খেলার খবর: প্রথম দুই সেশন নিশ্চিতভাবেই ছিল নিউজিল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণে। তৃতীয় সেশনের শুরুটাও ছিল স্বাগতিকদের দাপটে। তবে শেষ দিকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ দল। যার ফলে স্বস্তি নিয়েই প্রথম দিন শেষে মাঠ ছাড়তে পেরেছেন মুমিনুল হক, শরিফুল ইসলামরা।
দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন শেষে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ৮৭.৩ ওভারে ৫ উইকেটে ২৫৮ রান। প্রথম সেশনে ২৭ ওভারে ১ উইকেটে ৬৬, দ্বিতীয় সেশনে ২৭ ওভারে ১ উইকেটে ৮১ ও শেষ সেশনে ৩০.৩ ওভারে ৩ উইকেটে ১১১ রান যোগ করেছে কিউইরা।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে বছরের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ডেভন কনওয়ে, ফিফটির দেখা পেয়েছেন ওপেনার উইল ইয়ং। বাংলাদেশের পক্ষে জোড়া সাফল্য পেয়েছেন তরুণ বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। সবমিলিয়ে দুই দলের সাম্যাবস্থায়ই শেষ হয়েছে প্রথম দিনের খেলা।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে বাংলাদেশ সময় ভোর চারটায় শুরু হয়েছে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট। টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। সাত ব্যাটারের সঙ্গে তিন পেসার ও একমাত্র স্পিনার নিয়ে সাজানো হয়েছে সফরকারীদের একাদশ।
আগে বোলিং করতে নেমে শুরুর স্পেলে আগুন ঝরান তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম। ইনিংসের প্রথম ৮ ওভারের মধ্যে ছয়টিই ছিল মেইডেন, রান হয় মাত্র দুইটি। কিউই অধিনায়ক টম লাথামকে সাজঘরে ফেরাতে বেশি সময় নেননি শরিফুল। নিজের দ্বিতীয় ও ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই তিনি ফেরান লাথামকে।
এই উইকেটে অবশ্য বড় কৃতিত্ব ছিল উইকেটরক্ষক লিটন দাসের। শরিফুলের ফুল লেন্থের ডেলিভারি ফ্লিক করেছিলেন লাথাম। কিন্তু ব্যাটের ভেতরের কানায় লাগে বল, পরে প্যাডে লেগে চলে যায় উইকেটের পেছনে। নিজের বাম দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্ষিপ্রতায় সেটি লুফে নেন লিটন।
এরপর কনওয়ে-ইয়ংকেও শুরুতে চাপে রেখেছিলেন বাংলাদেশের পেসাররা। দিনের প্রথম ঘণ্টায় খেলা ১৩ ওভারে মাত্র ১৫ রান করতে সক্ষম হয় নিউজিল্যান্ড। কিন্তু এরপর আর একবারের জন্যও কোনো সমস্যা হয়নি কিউইদের দুই টপঅর্ডার ব্যাটারের। দেখে শুনে খেলে প্রথম সেশনে ২৭ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৬৬ রান করে তারা।
দ্বিতীয় সেশনে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই সাজঘরে ফিরতে পারতেন ইয়ং। ইনিংসের ২৮তম ওভারের চতুর্থ বলে তার ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল জমা পড়ে লিটনের গ্লাভসে। কিন্তু বাংলাদেশের কেউই সেই বলে আবেদন করেননি। রিপ্লে’তে দেখা যায় আবেদন করলে বা রিভিউ নিলে ২৭ রানেই আউট হতে পারতেন ইয়ং।
সেই বলে বেঁচে যাওয়ার পর আর কন সুযোগই রাখেননি তারা। দেখে মনে হচ্ছিল যেন ওয়ানডে ক্রিকেটে খেলতে নেমেছেন এ দুই ব্যাটার। প্রায় প্রতি ওভারেই আসছিল বাউন্ডারি। মেহেদি হাসান মিরাজের করা ইনিংসের ৩৫তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ফিফটি পূরণ করেন কনওয়ে। সেই ওভারে আরও দুই বাউন্ডারি হাঁকান তিনি।
কনওয়ের আগে নামলেও ফিফটির জন্য বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছে ইয়ংকে। ইনিংসের ৪০তম ওভারে পূরণ ইয়ং-কনওয়ের জুটির ১০০ রান। এর কয়েক ওভারে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন ইয়ং। তবে ফিফটি করার পর বেশিক্ষণ আর উইকেটে থাকা হয়নি তার।
মিরাজের করা ইনিংসের ৪৯তম ওভারের তৃতীয় বলে মিডউইকেটের দিকে ঠেলে দিয়েই সিঙ্গেলের জন্য দৌড় দিয়েছিলেন ইয়ং। তাকে ফিরিয়ে দেন কনওয়ে। পরে ইয়ং পপিং ক্রিজে ফেরার আগেই নাজমুল হোসেন শান্তর থ্রো ধরে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন লিটন। ফলে বিদায়ঘণ্টা বাজে ১৩৫ বলে ৫২ রান করা ইয়ংয়ের, ভাঙে ১৩৮ রানের জুটি।
দ্বিতীয় সেশনের বাকি সময়টা নির্বিঘ্নেই কাটিয়ে দেন টেলর ও কনওয়ে। প্রথম সেশনে ২৭ ওভারে ১ উইকেটে ৬৬ রান করা নিউজিল্যান্ড, দ্বিতীয় সেশনে সমান ২৭ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে তুলে নেয় ৮১ রান। যার বড় কৃতিত্ব ছিল শুরু থেকেই ইতিবাচক খেলতে থাকা কনওয়ের।
চা পানের বিরতি শেষে তৃতীয় সেশনে খেলতে নেমে সেঞ্চুরিতে পৌঁছতে বেশি সময় নেননি এ বাঁহাতি ব্যাটার। ইনিংসের ৬৭তম ওভারে মুখোমুখি ১৮৬তম বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি পূরণ করেন কনওয়ে। যেখানে ছিল ১৪ চার ও একটি ছয়ের মার। মাত্র সপ্তম ইনিংস খেলতে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি হাঁকালেন তিনি।
তবে কনওয়ে একপ্রান্তে ভালো খেলতে থাকলেও তাকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দেওয়া হয়নি টেলরের। চতুর্থ উইকেটে ঠিক ৫০ রানের জুটি গড়ে শরিফুলের বলে সাদমানের হাতে ধরা পড়েছেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ৫ চারের মারে ৬৪ বল থেকে করেছেন ৩১ রান।
টেলর ফিরে যাওয়ার পর দিনের শেষভাগে আর তেমন আধিপত্য দেখাতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। চতুর্থ উইকেটে হেনরি নিকলস ও কনওয়ে মিলে যোগ করেন ৩৮ রান। সেঞ্চুরিয়ান কনওয়েকে সাজঘরে পাঠান বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল। তার লেগ স্ট্যাম্পের বলে কট বিহাইন্ড হন ১২২ রান করা কনওয়ে।
এরপর দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে ইনিংসের ৮৮তম ওভারের তৃতীয় বলে ১১ রান করা ব্লান্ডেলকে সাজঘরে পাঠিয়ে দেন এবাদত হোসেন। দিন শেষে নিকলস অপরাজিত রয়েছেন ৩২ রান করে।