২০০৭ সালে যেখানে ২ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়েছিল, সর্বশেষ মৌসুমে তা পাঁচ লক্ষ মেট্রিক টনের মতো হয়েছে বলে বাংলাদেশ মৎস্য অধিদফতরের সূত্র দিয়ে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি বাংলা। সে হিসেবে গত ১০ বছরে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণের কাছাকাছি।
কিন্তু ১০ বছরে কিভাবে ইলিশের উৎপাদন এতটা বাড়ানো সম্ভভ হলো- বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনটিতে সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।
বাংলাদেশে ইলিশপ্রধান জেলা হলো ১৭টি। সেখানে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদীতে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এবং মার্চ-এপ্রিলে ডিমের মৌসুমে, মা ইলিশ আর অপ্রাপ্তবয়স্ক জাটকা ইলিশ ধরা নিষেধ।
জেলেদের এসব মৌসুমে ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকা আসলে কী ভূমিকা রেখেছে- চাঁদপুরে ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি শাহ আলম মল্লিক নেস বিষয়ে বলছেন, ‘ইলিশ মাছ বড় হলে সেই বড় মাছ আমরাই ধরবো। মা ইলিশ প্রচুর পরিমাণে ডিম ছাড়তে পারে। একটা মা ইলিশ চার থেকে পাঁচ লক্ষ ডিম ছাড়ে। সেগুলো যদি আমরা না ধরি,তাহলে প্রচুর জাটকার জন্ম হবে।’
আর জাটকার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ, রয়েছে প্রচুর জনপ্রিয়তাও। ২০০৩ সালের দিক থেকে বাংলাদেশে ইলিশ সংরক্ষণের কার্যক্রম চলছে।
কিন্তু নিষেধাজ্ঞার জেলেদের জীবন ও জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলো। পরে ওই সময়টাতে তাদের জন্য সহায়তার উদ্যোগ নেয় সরকার। সে অনুযায়ী কিছুদিন সেটি দেয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন, সরকারের মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের ইলিশ বিষয়ক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান। তিনি বলছেন, ‘যে সময়টুকু তারা মাছ ধরতে পারে না, সে সময়টুকুতে তাদের প্রণোদনা হিসেবে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। যার ফলে তারা নিজেরাই ইলিশ রক্ষায় মোটিভেটেড হয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক নিয়ামুল নাসের বলেছেন, ‘যে কাজ ২০০৩ সাল থেকে আমরা করছি, তার ইমপ্যাক্টটি কিন্তু খুব ভালোভাবে এখন দেখা যাচ্ছে। এদের বিচরণভূমি বেড়ে গেছে। এখন পদ্মা মেঘনা যমুনা ব্রহ্মপুত্র এমনকি হাওড় পর্যন্ত তাদের পাওয়া গেছে। তার মানে সংরক্ষণের প্রভাব পড়েছে।’
মৎস্য অধিদফতরের ইলিশ পর্যবেক্ষণ সেলের হিসেবে ১৫ বছর আগে দেশের ২৪টি উপজেলার নদীতে ইলিশের বিচরণ ছিল। এখন দেশের অন্তত ১২৫ টি উপজেলার নদীতে ইলিশের বিচরণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।