নলতা ডেস্ক : কালিগঞ্জ উপজেলার নলতায় ঈদের কেনাকাটা জমে উঠেছে। এবারের খুশির ঈদে নতুন সাজে সাজতে আকর্ষণীয় ড্রেস কিনতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের ক্রেতাদের পদচারণায মুখরিত থাকে নলতার মার্কেট ও বিপনী বিতানগুলো। নলতা বাজারের আল আমিন এন্টারপ্রাইজ, রানা এন্টারপ্রাইজ, সৌখিন বস্ত্রালয়, শতরুপা বস্ত্রালয়, টিএস ফ্যাশন হাউস, ক্ষণিকা বস্ত্রালয়, শাহী বস্ত্র সম্ভারসহ অধিকাংশ বিপণীগুলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপচে পড়া ভিড় নজরে পড়েছে। ক্রেতারা তাদের পছন্দের পোশাকটির জন্য ঘুরছেন এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে। শত শত তরুণ-তরুণী বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাকে কেনাকাটা করছেন। বিভিন্ন ব্রান্ডের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিক্রেতাদের।
ঈদ উপলক্ষে দোকানগুলোতে তরুণদের বাহারী পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট থেকে শুরু করে তরুণীদের ভারতীয়সহ বিভিন্ন ডিজাইনের কামিজ, রকমারি শাড়ি, ফতুয়া, বিভিন্ন নামের পায়জামা, গহনা বিক্রি হচ্ছে। জুতার দোকানগুলোতে একই অবস্থা। ক্রেতারা তাদের পছন্দের জুতা সংগ্রহ করতে পাক রওজা শরীফ মোড়ের নিউ সু হাউজ, বাটা মার্কেট, সম্রাট সু ও এপেক্সসহ বিভিন্ন জুতার দোকানে ভিড় করছেন। নলতার হাটখোলার বাসস্টান্ডে অবস্থিত মেসার্স শাহী বস্ত্র সম্ভারসহ বিভিন্ন দোকানে ঘুরে দেখা যায় রকমারী শাড়ী, লুঙ্গি, থান কাপড়, ত্রি-পিচ ও শার্ট প্যান্টের বিপুল সমাহার। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ-শিশু কেনাকাটায় ব্যস্ত রয়েছে। দোকানিরাও ব্যস্ত ক্রেতাদের সন্তষ্ট করতে। ঈদকে সামনে রেখে ঘর সাজানো আসবাবপত্রও বিক্রি হচ্ছে দেদারসে।
এদিকে বরাবরের মত এ বছরও নলতার মার্কেটে ভারতীয় পোশাকের চাহিদা বেশি। নানা রকম ডিজাইন আর ভারতীয় সিরিয়ালের নাম অনুসারে বেশি জনপ্রিয় ভারতীয় পোশাকগুলো। ক্রেতা সামিয়া সুলতানা জানান, ভাল নকশা না থাকার করণে দেশি পোশাকের চাহিদা খুবই কম।
এবছর মেয়েদের জন্য দোকানিরা এনেছেন ফ্লোরটাচ্, কোটি ফ্রগ, লেহেঙ্গা, পাঞ্চু, টু-পার্ট, স্কটসহ বিভিন্ন আধুনিক পোশাক। সাম্প্রতি বছরের পাখি, কিরণমালা, মধুমালা, মায়াপরী, পাকিস্থানী লনসহ বিভিন্ন নামের থ্রি-পিচ ও ফোর পিচ পোশাকও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেছিলো। ছেলেদের জন্য ফতুয়া, কালার ফুল শার্ট, চেক শার্ট, জিন্স ও গ্যাবাডিং প্যান্টের পাশাপাশি ঈদ স্পেশাল বাহারি ডিজাইনের পাঞ্জাবি পছন্দের তালিকায় রয়েছে।
