শ্যামনগর প্রতিনিধি :
সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যুব রেড ক্রিসেন্টের দল গঠন বাধ্যতামূলক হলেও সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই কমিটি নেই স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনটির। উপজেলার ৯১ টি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার মধ্যে কোনটিতেই যুব রেডক্রিসেন্টের কমিটি ও কার্যক্রম নেই বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির উপজেলা ইউনিটের নেতৃবৃন্দ। ফলে একদিকে যেমন মানা হচ্ছে না সরকারি নির্দেশনা অন্যদিকে জরুরি আপদকালীন সময়ে প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবী পাওয়া নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। অথচ স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনের তহবিল গঠনের জন্য ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এককালীন ফি আদায় করা হচ্ছে।
২০১৪ সালে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষা) বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির যুব রেড ক্রিসেন্টের দল গঠন বাধ্যতামূলক ও তহবিল গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর থেকেই স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনের তহবিল গঠনের জন্য ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর (২০+২০+২০) ৬০ টাকা, নবম ও দশম (২০+২০) ৪০ টাকা এবং একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে (২০+২০) ৪০ টাকা এককালীন ফি নেয়া হচ্ছে।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের থেকে এককালীন ফি আদায় করবে। আদায়কৃত অর্থের ৬০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (আলাদা রেডক্রিসেন্ট হিসাব একাউন্টে) যুব রেডক্রিসেন্ট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রেখে বাকী ৪০ শতাংশ অর্থ শিক্ষাবোর্ডে প্রেরণ করবে। শিক্ষাবোর্ডসমূহ প্রাপ্ত অর্থের ১৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ রেখে বাকি অর্থ দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জাতীয় সদর দপ্তরে প্রেরন করবে।
কিন্তু কমিটি না থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে আদায়কৃত এই অর্থের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাতক্ষীরা জেলা ইউনিট ও শ্যামনগর উপজেলা যুব রেড ক্রিসেন্টের নেতৃবৃন্দ।
নিয়মানুযায়ী যুব রেডক্রিসেন্টের প্রতিটি কমিটিতে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ৫৩ জন শিক্ষার্থীর অন্তর্ভুক্তির নির্দেশনা রয়েছে বলে জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শ্যামনগর উপজেলা যুব রেড ক্রিসেন্ট দলের দলনেতা আনিসুর রহমান মিলন জানান, উপজেলার ৯১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মধ্যে কোনটিতে যুব রেড ক্রিসেন্টের কমিটি নেই। যেহেতু কমিটি নেই সেহেতু কার্যক্রমও নাই। কিন্তু এ বাবদ যে ফি আদায় হচ্ছে তাহলে এই অর্থ কোথায় ব্যবহার হচ্ছে তা আমরা জানি না। যা খুবই রহস্যজনক! আর যে সব প্রতিষ্ঠানে আমরা যাই সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা রেড ক্রিসেন্ট বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করে।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রেড ক্রিসেন্টের ফি এর টাকা খরচ করে ফেলে। কিন্তু এটা উচিত না। সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে নজরদারি করা উচিত।
এ বিষয়ে নকিপুর সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ড. মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান বলেন, কাগজে কলমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ফি আদায়ের কথা থাকলেও তা নেওয়া হয় না।
তিনি বলেন আমার প্রতিষ্ঠান সরকারি তাই শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো সেশন ফি ও দিতে পারে না। অনেক শিক্ষার্থীকে স্কুল ফান্ড থেকে ফরম ফিলাপ করাতে হয়। আর গ্রামের স্কুল গুলোর কি অবস্থা ভেবে দেখুন!
শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ফি আদায়ের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে কাঠালবাড়ি কাঁঠালবাড়ি এ.জি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আজাহারুল ইসলাম বলেন, রেড ক্রিসেন্ট ফি শুধুমাত্র বোর্ডে যে পরিমাণ ফি ধরা হয় সেটাই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়। যেহেতু এছাড়া অতিরিক্ত কোন টাকা নেওয়া হয় না সেহেতু অর্থ আত্মসাতের প্রশ্নই ওঠে না। রেড ক্রিসেন্ট এর জন্য স্কুলের কোন ব্যাংক একাউন্টও নেই। আসলে এটা নিয়ে তেমন কোন ট্রেনিং বা কার্যক্রম না থাকায় কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এটার গুরুত্ব দেয় না।
কাশিমাড়ী আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান এস.এম আব্দুল হাই বলেন, রেড ক্রিসেন্ট এর কোন কার্যক্রম সম্পর্কে আমরা অবগত নই। বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী রেড ক্রিসেন্ট ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশনের সময় ও ফর্ম ফিলাপের সময় টাকা টাকা নেওয়া হয়। বোর্ড ফি বাবদ কিছু অর্থ বোর্ডে জমা দেওয়া হয় বাকি টাকা প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ফান্ডে জমা রাখা হয়। প্রতিষ্ঠানের সেখান থেকে যেকোনো কাজের তা ব্যবহার করা হয়।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের ইউনিট লেভেল কর্মকর্তা মোঃ হাসিবুল ইসলাম সোহান বলেন, উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এই কমিটি থাকা বাধ্যতামূলক। সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তারা যেন এই বিষয়ে এখনি পদক্ষেপ নেয়। আমরা চাই প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রেড ক্রিসেন্টের ফি দিয়েই তাদের প্রতিষ্ঠানে যুব কমিটি করবে। এতে যে কোন জরুরি মুহুর্তে আমাদের সেচ্ছাসেবী পেতে সুবিধা হবে।
তিনি আরো বলেন, রেড ক্রিসেন্ট জাতি, উপজাতি, ধর্মীয় বিশ্বাস, শ্রেণি অথবা রাজনৈতিক বিশ্বাসে কোনো প্রকার বৈষম্যের সৃষ্টি করে না। একমাত্র প্রয়োজনের তাগিদে ব্যক্তির যন্ত্রণা দূর করা এবং জরুরি অবস্থায় দুর্দশাগ্রস্তের সেবায় অগ্রাধিকার দানের প্রচেষ্টা চালায়। রেড ক্রিসেন্ট পক্ষপাতহীন হয়ে বিশ্ববাসীর সেবায় কাজ করে। এটি একটি নিঃস্বার্থ ও স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিষ্ঠান।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটি স্বীকৃতি লাভ করে। এরপর ১৯৭৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রেডক্রসের ২২তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তেহরানে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটি আন্তর্জাতিকভাবে পূর্ণ স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৮৮ সালে সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি’ রাখা হয়।