বিএম আলাউদ্দীন আশাশুনি ব্যরো:
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আশাশুনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে আশাশুনি উপজেলার ১১ ইউনিয়নের ৯৯টি ওয়ার্ডে ৮৭ ভোটকেন্দ্রের ৬০৪টি ভোটকক্ষে সর্বমোট ২,৩৯,২১০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এ উপজেলায় মোট ভোটারের ১,২১,৯৭৯ জন পুরুষ, ১,১৭,২৩০ জন নারী ও ১ জন হিজড়া ভোটার রয়েছে।
এবারের নির্বাচনে এ উপজেলা থেকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এ ৩টি পদের বিপরীতে সর্বমোট ১৩ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছেন। যার মধ্যে উপজেলা পরিষদ চেয়াম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এবিএম মোস্তাকিম চিংড়ী মাছ প্রতীক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাড. শহিদুল ইসলাম পিন্টু আনারস প্রতীক, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম ঘোড়া প্রতীক এবং শিল্পপতি আলহাজ্ব গাউসুল হোসেন রাজ দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে মাঠের লড়াইয়ে রয়েছেন। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী টিউবওয়েল প্রতীক, আশাশুনি প্রেসক্লাবের সভাপতি জিএম আল ফারুক টিয়া পাখি প্রতীক, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি এনএমবি রাশেদ সারোয়ার শেলী চশমা প্রতীক, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসমাউল হোসাইন মাইক প্রতীক ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি সাহেব আলী তালা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এছাড়াও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোসলেমা খাতুন মিলি কলস প্রতীক, জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক সীমা পারভীন হাঁস প্রতীক, জেলা যুব মহিলা লীগের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা মেহেরুন্নেছা ফুটবল প্রতীক ও সদ্য সাবেক আশাশুনি সদর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য মারুফা খাতুন বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। এসব প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ভোট এবং দোয়া চেয়ে পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ পথসভা উঠান বৈঠক এবং নির্বাচনী সভা করে চলেছেন। আজ (রবিবার) রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হবে। ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন চায়ের স্টল, হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় আর রাজনীতি সচেতন মানুষের মুখে মুখেও চলছে আগামী ২১মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আলাপ আলোচনা। কখনো কখনো আবার চায়ের আড্ডায় বা রাজনৈতিক পরিচয় এর সূত্র ধরে প্রার্থীদের ভালো-মন্দ দিক, জনসেবা, যোগ্যতার মাপকাঠি নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এদিকে, এ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখলের আশঙ্কা বিরাজ করছে স্বয়ং প্রার্থীদের মাঝে। এছাড়াও প্রার্থী থেকে কর্মী সমর্থকদের মাঝে বাক যুদ্ধ যেন কোনভাবেই থামছেনা।
চলমান এ বাকযুদ্ধ যে কোনো সময় রূপ নিতে পারে সংঘর্ষে। যতই সময় গড়িয়ে যাচ্ছে ততই উৎতপ্ত হচ্ছে ভোটের মাঠ। এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকলেও সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা তিনজন ও স্বতন্ত্র এক প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। তবে বিএনপি ও জামায়াত অংশগ্রহণ না করায় যেমন কমতে পারে ভোটার উপস্থিতি তেমনি সংঘর্ষে জড়াতে পারে আওয়ামী লীগের ঘরোয়া প্রার্থীরা। এ উপজেলায় বিগত ৩টি নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মোস্তাকিম। প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হলেও সর্বশেষ নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। মোস্তাকিমের দুর্গে হানা দিতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে মাঠে নেমেছেন আলহাজ্ব এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম। আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম ছিলেন খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের টানা তিনবারের চেয়ারম্যান। প্রথমবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হলেও পরবর্তী দুবার তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অন্যদিকে, আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক আশাশুনি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. শহিদুল ইসলাম পিন্টু আনারস প্রতীক নিয়ে আটঘাট বেঁধে নেমেছেন মাঠে। অ্যাড. শহিদুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাতক্ষীরায় গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আইনজীবী। অপরদিকে, এবারের উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে নতুন মুখ শিল্পপতি আলহাজ্ব গাউসুল হোসেন রাজ। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চমক দেখানোর প্রত্যাশা তার নেতাকর্মীদের। দলীয় কোনো ব্যানার, পদপদবি বা প্রতীকের ব্যবহার না থাকলেও সরকার দলীয় দুজন হেভিওয়েট প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এবং খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম এ দুই প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের মধ্যে চলছে একধরনের স্নায়ু যুদ্ধ। যে কোনো সময় এই টানটান স্নায়ু যুদ্ধ রূপ নিতে পারে সংঘর্ষে। এদিকে, আনারস প্রতীকের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাড. শহিদুল ইসলাম পিন্টু ২৪টি কেন্দ্র খুবই ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে স্থানীয় প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন দপ্তরে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন। এছাড়াও প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা, কাদাকাটি, কুল্যা ও বুধহাটা ইউনিয়নে অনেক কেন্দ্র দখল করে ভোট কেটে নেওয়ার আশঙ্কা করছেন সদ্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম। এদিকে, পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা নিরবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। তবে সকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। এখন দেখার বিষয় আগামী ২১ মে (মঙ্গলবার) আশাশুনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহন শেষে তিন পদের বিপরীতে কোন তিন প্রার্থী বিজয়ের শেষ হাসিটা হাসতে পারেন।