ডেস্ক রিপোর্ট : পুলিশের বিরুদ্ধে আটক বাণিজ্যের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। প্রতিদিনই সংবাদপত্রের পাতা খুললেই অসংখ্য অভিযোগ চোখে পড়ে। বলা বাহুল্য ঘটনা হাজারটা ঘটলে এ জাতীয় নিউজ একটি হয় কিনা সন্দেহ। কিন্তু এবার নারায়নগঞ্জে ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। ডিবি পুলিশের গাড়ি আটক করে ঘুষের টাকা ফেরত নিলেন এক গৃহবধূ। বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ‘স্বামীকে ছেড়ে দেবেন বলে ৭০ হাজার টাকা নিলেন। এখন ছাড়বেন না তা তো হতে পারে না। হয় টাকা ফেরত দেন না হয় আমার স্বামীকে ছেড়ে দেন।’ বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় ডিবি পুলিশের গাড়ির সামনের বাম্পারের সঙ্গে নিজের ওড়না বেঁধে গাড়ি আটকে এ কথা বলেন বিউটি বেগম নামে এক গৃহবধূ।
এ সময় ডিবি পুলিশের সঙ্গে বিউটি বেগমসহ তার পরিবারের অন্য সদস্যদের হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। পরে সিনিয়র অফিসারের নির্দেশে তড়িঘড়ি করে বিউটির বোনকে নিয়ে ৭০ হাজার টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয় ডিবি পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ার আইনজীবী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ডিবি পুলিশের এসআই মোল্লা টুটুলসহ তাদের একটি টিম এক আসামিকে গাড়ি থেকে নামানোর সঙ্গে সঙ্গে দুই নারী গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। ডিবি পুলিশের গাড়ি সামনে যেতে বাধা দেন। একপর্যায়ে কোলের শিশুকে নিয়ে আসামি ইসহাকের স্ত্রী বিউটি বেগম ডিবি পুলিশের গাড়ির বাম্পার তার ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেলেন।
এ সময় বিউটি বেগম বলেন, আমার স্বামীকে ছেড়ে দেন, না হয় ৭০ হাজার টাকা ফেরত দেন। এ সময় ডিবি পুলিশের সঙ্গে আসামির স্ত্রীসহ অন্যদের হট্টগোল শুরু হয়। এ সময় তোপের মুখে বিউটির ছোট বোন নিঝুমকে গাড়িতে নিয়ে তার কাছে ডিবি পুলিশ ৭০ হাজার ফেরত দেয়। এ সময় নিঝুম ফেরত দেয়া টাকা আদালতপাড়ার সবাইকে হাত উঁচু করে দেখান।
ঢাকার শনির আখড়ার ধনিয়া এলাকার ইসহাকের স্ত্রী বিউটি বেগম জানান, তার স্বামী ইসহাক গাড়ির ব্যবসা করেন। বুধবার রাতে নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের এসআই মোল্লা টুটুল ও এসআই আসাদের নেতৃত্বে একটি দল তার স্বামী ইসহাককে আটক করে। পরে ডিবি পুলিশ দাবি করে ইসহাকের কাছে ৩১ হাজার টাকার জাল নোট পাওয়া গেছে। ডিবি পুলিশ তাকে ফোন দিয়ে জানায়, তার স্বামীকে জাল টাকাসহ আটক করা হয়েছে। স্বামীকে ছাড়িয়ে নিতে হলে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে।
বিউটি বেগম আরও জানান, রাতেই ডিবি অফিসের বাইরে দরকষাকষিতে পুলিশ দেড় লাখ টাকায় তার স্বামীকে ছেড়ে দিতে চায়। কিন্তু বিউটি আর তার ছোট বোন তাদের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ থেকে ৭০ হাজার টাকা আনেন। ইসহাককে ছেড়ে দেয়ার শর্তে ৭০ হাজার টাকা এসআই মোল্লা টুটুল ও এসআই আসাদের হাতে তুলে দেন। কিন্তু টাকা নিয়েও ইসহাককে না ছেড়ে ৩১টি এক হাজার টাকার জাল নোট পাওয়ার অভিযোগ এনে মামলা দেয় পুলিশ। পরে ইসহাককে আদালতে পাঠানো হলে বাধ্য হয়ে ডিবি পুলিশের গাড়ি আটক করেন।
বিউটি বেগমের বোন নিঝুম জানান, ডিবি পুলিশ মিথ্যা অভিযোগে তার দুলাভাই ইসহাককে আটক করে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। এতো টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে দেড় লাখ টাকা দিলে আসামি ছেড়ে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে আসামি ছেড়ে দেয়ার শর্তে ডিবি পুলিশকে ৭০ হাজার টাকা দেয়া হয়। ডিবি পুলিশ টাকা নিয়েও আসামিকে না ছেড়ে জাল নোটের মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরণ করে। পরে আদালতপাড়ায় ডিবি পুলিশের গাড়ি আটক করে প্রতিবাদ জানালে তাকে ডিবি অফিসে নিয়ে টাকা ফেরত দেয়া হয় বলে তিনি জানান।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফারুক হোসেন জানান, ডিবি পুলিশের একটি টিম বুধবার রাতে সাইনবোর্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাল টাকাসহ ইসহাককে আটক করে। তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আসামির স্বজনদের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নেয়ার যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সঠিক নয়। টাকা তাদের কাছে ছিল এখনও তাদের কাছেই আছে। টাকা নেয়ার অভিযোগের যদি সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।