বিশেষ ডেস্ক: বরিশালে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষায় পঞ্চম হয়েও চাকরি পাচ্ছেন না আসপিয়া ইসলাম কাজল (১৯)। লিখিত, স্বাস্থ্য ও মৌখিক সব ধাপে উত্তীর্ণ হলেও স্থায়ী ঠিকানা বরিশালে না হওয়ায় অযোগ্য বিবেচিত হন তিনি।
বিষয়টি জানার পর আসপিয়া ইসলাম কাজল ও তার পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসপিয়া ইসলাম কাজলের দাদার বাড়ি ভোলার চরফ্যাশনে। তার বাবা শফিকুল ইসলাম প্রায় তিন দশক আগে কাজের সন্ধানে বরিশালের হিজলায় আসেন। সেখানে এসে ঠিকাদারি কাজ করতেন। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে বরিশালের হিজলায় একটি বাসাভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। সেখানেই জন্ম হয় আসপিয়া ইসলাম কাজলসহ তিন মেয়ে এবং এক ছেলের। বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় হলেও জীবিকার তাগিদে শফিকুল ইসলাম তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে হিজলা উপজেলায় বসবাস করছিলেন। ২০১৯ সালে শফিকুল ইসলামের মৃত্যু হয়। বর্তমানে তারা হিজলা উপজেলার খুন্না-গোবিন্দপুর এলাকার মেজবাহ উদ্দিন অপু চৌধুরীর বাড়িতে ভাড়া থাকছেন।
স্থানীয়রা জানান, শফিকুল ইসলামের তিন মেয়ে ও এক ছেলের হিজলায়ই জন্ম হয়। চার সন্তানের মধ্যে ছেলে বড়। তিনি ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। আসপিয়াসহ তার দুই মেয়ে কলেজে পড়েন। সরকারি হিজলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করেছেন আসপিয়া। ছোট মেয়েটি স্কুলে পড়ে।
আসপিয়ার স্বজনরা জানান, শফিকুল ইসলামের ছয় সদস্যের সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সংসারে অভাব-অনটন দেখা দেয়। এর মধ্যে পুলিশে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে আবেদন করেন আসপিয়া। গত ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইন্সে শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও উত্তীর্ণ হন। এরপর ২৪ নভেম্বর একই স্থানে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন। ২৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইন্সে চিকিৎসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এতেও উত্তীর্ণ হন আসপিয়া। সবশেষ ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। সেখানেও উতরে যান আসপিয়া। স্বপ্ন নিয়ে লিখিত, স্বাস্থ্য ও মৌখিক সব ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্ত নিয়োগের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি।
নিয়োগ পেলে সংসারের অভাব-অনটন দূর হবে এমন স্বপ্ন দেখছিলেন আসপিয়া। তবে ওই সময় ঘটে বিপত্তি। চূড়ান্ত নিয়োগের আগে নিয়ম অনুযায়ী পুলিশের পক্ষ থেকে স্থায়ী ঠিকানা, নাম, পরিচয় তদন্ত করে দেখা হয়। প্রতিবেদনে আসপিয়া হিজলা উপজেলার অস্থায়ী বাসিন্দা বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর স্থায়ী ঠিকানা বরিশালে না হওয়ায় আসপিয়ার চাকরি হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। চাকরির স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। আসপিয়ার হাসিমুখ মুহূর্তের মধ্যে মলিন হয়ে যায়। এমন খবরে আসপিয়া শুধু নন, তার পরিবারের সদস্যরা ভেঙে পড়েছেন।
আসপিয়ার নাম, ঠিকানা ও পরিচয় তদন্তের কাজ করেছেন হিজলা থানার এসআই আব্বাস উদ্দিন। তিনি বলেন, চাকরির আবেদনে আসপিয়ার উল্লেখ করা খুন্না-গোবিন্দপুর এলাকার ঠিকানায় তদন্তে গিয়ে জানা যায়, ওই এলাকার মেজবাহ উদ্দিন অপু চৌধুরীর বাড়িতে আসপিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা ভাড়া থাকছেন। তারা সেখানের স্থায়ী বাসিন্দা নন। তাদের আদি বাড়ি ভোলার চরফ্যাশনে। ২০১৯ সালে তার বাবা শফিুকল ইসলামের মৃত্যু হলে তাকে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় দাদার বাড়ি নিয়ে দাফন করা হয়।
এসআই আব্বাস উদ্দিন বলেন, বিষয়টি নিশ্চিত হতে আসপিয়ার এবং তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। আসপিয়া জানান, তার জন্ম হিজলা উপজেলায়। লেখাপড়াও হিজলায়। সে কারণে তিনি ঠিকানা হিসেবে হিজলা উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে আসপিয়া ইসলাম কাজল জানান, তিনি ও তার পরিবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। কথা বলতে পারবেন না বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. ইকবাল হোছাইন জানান, চাকরি বিধিমালায় উল্লেখ আছে, যে জেলা থেকে নিয়োগ পরীক্ষা দেবেন সে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। নিয়োগপ্রত্যাশী ওই জেলার বাসিন্দা, তার স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ থাকতে হবে। তবে আসপিয়ার ক্ষেত্রে স্থায়ী ঠিকানা সঠিক পাওয়া যায়নি। তাই নিয়োগ বিধিমালায় যেভাবে উল্লেখ আছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।