নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ এক ব্যবসায়িকে সাতক্ষীরা শহরের পুলিশ সুপারের বাংলোর পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে তুলে এনে হাত ও চোখ বেঁধে বাইপাস সড়ক, ডিবি পুলিশের কার্যালয় ও তালা উপজেলার জাতপুর পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতনের পর ছেলেকে তুলে এনে নির্যাতনের পর বাবাকে ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে দুই কোটি ২৪ লাখ টাকা ও ১০টি সোনার বার(এক কেজির বেশি ওজন) জোরপূর্বক গ্রহণ করার অভিযোগে সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোলের মেসার্স আসিক এন্টারপ্রাইজের স্বতাধিকারী আল ফেরদৌস আলফা সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতে রবিবার এ মামলা দায়ের করেন। ভারপ্রাপ্ত বিচারক নয়ন বিশ্বাস মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্য আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবলুর রহমান খান, পুলিশ পরিদর্শক রাজীব আল রশীদ, দেবহাটা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান, উপপরিদর্শক কাজী আরিফুর রহমান ফারাজী, উপসহকারি পরিদর্শক মফিজুর রহমান, সিপাহী মনিরুল ইসলাম, সিপাহী মোঃ ডালিম, উপপরিদর্শক পিন্টু লাল দাস, উপপরিদর্শক আব্দুল মাজেদ, উপপরিদর্শক মঈনসহ অজ্ঞাতনামা ৭ জন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ভোমরা বন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারক মেসার্স আশেক এন্টারপ্রাইজের স্বতাধিকারী ও সদ্য ভেঙে দেওয়া দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল ফেরদৌস আলফাকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার জন্য তৎকালিন পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, পুলিশ পরিদর্শক রাজীব আল রশীদ ও গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবলুর রহমান খানকে দিয়ে নানা রকম ষড়যন্ত্র শুরু করে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান। মুজিবরের পরিকল্পনায় কাজী মনিরুজ্জাটমান, বাবলুর রহমান খান ও রাজীব আল রশীদ বাদির কাছে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করে। দাবিকৃত টাকা না দিলে তাকে জামায়াতের অর্থযোগানদাতা হিসেবে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
মুজিবর রহমান বাদিকে কয়েকবার মুঠোফোনে হুমকি দেন যে, উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করলে তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর এপিএস মনিকে দিয়ে টেলিফোন করিয়ে তাকে হত্যা ও আর্থিক ক্ষতি করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর আনুমানিক রাত ৯টার দিকে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের বাসভবনের পার্শ্ববর্তী ফাতেমা ডায়াগোনেস্টিক সেন্টারের চিকিৎসক ডাঃ আসাদুজ্জামানের চেম্বারে যাওয়ার সময় পুলিশ পরিদর্শক রাজীব আল রশীদ ও উপপরিদর্শক কাজী আরিফুর রহমান ফারাজী তাকে পিছন দিক থেকে জাপটে ধরে জোরপূর্বক একটি মাইক্রোবাসে তোলে। গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবরুর রহমান খান অন্য গাড়িতে আছে বলে তার দুই হাত ও দুই চোখ বেঁধে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরায়। গাড়িতে পুলিশ তাকে মারপিট করে। ২৪ নভেম্বর দিবাগত রাত দুইটার দিকে তাকে বাইপাস সড়কে নিয়ে যায়। মাইক্রোবাস থেকে নামানোর পর বাদির চোখ খুলে দেওয়া হয়। এ সময় সেখানে দুটি পুলিশ ভ্যান নিয়ে হাজির হন সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াদ। এ সময় তার সম্মুখে দুটি শর্ট গান, একটি পিস্তলসহ কয়েকটি অস্ত্র, ২০/২৫ রাউল্ড গুলি ও কয়েক বস্তা ফেনসিডিল রাখা হয়। পিস্তল ও শর্ট গানের কয়েকটি গুলি বাদির পকেটে ঢুকাইয়া দেওয়া হয়। ১০০ টাকার ২০টি জাল নোটের ব্যাÐেল বাদির হাতে দিয়ে পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানের নির্দেশে সকল আসামীরা মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে ও ছবি উঠাইয়া নেয়। এ সময় গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবলুর রহমান খান ও তৎকালিন উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান তাকে বলে যে ক্রসফায়ার দিতে তোর আর ুকছু লাগবে ? এখন বল, টাকা দিবি না মরবি ? তখন বাদি আসামীদের কাছে জীবন ভিক্ষা চেয়ে বলে যে, আপনাদের চাহিতামত টাকা আমার নেই। এরপর তাকে মাইক্রোবাসে তুলে নির্যাতন করতে করতে পলাশপোলের বাড়িতে আনা হয়। বাবলুর রহমান খানসহ কয়েকজন পুলিশ বাদিকে নিয়ে ঘরে ঢোকে। তখন তারা ১০ পিস সোনার বারসহ নগদ ৩৯ লাখ টাকা গ্রহণ করে। এরপর বাবলুর রহমান খানের নেতৃত্বে পুলিশ তিনটার দিকে তালা উপজেলার জাতপুর পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে ৫ কোটি টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় তাকে পুলিশ ফাঁড়িতে রেখে নির্যাতন করা হয়। পরদিন গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে এনে তাকে নির্যাতন করা হয়। তার ছেলে আজাহারুলকে বাড়ি তেকে তুলে এনে নির্যাতন করা হয়। আজাহারুল তার বাবাকে ক্রস ফায়ারে না দেওয়ার শর্তে তার ব্যাংক হিসাবে যে টাকা আছে তা দিয়ে দেওয়ার কথা বললে ২৬ নভেম্বর তাকে ৩০ বোতল ফেনসিডিলসহ বাইপাস এলাকা থেকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। পরদিন পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবলুর রহমান খান. পুলিশ পরিদর্শক রাজীব আল রশীদ, দেবহাটা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান, উপপরিদর্শক কাজী আরিফুর রহমান ফারাজী শহরের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ এর সামনে এসে দাঁড়ান। বাবলুর রহমান খান ও রাজীব আল রশীদ বাদির ছেলে আজাহারুলকে নিয়ে ব্যাংকের ভিতরে ঢোকে। পরে আজাহারুলের হিসাব নম্বরে থাকা এক কোটি ৯৩ লাখ ৩৭ হাজার ২৪৫ টাকা আজাহারুলের মাধ্যমে তুলে নিয়ে সমস্ত টাকা গাড়িযোগে কাজী মনিরুজ্জমানের বাসায় নিয়ে যায়। ১৯ দিন জেল হাজতে থাকার পর জামিন মুক্তি পাইলে পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবলুর রহমানের মাধ্যমে বাদিকে তার অফিসে ডাকাইয়া বলেন যে, সোনা ও টাকার কথা কাউকে জানালে তাকে খুন করে লাশ গুম করে ফেলার হুমকি দেন। একপর্যায়ে বাদি ভয়ে শ্রমিকের ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে চলে যায়।
বাদিপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. জহুরুল হক মামলার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।#