নিজস্ব প্রতিনিধি : সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশাশুনি থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত আব্দুল ওয়াদুদ আসামীর বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন জানান। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রিমান্ড আবেদর শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মাসুমা আক্তার রিমান্ড শুনানি শেষে তাকে প্রয়োজনে একদিনের জন্য জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। এ আদেশের পর পরই সাতক্ষীরা আদালতের পিপি এড. আব্দুস সাত্তারসহ বিএনপি পন্থী প্রায় অর্ধশতাধিক আইনজীবী এর প্রতিবাদ জানান এবং তারা বিচারকের অপসারনের দাবী জানান। এক পর্যায়ে আদালতের বিচারক এজলাস ছেড়ে চলে যান।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শৈখ হাসিনা সরকার পতনের পর সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল উদযাপিত হয়। এই ধারাবাহিকতায় আশাশুনির প্রতাপনগরে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আনন্দ মিছিল চলাকালে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা জাকির হোসেনের নেতৃত্বে অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন তার বাড়ির ছাদের উপর থেকে আনন্দ মিছিলকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলি ছোড়ে। এতে ছাত্র নেতা হাফেজ আনাস বিল্লাহ, আবুল বাশার আদম ও আলম সরদার ঘটনস্থালেই মারা যায়। এসময় আহত হয় আরো ৮/৯ জন। এঘটনায় নিহত আলম সরদারের বাবা রহিম আলী সরদার ওই বছরের ১৫ আগস্ট বাদী হয়ে আশাশুনি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং জি.আর-১৭৪/২৪। এছাড়া বাদী হেলালুজ্জামান বাদী হয়ে আরো একটি মামলা করেন। যার নং সি.আর ৪৩৩/২৪। এ হত্যা মামলায় পরে গ্রেপ্তার দেখানো হয় আশাশুনি উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা শাকিলকে। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশাশুনি থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত আব্দুল ওয়াদুদ আসামীর বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন জানালে আজ রিমান্ড আবেদর শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মাসুমা আক্তার রিমান্ড মঞ্জুর না করে তাকে প্রয়োজনে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। এতে সাতক্ষীরা আদালতের পিপি এড. আব্দুস সাত্তারসহ বিএনপি পন্থী প্রায় অর্ধশতাধিক আইনজীবী এর প্রতিবাদ জানান এবং তারা বিচারকের অপসারনের দাবী জানান।
জেলা আইনজীবি সমিতির যুগ্নসাধারন সম্পাদক এড নুরুল আমিন জানান, আসামী শাকিলের বিরুদ্ধে এই হত্যামামলাসহ ইতিপূর্বে স্বৈরশাসকের আমলে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা, বিএনপি কর্মী ডাবলুসহ একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে। তার অস্ত্রের ঝনঝনানিতে আশাশুনিতে চাঁদাবাজি, রাহাজানিসহ এমন কোন কাজ নেই যা তার দ্বারা হয়নি। আজকে নিলর্জভাবে এই ম্যাজিস্ট্রেট বারের সভাপতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আসামীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন। তিনি এসময় বিচারককে ঘুষখোর ও দূর্নীতিবাজ বলে আখ্যায়িত করে তার চাকরী থেকে অপসারনের দাবী জানান। বিচারককে তিনি এসময় ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর বলে তাকে দরকার নাই বলে জানান। বিচারক কোর্টে অরাজকতা সৃষ্টি করছেও বলে তিনি দাবী করেন। এই একই ঘটনায় দায়ের করা সিআর ৪৩৩/২৪ মামলায় ৫ নং এজাহার ভুক্ত আসামী। যার বাদী হেলালুজ্জামান। একই ঘটনায় দুটি মামলা।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি এড. আব্দুস সাত্তার জানান, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশ থেকে পালানোর পর ছাত্র-জনতার আনন্দ মিছিলে তারা আমাদের ছয় ছয়টি মানুষকে গুলি করে হত্যা হরেছে। এই মামলার রিমান্ড শুনানির জন্য আমি পিপি হিসেবে এখানে দায়ীত্ব পালনকালে মাসুমা ম্যাজিস্ট্রেট একদিনের জন্য তাকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঞ্জুর করলেন। এসব আওয়ামীলীগের দোসর এই দোসরদের পদত্যাগ চাই।
এ ব্যাপারে জানার জন্য বিচারক মাসুমা আক্তার তার নাজির এবং ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি হটাৎ অসুস্থ্য হয়ে যাওয়ায় আদালত ছেড়েছেন।