অনলাইন ডেস্ক: রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে করা নাশকতার মামলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের চার নেতা-কর্মীকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করলেও বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত তা নাকচ করে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
আসামিরা হলেন তারেক হোসেন খান শামীম (৪৮), খোরশেদ আলম (৩৫), আবদুস সামাদ সজীব (২৯) ও শফিকুল ইসলাম শফি (৪৩)।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ও থানা যুবলীগের আহ্বায়ক শাহ আলম বলেন, তারেক তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের অর্থ সম্পাদক। আর খোরশেদ ওই ওয়ার্ডের ২ নম্বর ইউনিট আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আসামি শফিকুলের স্ত্রী কাজল রেখার দাবি, তাঁর স্বামী তেজগাঁও ২৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ কর্মী। আর তিনি তেজগাঁও ২৫ নম্বর যুব মহিলা লীগের সভাপতি। আর আসামি সজীবও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
তবে রিমান্ড আবেদনে পুলিশ বলেছে, এই চারজন বিএনপি ও জামায়াতের সক্রিয় সদস্য।
মামলার নথিপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ৮ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার বিজি প্রেসের খেলার মাঠের সামনে থেকে ককটেলসহ তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক সোহাগ মোল্লা এবং ছাত্রদলের সহসভাপতি আতিকুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে এ ঘটনায় যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরবসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০-৩৫ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে নাশকতার ষড়যন্ত্র ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়।
এ মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ওই চারজনকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মারগুব তৌহিদ। ওই আবেদনে বলা হয়েছে, এই চার আসামি বিএনপি ও জামায়াতের সক্রিয় সদস্য। আসামিরা সরকারের বিরুদ্ধে নানা প্রকার ষড়যন্ত্র করেছে। সরকারি সম্পদ ও জানমালের ক্ষতি করে শান্তিপ্রিয় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য নাশকতার পরিকল্পনা করছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।
অবশ্য পুলিশের অভিযোগ অস্বীকার করেন আসামিদের আইনজীবী এ কে এম শরীফ উদ্দিন। একই সঙ্গে এই চারজন যে বিএনপি কিংবা জামায়াতের রাজনীতি করেন না, সে ব্যাপারে দালিলিক প্রমাণ আদালতের কাছে উপস্থাপন করেন। লিখিতভাবে আদালতে তিনি জানান, চারজনই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন। আদালত উভয় পক্ষের কথা শুনে আসামি তারেক, খোরশেদ, সজীব ও শফিকুলকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠান।
আদালত চত্বরে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সদস্য খালেদ মোহাম্মদ কায়সার বলেন, পুলিশ যে চারজনকে বিএনপি-জামায়াত বলে গ্রেপ্তার করে রিমান্ড চেয়েছে, তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ নেতা-কর্মী। তাঁর অভিযোগ, অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দলের জের ধরে আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা এখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করাচ্ছেন।
আর শফিকুলের স্ত্রী যুবলীগ নেত্রী রেখা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কেন বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলায় গ্রেপ্তার হবেন? কেন জেল খাটবেন?
এই চারজনকে গ্রেপ্তারের খবর জানেন না বলে দাবি করেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা যুবলীগের আহ্বায়ক শাহ আলম। তাঁর দাবি, যুবলীগ নেতা তারেকসহ গ্রেপ্তার অন্যরা তাঁদের সঙ্গে মিছিল-মিটিংয়ে থাকেন না। একই রকম কথা বলেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শফিউল্লাহ।
আদালতে চারজন আসামির আইনজীবীর দেওয়া বক্তব্য এবং তাঁদের সম্পর্কে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দেওয়া তথ্য জানানোর পর এসআই মারগুব তৌহিদ দাবি করেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এই চারজন আসামি বিএনপি-জামায়াতের কর্মী কি না, সে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। শুধু বলেছেন, অনেকেই বিপথগামী হতে পারেন।
সূত্র: প্রথম আলো।