমার ওয়ার্ডে কীভাবে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদস্য নির্বাচিত হলো। তিনি আমাকে বলেন, আপনি নিজে স্বাক্ষর করে আপনার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। আমি তাকে বলি আচ্ছা তাহলে আপনি আমাকে আমার স্বাক্ষর দেখান, আমি কোথায় স্বাক্ষর করেছি? তিনি আমার স্বাক্ষর দেখাতে পারেননি। যদি নির্বাচন না হয় আমি আইনের আশ্রয় নেবো।
সংরক্ষিত নারী আসনের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী নিলুফার ইয়াসিন বলেন, আমি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করিনি। বুঝতে পারছি না বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কীভাবে সবাই নির্বাচিত হলো। আমি আমার স্বাক্ষর দেখতে চাইলে রিটানিং কর্মকর্তা দেখাতে পারেননি। তিনি পরে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেছেন। আমরা নির্বাচন চাই। হার-জিত যা হবে নির্বাচন করে হবে।
এই বিষয়ে শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু সাংবাদিকদের বলেন, আমি এই ধরনের কথা কাউকে কখনো বলিনি। আর আমি একজন সংসদ সদস্য হিসেবে বলার অধিকার রাখি না। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।
এমপি বলেন, আমি যতটুকু জানি, ওখানে দুই পক্ষ মিলেই এটা করেছে। সালাম হাওলাদার ও হারুন হাওলাদার মিলে এটা করেছেন।