কলারোয়া ডেস্ক : সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ২লাখ ৬০হাজার মানুষের এক মাত্র চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র ৫০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে এখন ডাক্তার সংকট থাকায় বিপাকে পড়েছে উপজেলার সাধারন মানুষ। বর্তমানে হাসপাতালে মাত্র ৬ জন ডাক্তার কর্মরত আছেন। ফলে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা ব্যবস্থা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে এবং উপজেলার অসহায় জনসাধারণ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকার স্বাস্থ্য সেবা যখন মানুষের দার প্রান্তে পৌছে দেয়ার কাজ করছে! ঠিক সেই সময়ে হাসপাতালে ডাক্তার সংকট ও অসাধু ডাক্তারদের সেবা বিমুখ হওয়ায় উপজেলার অসহায় মানুষেরা তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কলারোয়া সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, হাসপাতালে ডাক্তারের মধ্যে একের পর এক বদলি হয়ে যাওয়ার ২৫জন ডাক্তারের পদ খালি হয়ে গেছে। সংশিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমান কর্মরত ৬ জন ডাক্তারের মধ্যে পর্যায়ক্রমে তিন শিফটে জরুরি বিভাগে ডিউটির জন্য দুই জন ডাক্তার দ্বায়িত্বে থাকেন এমন পরিস্থিতিতে দাতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে পরিচালিত গর্ভবতী মায়েদের সিজারিয়ান অপারেশন কার্যক্রম ডাক্তার সংকটের কারণে ১০ মাস বন্ধ রয়েছে। অর্থাৎ হাসপাতালে ২০৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদের বিপরীতে বর্তমানে ৭১ টি পদ শূন্য। সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা সদর থেকে ১৮/২০কিলোমিটার দূরের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রোগী এসে কয়েক ঘন্টা বসে থাকলেও ডাক্তারের সাথে দেখা করতে পারছে না। এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে অধিকাংশ রোগী বিরক্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী ও সদরের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে। এমনকি রাতে জরুরি বিভাগে দুই জন ডাক্তার কর্মরত থাকার নিয়ম থাকলেও রাতে হাসপাতাল পরিদর্শকালে (রাত) সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালে যেয়ে কোন ডাক্তারের দেখা পাওয়া যায়নি। এ সময় জরুরি বিভাগে কয়েকজন রোগী বসে থাকলেও ডাক্তার না পাওয়ার কারনে এসব রোগীরা সদরের ক্লিনিকে যেতে দেখা যায়। অপরদিকে জরুরি বিভাগে দুই জন ডাক্তার গোপাল চন্দ্র এবং সহকারি মেডিকেল অফিসার পিয়াস কুমার দাস এর নাম লেখা থাকলেও তাদের কোন দেখা পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী জানান, সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারদের এরকম অবহেলার কারণে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা রোগীরা অন্য বেসরকারি ক্লিনিকে সেবা নিয়ে থাকে। পাশের ক্লিনিকে ডাক্তারদের নামের বাহারী সাইনেেবার্র্ড লাগিয়ে রোগীদের কাছ থেকে গলা কাটা ফিস আদায় করে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করছেন গ্রামের অসহায় এসব রোগীরদের। এছাড়া হাসপাতালে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং দরকারের বাড়তি ওষুধ লেখারও অভিযোগ করেন ডাক্তারদের বিরুদ্ধে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার শফিকুল ইসলাম চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, চাহিদার তুলনায় এত কম ডাক্তার দিয়ে হাসপাতাল চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন আউট ডোরে দুই শতাধিক বা তার চেয়েও বেশী রোগী দেখা হয়। তারপরেও অনেক রোগী ভোগান্তির শিকার হ্েছন। প্রসঙ্গত: গত ২২ জুন জরুরি বিভাগে দুই জন রোগী পৌর সদরের ঝিকরা গ্রামের আমেনা খাতুন সারা দিন রোজা রেখে রাতে হঠাৎ অসুুস্থ হয়ে পরলে তাকে পরিবারের লোকজন অসুুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এসময় জরুরি বিভাগে কোন ডাক্তার না থাকায় সে আধা ঘন্টা অপেক্ষা করে চলে যায় অন্য ক্লিনিকে। পাশের ক্লিনিকে রাতে চিকিৎসা নিয়ে পরদিন সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে যায়। অপরদিকে দক্ষিণ মুরারীকাটি গ্রামের সফুরা খাতুন ডায়রিয়া ও সর্দ্দি জরে আক্রন্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলে দেখেন একই চিত্র ডাক্তার নেই। রাতে জরুরি বিভাগ খোলা থাকলেও ডাক্তাররা ঠিকমত থাকেন না দ্বায়িত্বে, আবার তাদের চেয়ারগুলো ফাঁকা দেখা যায়। ওই দিন হাসপাতালে গিয়ে জরুরি বিভাগে ডাক্তাদের না পেয়ে দায়িত্বে থাকা ডাক্তার গোপাল চন্দের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিশ্রামের জন্য রুমে আছি। হাসপাতাল থেকে তো আর বাহিয়ে যায়নি। হাসপাতালে তখন দুুই রোগীরা সেবা নিতে আসলে বিষয়টা তার জানা নেই বলে জানান। এদিকে অপর ডাক্তার সহকারি মেডিকেল অফিসার পিয়াস রাতে হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়ে পরে আপনাদের সাথে কথা হবে বলে জানান।
রাতে জরুরি বিভাগ খোলা থাকলেও ডাক্তারের দেখা নেই কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
পূর্ববর্তী পোস্ট