“সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়”-এ শ্লোগানে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। শিশুরাই জাতির কর্নধার, আগামীর কান্ডারি। তাই শুদ্ধাচার বাস্তবায়ন এর শিক্ষা তথা নীতি- নৈতিকতা, সততা, আদর্শ, সঠিক মূল্যবোধ তৈরির কাজ শিশুদের কাছ থেকেই শুরু করতে হবে। তৃণমূল থেকেই উচ্চ পর্যায়ের দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাংস্কৃতিক অঙ্গন জাগিয়ে তুলতে হবে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুদ্ধাচার চর্চার অংশ হিসেবে সাতক্ষীরা কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজসহ জেলার অনেক স্কুলে ‘সততা স্টোর’ চালু করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে দেশের স্কুল পর্যায়ে বিক্রেতাবিহীন সততা স্টোর চালু করার এ প্রয়াস। এক সময় উন্নত বিশ্বের কোথাও কোথাও এমন দোকানের কথা আমরা জানতাম। এখন আমাদের দেশেই অতিসম্প্রতি এর চর্চা শুরু হয়েছে যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। ‘সততা’ শুধু যে বই পড়ে অর্জন করা যায় ব্যাপারটা তা না। এটাকে চর্চার মাধ্যমে অভ্যাসে রুপান্তর করতে হয়। তবে তার জন্য সন্তানদের পিতা মাতা ও যথার্থ দায়িত্ব পালন করতে হবে। শিশুদের জন্য সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তাদের সাথে সর্বদা নৈতিক ও মানবিক আচরণ করতে হবে। যেহেতু শিশুদের জন্য পরিবার হলো একটি প্রতিষ্ঠান, সেই প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি করে নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবকদের নিয়েও স্কুল পর্যায়ে সভা সমাবেশ করে তাদেরকে শিশুর জন্য করণীয় শীর্ষক মতামত দেয়া হচ্ছে।
ইতোমধ্যে জেলার প্রতিটি স্কুলে ক্লাসের শুরুতে কিছু নীতি বাক্য বলা এবং বাস্তবিক চর্চার জন্য দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যার সুফল ও পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি তালা উপজেলায় একজন স্কুল ছাত্রকে মূল্যবান একটি মুঠোফোন রাস্তায় পেয়ে তার মালিকের কাছে পৌঁছে দিয়ে সততার স্মারক স্থাপন করতে দেখা যায়। শিশুদের শেখানো হচ্ছে যে, জীবনে বড় হতে হলে সবার আগে যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে সততা। দেশ ও আদর্শ জাতি গঠনে ছাত্র সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হয়। নিজেদের ক্যারিয়ারের উন্নয়ন ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার পাশাপাশি দেশ ও জাতি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুতি প্রাথমিক পর্যায় থেকেই শুরু করতে হবে।
জেলায় প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। যেখানে বিভিন্ন পর্যায়ের সফল ব্যক্তিদের দ্বারা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বলা হয়ে থাকে যে, আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে ব্যক্তি শুদ্ধ, আর ব্যক্তি শুদ্ধির মাধ্যমে সমাজ শুদ্ধ হয়। আমাদের শিশুদের এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে তারা হাজী মহসিনের গল্প শুনে নয় একে অন্যকে দেখেই অনুপ্রাণিত হতে পারে। আমরা চাই তারা নিজেদের মধ্যেই নৈতিকতার চর্চাকে প্রতিযোগিতার পর্যায়ে নিয়ে যাক। তাহলেই এক সময় আমাদের কাংখিত স্বপ্ন পূরণ হবে।
স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কোনো প্যারামিটার নয়, আমাদের শিশুরাই হোক নবযুগের সততার নতুন স্ট্যান্ডার্ড। জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে সাতক্ষীরার প্রতিটি বিদ্যালয় এবং এর শিক্ষক, অভিভাবকসহ সবাইকে শুদ্ধাচার বাস্তবায়নে শিশুদের পর্যায় থেকেই প্রায়োগিক অর্থে কাজ করে যেতে।
লেখক : জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরা।