মিয়ানামারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর ব্যাপক সহিংসতার মুখে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক জিহাদি গোষ্ঠীগুলো এখন এর প্রতিশোধ হিসেবে পাল্টা হামলার হুমকি দিতে শুরু করেছে।
জিহাদী গোষ্ঠীগুলো এই সংকটকে ইসলাম এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপকতর যুদ্ধের অংশ হিসেবে দেখাতে চাইছে।
কোন কোন জিহাদি গোষ্ঠী বিভিন্ন দেশে মিয়ানমারের দূতাবাসে হামলার উস্কানিও দিয়েছে।
বিভিন্ন জিহাদি গোষ্ঠীর এরকম কিছু বিবৃতি এবং বার্তা বিবিসি মনিটরিং সংকলন করেছে।
আল কায়েদা ইন ইয়েমেন (একিউএপি) এবং তালিবান মিয়ানমারের নির্যাতিত মুসলিমদের সমর্থনে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তাদের অনুসারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
মেসেজিং অ্যাপ ‘টেলিগ্রামে’ একটি আল কায়েদা-পন্থী চ্যানেল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মিয়ানমারের দূতাবাস পুড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এই বার্তায় তারা এমনকি বিভিন্ন দেশে মিয়ানমার দূতাবাসের ঠিকানাও শেয়ার করেছে।
এই বার্তার লিংকটি টেলিগ্রামে আল কায়েদার সমর্থকরা ব্যাপকভাবে শেয়ার করেছে।
এর আগে টেলিগ্রামে ইসলামিক স্টেট-পন্থী (আইএস) একটি গ্রুপও একই ধরণের হুমকি দেয়। এতে তুরস্ক, সৌদি আরব, পাকিস্তান এবং মিশরে মিয়ানমারের দূতাবাসে হামলার সুস্পষ্ট আহ্বান জানানো হয়।
হামলার কৃতিত্ব দাবি
গত ৬ই সেপ্টেম্বর টেলিগ্রামে আরও কিছু বার্তায় জিহাদি গোষ্ঠীগুলো দাবি করতে থাকে যে মিয়ানমারের ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ভাইদের’ বাঁচাতে জঙ্গীরা সেখানে পৌঁছাতে শুরু করেছে।
সিরিয়ার ভিত্তিক জিহাদী গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শামস (এইটটিএস) টেলিগ্রামের একটি চ্যানেলে দাবি করেছে যে “বার্মার মুজাহিদিনরা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ঢুকে সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে হত্যার মাধ্যমে নিরস্ত্র মুসলিমদের হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছে।” হায়াত তাহরির আল-শামস সিরিয়ার আল নুসরা ফ্রন্টের সঙ্গে সম্পর্কিত।
গুরুত্বপূর্ণ এক জিহাদি ইসলামী নেতা আবদ-আল-রাজ্জাক আল মাহদীও টেলিগ্রামে এক বার্তায় দাবি করেছেন যে “বার্মার অভ্যন্তরে এক আত্মঘাতী হামলায় কয়েক ডজন অভিশপ্ত বৌদ্ধকে হত্যা করা হয়েছে।” বলা হচ্ছে যে গ্রুপটি এই হামলা চালিয়েছে তাদের নাম “শাহাব আল-মুজাহেদিন মুভমেন্ট ইন বার্মা।”
টেলিগ্রামের আরেকটি জিহাদি চ্যানেলে বলা হচ্ছে “পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মুজাহেদিনরা বার্মায় জিহাদে যোগ দিতে রওনা হয়েছে।” এই বার্তার সঙ্গে একটি ভিডিও জুড়ে দেয়া হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে জঙ্গীরা একে অন্যের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে।
চেচনিয়ার অস্বীকৃতি
এদিকে চেচনিয়া থেকে একদল জঙ্গী ইতোমধ্যে মিয়ানমারে লড়াই করার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে বলে যে খবর প্রচারিত হয়েছে তা অস্বীকার করেছেন রাশিয়ার চেচনিয়ার কর্তৃপক্ষ।
রাশিয়ার ‘কাভকাজস্কি উযেল’ ওয়েবসাইটে প্রথম এই খবরটি প্রকাশ পায়।
চেচনিয়ার সরকারের একজন মুখপাত্র এই খবর প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, “এই দাবির সঙ্গে বাস্তবতার কোন সম্পর্ক নেই।”
এদিকে সোমালিয়ার আল শাবাব জঙ্গী গোষ্ঠী, যাদের সঙ্গে আল কায়েদার সম্পর্ক আছে, তারা মিয়ানমারের বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিয়েছে।
এই গ্রুপটি তাদের ‘জেনারেল কমান্ড’ থেকে আরবীতে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে।
তারা ‘আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট’-কে (একিউআইএস) আহ্বান জানিয়েছে রোহিঙ্গাদের গণহত্যার প্রতিশোধ হিসেবে বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালানোর জন্য।
আল শাবাব আরও বলেছে, যদিও তাদের জঙ্গীরা রাখাইন রাজ্য থেকে অনেক দূরে, মিয়ানমার-সহ যেখানেই মুসলিমদের বিরুদ্ধে নির্যাতন চলছে, সেখানেই তারা নজর রাখছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।