নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ সাতক্ষীরার তালায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছায়ে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় বীরমুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যাচার এবং মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানির চক্রান্তের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের আব্দুল মোতালেব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন, তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার দক্ষিণ শার্শা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা তবিবুর রহমানের পুত্র আবু সাঈদ মোহম্মদ ইদ্রিস।
তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমার পিতা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে সে সময় যে সব বীর সেনানিরা অংশগ্রহণ করেছিলেন দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের সন্তান ও পোষ্যদের কিছু সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছেন সরকার। কিছু অমুক্তিযোদ্ধা অবৈধ লোভ ও লাভের বশবর্তী হয়ে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ভূয়া সনদ সৃষ্টি করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সন্তানদের চাকুরি সুবিধাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে আসছেন।
এরকম একজন ব্যক্তি সাতক্ষীরা তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার ধানদিয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের প্রয়াত লোলিত মোহন সাহা। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। ১৯৭১ এর পর দীর্ঘকাল যাবত কখনো তাকে মুক্তিযোদ্ধা দাবিও করেননি তার পরিবার। অথচ পত্র পত্রিকার মাধ্যমে ২০১৯ সালে আমার পিতাসহ আমরা জানতে পেরেছি তার পুত্ররা বীরেন্দ্র নাথ সাহা, প্রতাপ কুমার সাহা ও পৌত্র সুমন সাহা মুক্তিযোদ্ধার একটি সাময়িক সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্টি করে। ওই জাল সনদে তারা সরকারি চাকুরি করে আসছেন।
বিষয়টি অবগত হয়ে আমার পিতাসহ অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা হতবাক হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে আমার পিতা প্রতিবাদ শুরু করেন। এঘটনায় আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন আমার পিতা। পিবিআই তদন্ত করে তাদের উপস্থাপিত ১৪৮৬০ নং সনদটি সঠিক নয় মর্মে উল্লেখ করে একটি রিপোর্ট প্রদান করেছেন। মামলাটি বর্তমানে জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়াও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আমি নিজে অভিযোগ দায়ের করি। পরবর্তীতে শিক্ষা অফিস বিভাগীয় মামলা দায়ের করে এবং কেন তাদের চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না মর্মে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে সন্তোষ জনক জবাব লিখিতভাবে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, তাদের পিতা লোলিত মোহনের লাল মুক্তিবার্তা, গেজেট নেই তবুও জালিয়াতির মাধ্যমে সাময়িক সনদে বছরের পর বছর চাকুরি করে আসছেন। সম্প্রতি তালায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই শুরু হলে অমুক্তিযোদ্ধা পিতাকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে গেজেট ভুক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেন। এবিষয়ে আমার পিতা প্রতিবাদ করার কারনে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার জন্য আমাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জঘন্য মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন লোলিত মোহনের সন্তানসহ জনৈক স্বার্থন্বেষী ব্যক্তিরা। এমনকি আমার ভগ্নিপতি পাইকগাছার মল্লিক শফিকুল ইসলামকে জড়িয়ে তাকে হয়রানির চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ভগ্নিপতি সরকারি চাকুরিজীবী হওয়ায় তাকে হেয়প্রতিপন্ন এবং চাকুরির ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে নানান চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র ওই মামলায় স্বাক্ষী হওয়ার কারণে তাকে এবং তার পরিবারকে জড়িয়ে এধরনের গভীর ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন ওই অমুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। আমি ওই জালিয়াতির বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিবাদ করায় আমার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা অপবাদ লাগিয়ে হয়রানির ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। সর্বশেষ চক্রান্তের অংশ হিসাবে গত ১৮ আগস্ট ২০২২ তারিখের ঘটনা উল্লেখ করে আমি, আমার পিতা এবং ভগ্নিপতি মল্লিক শফিকুল ইসলামকে জড়িয়ে অনলাইনে একটি মিথ্যা কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে জি.ডি করে হয়রানির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি এ সময় ওই অমুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং সহযোগীদের চক্রান্তের হাত থেকে রক্ষা পেতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।##