নলতা বাজারে অবস্থিত আল আমিন এন্টারপ্রাইজের সেলস ম্যানেজার মো.আজাদ এই প্রতিবেককে জানান, এবারে ঈদে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে ভারতীয় নতুন মুভির সাথে মিল করে এবার আমরা তরুনীদের জন্য বাবলী, বাহুবলী, ক্লাসিক,পাঞ্চু ছাড়াও আরো কিছু নতুন পোশাক বাজারে নিয়ে এসেছি। যেগুলো ক্রেতাদের সহযে মন জয় করে নিচ্ছে। ভারতীয় এসব বিভিন্ন ত্রী-পিচ দেড় হাজার থেকে শুরু করে তিন হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান। তিনি আরও বলেন গত বছরের তুলনায় এবছরে ক্রেতাদের চাহিদা বেশ ভাল আছে। বিশেষ করে সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত ক্রেতাদের উপস্থিত আশানুরুপ বলে জানান তিনি।
নলতা বাজারের আধুনিক শপিংমল টিএস ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী সাহাবুদ্দীন আহম্মেদ মিঠু জানান, এবারের ঈদে আমরা সব বয়সি ক্রেতাদের চাহিদা মেটানোর জন্য আধুনিক পোশাক বাজারে এনেছি। তবে এবারের ঈদে ভারতীয় সিরিয়ালের নাম অনুসারে তেমন কোন পোশাক না আশায় মেয়েদের বেশি চাহিদা রয়েছে ফ্লোরটাচ্, লেহেঙ্গা, স্কট, পঞ্চ নামের পোশাকের। মহিলাদের পছন্দ বেনারসি,জামদানি ও কাতানশাড়ি। শিশুদের পছন্দ থাই কিডস্, বেবি ফ্রগ, মোদি পাঞ্জাবি। আর ছেলেদের জন্য রয়েছে জিন্স প্যান্ট, গ্যাবাডিং প্যান্টের পাশাপাশি ঈদ স্পেশাল বাহারি ডিজাইনের পাঞ্জাবি পছন্দের তালিকায় রয়েছে।
নলতা বাজারের মেসার্স জামান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. আনিছুজ্জামান খোকন জানান, এবারে ঈদে সকল ক্রেতাদের জন্য আমরা সকল প্রকার আধুনিক পোশাক বাজারে নিয়ে এসেছি তবে গত বছরের তুলনায় এবার রমজানের মাঝামাঝিতে তেমন ক্রেতাদের উপস্থিত দেখা যাচ্ছে না তবে যত ঈদ ঘনিয়ে আসছে ততই ক্রেতাদের পদচারণা বাড়ছে। তবে এবার সরকার অন্যান্য পন্যের উপর ট্যাক্স বাড়ালেও পোশাকের উপর তেমন কোন প্রভাব পড়েনি।
নলতা বাজারের ক্ষণিকা বস্ত্রলয়ের স্বত্বাধীকারী মীর আব্দুল ওয়াদুদ প্রতিবেদককে জানান,অন্যান্য বছরে রমজানের মাঝামাঝিতে ক্রেতাদের পদচারণায় দোকান মুখরতি থাকলেও এবার ঈদে সেটা উপলব্ধী করা যাচ্ছেনা তবে ঈদ যত কাছে আসছে ততই ক্রেতাদের পদচারণা হবে বলে তিনি আশাবাদী। তিনি আরও বলেন এবার মার্কেট এতই খারাপ যে লোন তুলে যে পোশাক আমরা দোকানে এনেছি সে লোন আমরা এখনো পরিশোধ করতে পারলাম না কিন্তু বিগত বছরগুলোতে মার্কেট ভাল থাকার কারণে ১৫ রমজানের মধ্যে আমরা ব্যাংক লোন পরিশোধ করে থাকি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে সাজানো হয়েছে বাহারি ডিজাইনের লেহেঙ্গা শাড়ি, লেহেঙ্গা নেট শাড়ি, ইতালিয়ান ক্রেফ, বুটিকস, কাতার শাড়ি, ইন্ডিয়ান সুতি শাড়ি, ঢাকাইয়া ও ইন্ডিয়ান জামদানি, ফ্লোরটাচ্, লেহেঙ্গা, স্কট, পঞ্চ, ইন্ডিয়ান স্ক¬ুসিফ ত্রি-পিচ, ক্রাফটেট থ্রি-পিচসহ আকার্ষনীয় ডিজাইনের পন্য। ছোটদের কাপড়ের বিপুল সম্ভার রয়েছে বিভিন্ন দোকানগুলোতে।
