বিএনপি আন্দোলনে গেলে মামলা ও গ্রেফতারের দিকে ঝুঁকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে নতুন করে মামলা নয়। পুরনো মামলা পুনরুজ্জীবিত করে আন্দোলনকারীদের গ্রেফতারে সরকার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা বলেন, বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে সারাদেশে যে পরিমাণে মামলা রয়েছে, তাতে নতুন মামলা প্রয়োজনও পড়বে না। সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী অন্তত পাঁচ জন নেতা জানান, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিএনপির রাজপথে নামার পরিকল্পনা করলে, তা ঠেকাতে পুরনো মামলা চাঙ্গা করে গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়ানো হবে। ক্ষমতাসীনরা মনে করে, গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়ালে আন্দোলন থেকে পিছু হটবে তারা। বিএনপির নেতাকর্মীদের ভেতরে ভীষণ গ্রেফতার আতঙ্ক থাকে বলে মনে করেন সরকার দলের নেতারা।
পাশাপাশি তাদের আন্দোলন মানে জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ খুন ও দেশের সম্পদ নষ্ট করার আন্দোলন, এটাও ব্যাপকভাবে প্রচারে নামবে আওয়ামী লীগ। ২০১৫ সালে আন্দোলনের নামে বিএনপি দেশে যে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, তা মানুষের কাছে বার বার তুলে ধরা হবে। যাতে করে তাদের আন্দোলনে জনগণ সম্পৃক্ত না হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলনে যাওয়ার মতো সাহস ও শক্তি কোনোটাই নেই। তাদের মুখে আন্দোলনের কথা শুনলে জনগণ আঁতকে ওঠে। সুতরাং বিএনপি আন্দোলনে জনসমর্থন পাবে না। তাই মুখে আন্দোলনের কথা বললেও রাজপথে নামার সুযোগ তাদের আসবে না।’ তিনি বলেন,‘বিএনপি আন্দোলনের দিকে গেলে সরকারও নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ ফারুক খান বলেন, ‘তাদের নেতাকর্মীদের নামে অসংখ্য মামলা রয়েছে। আবার আন্দোলনে গেলে এগুলো নিশ্চয়ই পুনরুজ্জীবিত হবে।’
দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর দুই নেতা বলেন, কোনোভাবেই বিএনপিকে রাজপথে নেমে আন্দোলন অথবা জনজীবন অচল করে দেওয়ার মতো কোনও কর্মসূচি পালন করতে দেবে না ক্ষমতাসীনরা। ২০১৫ সালে ৯২ দিন আন্দোলনের ফলে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে জ্বালাও-পোড়াও করার অপরাধে যেসব মামলা রয়েছে, সেগুলো আবারও পুনরুজ্জীবিত করা হবে। তারা জানান, বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের যেসব নেতারা জামিনে রয়েছেন, সেসব মামলায় তাদেরকে আবার ধড়-পাকড়ে নামবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঈদের পর বিএনপি আন্দোলনে নামতে পারে, এ ধারণা থেকে বিকল্প এই পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা আরও জানান, ক্ষমতাসীনরা মনে করে, ২০১৫ সালে আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করে বিএনপি যেভাবে জনবিচিছন্ন দলে পরিণত হয়েছে, তাতে করে নতুন কোনও আন্দোলনে জনগণ তাদের সমর্থন দেবে না। বিএনপির আন্দোলন হালে পানিও পাবে না। দলটির নীতি-নির্ধারকরা আরও মনে করেন, ৯২ দিনের আন্দোলনে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি পরাজিত হয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করেছে। ওই ধ্বংসাত্মক ও বীভৎস আন্দোলনের পর বিএনপির মুখে আন্দোলনের কথা শুনলেই জনগণ ভয়ে আঁতকে ওঠে। এটা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিজয় ও অর্জন। এটাকেই পুঁজি করে বিএনপির আন্দোলন বিরোধী প্রচার চালানো হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিএনপি গণতান্ত্রিক পথে রাজনীতি করার সুযোগ পাবে। কিন্তু অগণতান্ত্রিক কোনও উপায়ে কিছু করার চেষ্টা করা হলে কঠোর হবে সরকার। তাদের প্রতি জনগণের আস্থা নাই। ফলে দলটির আন্দোলন সফল করে তোলা একটি অসাধ্য কাজ।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির ৯২ দিনের ব্যর্থ আন্দোলন সরকারের হাতে অনেক সুযোগ এনে দিয়েছে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘আন্দোলনের কথা বিএনপির মুখে মুখেই থাকবে। রাজপথে গড়াবে না। সেই শক্তি তাদের নাই। জনগণও তাদের সঙ্গে নাই।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি অগণতান্ত্রিক পথে কোনও কিছু হাসিল করতে গেলে সরকার উপযুক্ত জবাব দেবে। আওয়ামী লীগও তা প্রতিহত করবে।’