অনলাইন ডেস্ক: দেশের চিকিৎসকদের মধ্যে অনেককেই প্রেসক্রিপশন ও ভিজিটিং কার্ডে বিচিত্র সব ডিগ্রি লিখতে দেখা যায়। এর মধ্যে পিজিটি, বিএইচএস, এফআরসিপি, এফআরএইচএস, এফআইসিএ, এফআইসিএস, এফএএমএস, এফআইএজিপি’র মতো বিভিন্ন ডিগ্রি ও ট্রেনিং কোর্সও রয়েছে। এসব ডিগ্রি ও কোর্সকে প্রতারণামূলক উল্লেখ করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে। ওই নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, এসব ডিগ্রি কোনও স্বীকৃত চিকিৎসা শিক্ষাগত যোগ্যতা কিংবা বিএমডিসি স্বীকৃত নয়। আর এসব ডিগ্রিকে সম্পূর্ণ ভুয়া বলে অভিহিত করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ট্রেজারার ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল।
এর ধরনের ভুয়া ডিগ্রি রোধে ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল বিএমডিসি থেকে একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়ে, কোনও কোনও নিবন্ধিত চিকিৎসক/দন্তচিকিৎসক তাদের সাইনবোর্ড, প্রেসক্রিপশান প্যাড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে পিজিটি, বিএইচএস, এফসিপিএস (পার্ট-১), (পার্ট-২), এমডি (ইনকোর্স) (পার্ট-১)-(পার্ট-২), (থিসিস পর্ব), (লাস্ট পার্ট), কোর্স কমপ্লিটেড (সিসি), এম (ইনকোর্স) (পার্ট-১)-(পার্ট-২), (থিসিস পর্ব) (লাস্ট পার্ট), কোর্স কমপ্লিটেড (সিসি) ইত্যাদি এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া ফেলোশিপ এবং ট্রেনিংসমূহ যেমন এফআরসিপি, এফআরএইচএস, এফআইসিএ, এফআইসিএস, এফএএমএস, এফআইএজিপি ইত্যাদি উল্লেখ করছেন, যা কোনও স্বীকৃত চিকিৎসা শিক্ষাগত যোগ্যতা নয় এবং বিএমডিসি থেকে স্বীকৃত নয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে—পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি না থাকার পরও কেউ কেউ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সার্জারি বিশেষজ্ঞ, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ, নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ, গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাদের পরিচিতি দিয়ে তা প্রেসক্রিপশান প্যাড, সাইনবোর্ড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে ব্যবহার করেন, যা জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণামূলক কাজ হিসেবে গণ্য। একইসঙ্গে সব নিবন্ধিত চিকিৎসক/দন্ত চিকিৎসককে বিএমডিসির স্বীকৃতবহির্ভূত কোনও ডিগ্রি, পদবি, ফেলোশিপ, ট্রেনিং ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ স্বীকৃত পোস্ট গ্র্যাজুয়েশান ডিগ্রি না থাকার পরও নামের পর বিশেষজ্ঞ পদবি ব্যবহার না করার নির্দেশও দেওয়া হয়।
বিএমডিসি সূত্র জানায়, বিএমডিসি স্বীকৃত দেশি ডিগ্রির বাইরে দেশের বাইরে থেকে যেসব চিকিৎসক বিভিন্ন উচ্চতর ডিগ্রি এবং ফেলোশিপ নিয়ে আসেন, তাদের সে সব ডিগ্রি ২০১১ সাল থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এপ্রিল ও অক্টোবর দু’বার এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বাইরে থেকে ফেলোশিপ করে আসা বা উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে আসা কোনও চিকিৎসক প্রথমে তার ডিগ্রি অনুমোদনের জন্য বিএমডিসির কাছে আবেদন করেন।এরপর তার তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে পরীক্ষায় পাসের মাধ্যমেই এই ডিগ্রি ব্যবহারের অনুমোদনে মেলে। বিএমডিসি নির্ধারিত ৫ সদস্যের কমিটি এই পরীক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত থাকেন। দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনও উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করে আসা চিকিৎসক পরীক্ষায় ফেল করলে তার ডিগ্রি বাতিল বলে গণ্য হয়।
বিএসএমএমইউ-এর ট্রেজারার ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল বলেন, ‘বিএমডিসি স্বীকৃত ডিগ্রি দেখেই সত্যিকারের চিকিৎসক চেনা সম্ভব। বিএমডিসি এমবিবিএস এবং বিডিএস ডিগ্রিধারীদের জন্য বিএমডিসি এফসিপিএস, পিএইচডি, এমডি, এমএস, এমফিল, আর কিছু ডিপ্লোমাকে অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া যে ডিগ্রিগুলো চিকিৎসকরা তাদের নামের সঙ্গে ব্যবহার করেন, তা বেআইনি। একটা সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরাও বিডিএস আপার, লোয়ার এসব শব্দ ব্যবহার করত। এগুলো পুরোপুরি ভুয়া।’
অনুমোদনহীন ডিগ্রির ব্যবহার
বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০-এর ২৯ (১) ধারায় ভুয়া পদবি, ডিগ্রি ইত্যাদি ব্যবহার নিষিদ্ধের শাস্তির ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অধীন নিবন্ধনকৃত কোনও মেডিক্যাল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এমন কোনও নাম, পদবি, বিবরণ বা প্রতীক এমনভাবে ব্যবহার বা প্রকাশ করবেন না, যার ফলে তার কোনও অতিরিক্ত পেশাগত যোগ্যতা আছে বলে কেউ মনে করে, যদি না তা কোনও স্বীকৃত মেডিক্যাল চিকিৎসা শিক্ষা যোগ্যতা বা স্বীকৃত ডেন্টাল চিকিৎসা শিক্ষা যোগ্যতা হয়ে থাকে।
উপধারা (১)-এর এই বিধান কেউ লঙ্ঘন করলে তার শাস্তি হিসেবে উপধারা (২)-এ বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি উপধারা (১)-এর বিধান লঙ্ঘন করলে, তা হবে একটি অপরাধ এবং তার জন্য তিনি ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অপরাধ অব্যাহত থাকলে, প্রত্যেকবার পুনরাবৃত্তির জন্য কমপক্ষে ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা বর্ণিত দণ্ডের অতিরিক্ত হিসেবে দণ্ড পাবেন।
বিএমডিসির রেজিস্ট্রার ডা. মো. জাহেদুল হক বসুনিয়া বলেন, ‘আমাদের দেশের চিকিৎসকরা তাদের নামের সঙ্গে যেসব ডিগ্রি লিখবেন, সেগুলো অবশ্যই বিএমডিসি থেকে স্বীকৃত হতে হবে। কেউ যেন অনুমোদনহীন কোনও ডিগ্রি ব্যবহার না করে এর জন্য আমরা সতর্ক করেছি। আমরা চিকিৎসকদের সচেতনতার ব্যাপারেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। অবশ্য এখনও পর্যন্ত এর জন্য কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়নি।’
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এখন নিজেদের নামের পাশের চিকিৎসকদের বাড়তি ডিগ্রি ব্যবহারের প্রবণতা অনেক কমে এসেছে। ঢাকা এবং সারাদেশের চিকিৎসকদের আমরা বিএমডিসির নির্দেশনা মেনে চলতে বলেছি। কিছু সিনিয়র চিকিৎসক হয়ত এখনও এটা ব্যবহার করছেন। বহু দিনের অভ্যাস তো, বদলাতে সময় লাগে। তবে আমার বিশ্বাস চিকিৎসকদের সচেতনতার কারণে বাড়তি ডিগ্রি আর ব্যবহৃত হবে না।’