টিএস ফ্যাশন হাউসে গিয়ে সখিপুর থেকে আসা সখিপুর কেবিএ কলেজের ছাত্রী সুমাইয়া ইসলাম রিপার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি বলেন নিজেকে অন্যের চোখে একটু আলাদা ও রুচিসম্মতভাবে তুলে ধরতেই অধুনিক পোষাক ক্রয় করতে এখানে আসা। বলেন, বারবারই দেশিয় পোশাক পরে থাকি তাই এবার ঈদে একটু ভিন্ন সাজে সাজতে ভারতীয় কিছু পোশাক দেখতেছি।নলতায় এসে কয়েকটা মার্কেট ঘুরেছি এবার দোকানীরা যেসব পোশাক নিয়ে এসেছে সেগুলো বেশ ভাল লেগেছে। দেশিয় পোশাকের ভাল ডিজাইন না থাকায় ভারতীয় পোশাকের দিকে তরুনীরা বেশি ঝুঁকছে বলে তিনি এ প্রতিবেককে জানান।
বাজারের বিভিন্ন বস্ত্রবিতানে গিয়ে জানা যায়, শৈল্পিক ফ্যাশন বরাবরই পরিবর্তনশীল। আজ যা আধুনিক কালই তা সেকেলে। আর এ পরিবর্তনটাই আকর্ষণ করে থাকে তরুণ-তরুণীদের। শৈল্পিক সে দিকে গুরুত্ব দিয়েই আমরা পোশাক গার্মেন্টস এবং শোরুম থেকে সরাসরি পোশাক বাজারে নিয়ে এসেছি। তারা জানান, আমাদের এবারের ঈদ পোশাকের মোটিফ প্রকৃতি। আমরা বিভিন্ন ডিজাইন দিয়ে ফুঠিয়ে তুলেছি এবারের পোশাক। কারণ মোটিফাই ফ্যাশনের মূল অংশ। যে পোশাকটি তৈরি হবে তার ডিজাইন, রংয়ের কম্বিনেশন, কোন সিজন বা উৎসবের পোশাক,তার কাপড়টি কেমন হবে,পোশাকটি স্লীম নাকি ফ্যাটি ব্যাক্তির জন্য এসব হলো মোটিফ। আর এসব ভেবেই শৈল্পিক পোশাক তৈরি করে থাকে।
এবারের ঈদে শিশু ও মেয়েদের পোশাক বিক্রি বেশি হচ্ছে। কসমেটিকসের দোকানেও তরুণীদের বেজায় ভিড়। এছাড়াও জুতার দোকানে স্লিপারসহ বিভিন্ন ¯্রান্ডেল বেশ বিক্রি হচ্ছে।
মাসুমা ট্রেডিং এর স্বত্বাধিকারী আবু মুসা ও টিএস ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী সাহাবুদ্দীন আহম্মেদ মিঠু জানান,অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছরও কসমেটিকস সামগ্রীর দাম ঠিক আছে এবং গুনগত মানসম্পন্ন মালামাল কিনতে ক্রেতাদের বেশ আগ্রহ।
প্রত্যোক সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হচ্ছে আনন্দ ও উৎসবের। আর উৎসবকে ঘিরে সকলে নতুন ডিজাইনের কাপড় নিতে বেশি উৎফুল্ল থাকেন এই বিশেষ দিনে। তাই উৎসবে আনন্দ যোগাতে নারীদের পচন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি ও সেলোয়ার কামিজ এবং দেশি ও বিদেশী থান কাপড় সংগ্রহ করেন দোকানীরা। তবে এখন মানুষ খুবই সচেতন। দামের বদলে ক্রেতারা ভাল মানের কাপড়টি কিনতে চাই।
পূর্ববর্তী পোস্ট