‘বাংলাদেশে আমার প্রথম সপ্তাহে দেশটির একজন নাগরিক আমাকে বলেছিলেন যে আমি অনেক বাংলাদেশির চেয়ে ভালো লিখি। এ মূল্যায়ন নিঃসন্দেহে অবাস্তব। তবে হয়তো তিনি বুঝিয়েছিলেন যে আমার লেখা বাংলা বেশি খারাপ না। এটুকুই যে পারি, তার কৃতিত্ব ড. উইলিয়াম রাদিচের।’ আমাজন ডটকমে রাদিচের লেখা বই ‘টিচ ইওরসেলফ বেঙ্গলি বুক’ গ্রন্থের মূল্যায়ন করতে কথাগুলো লিখেছেন একজন ক্রেতা। বাংলা ভাষার গুণমুগ্ধ এই বিদেশি নাগরিক আরো একজন ভিনভাষী বাংলা লেখকের লেখা বই পড়তে পরামর্শ দিয়েছেন বাংলা শেখায় আগ্রহী অন্য ভাষাভাষীদের। ডক্টর হানা রুথ থমসন। আমাজনে ড. হানা রুথের লেখা বেশ কয়েকটি বাংলা শিক্ষার বই বিক্রি হতেও দেখা যায়। উইলিয়াম রাদিচে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে বাংলার অধ্যাপক। ডক্টর হানা রুথ থমসন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক।
পেশা সূত্রে বাংলাদেশ বা বাংলা ভাষার সঙ্গে সম্পর্কিত বিদেশিরা ইংরেজিতে লেখা বিভিন্ন বই পড়ে বাংলা ভাষা যেমন রপ্ত করছেন, বিদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েও রয়েছে স্বল্প থেকে দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে বাংলা শেখার সুযোগ; যার মধ্যে আছে অক্সফোর্ড, ইয়েল, হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে নিউজিল্যান্ডের ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির মতো খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ‘লার্নিং ইলিমেন্টারি বেঙ্গলি’ ও ‘মডার্ন বেঙ্গলি লিটারেরি টেক্সটস’ নামের দুটি কোর্স। ফ্যাকালটি অব ওরিয়েন্টাল স্টাডিজের অধীন অক্সফোর্ডে বাংলা শেখানো হচ্ছে। অক্সফোর্ড বলছে, মূলত মাস্টার অব স্টাডিজ অথবা এমফিলের শিক্ষার্থীদের জন্য এলিমেন্টারি বেঙ্গলি কোর্সটি পরিচালিত হয়। বাংলা শিক্ষার হাতেখড়ি হয় রাদিচে লিখিত ‘টিচ ইওরসেলফ বেঙ্গলি বুক’ বইটি দিয়ে। অক্সফোর্ডের সাইটে দেওয়া (http://intranet.orinst.ox.ac.uk/isa/bengali_language.html) প্রসপেক্টাসে লেখা হয়েছে তাদের ‘আধুনিক বাংলা সাহিত্য পাঠ’ কোর্সে ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ চট্টোপাধ্যায় প্রভৃতিসহ কম পরিচিত লেখকদেরও রচনাও পড়ানো হচ্ছে।’
অক্সফোর্ড শিক্ষার্থীদের জন্য পশ্চিমবঙ্গের সংসদ বাংলা-ইরেজি অভিধান, সংসদ ইংরেজি-বাংলা অভিধান, জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের ‘বাংলা ভাষার অভিধান’ (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড), সুকুমার সেনের ‘অ্যান এটিমোলজিক্যাল ডিকশনারি অব বেঙ্গলি ১০০০-১৮০০ এ.ডি.’ পড়ার পরামর্শ দিয়েছে। নেই বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘বাংলা বানান অভিধান’।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বার্কলে) প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চতর—তিন স্তরে বাংলা কোর্স পরিচালনা করছে ‘ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়া স্টাডিজ’-এর আওতায়। তাদের সাইটে (https://southasia.berkeley.edu/berkeley-bangla-initiative) বলা হয়, আমেরিকার উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ই বাংলা শিক্ষাদানে এগিয়ে রয়েছে। তাদের বাংলার সংস্কৃতি ও সাহিত্য কোর্সে উনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৪৭-এর উপমহাদেশ ভাগ এবং ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানো হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের প্রকাশনায় জানাচ্ছে। এদিকে নিউ ইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলের প্রি-কে ক্লাস পর্যায়ে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে অতি সম্প্রতি বাংলা অন্তর্ভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। জ্যামাইকার একটি স্কুলে নতুন শিক্ষাবর্ষে এই কার্যক্রম শুরু হবে বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।