নিজেস্ব প্রতিবেদক: আশাশুনি উপজেলার ০২ নং বুধহাটা ইউনিয়নের ০৯ নং ওয়াডে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র ও অসহায় মানুষের মাঝে ১০টাকা কেজি দরে চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের পর এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে। হাট-বাজার থেকে শুরু করে চায়ের স্টল গুলোতে মূল আলোচনার বিষয় এখন ০৯ নং ওয়ার্ডের যে সকল হতদরিদ্ররা রেশন কার্ড থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এবং যে সকল বৃত্তবানরা রেশন কার্ড পেয়েছেন তাদের নামের তালিকা নিয়ে। অতিদরিদ্রদের কার্ড না দিয়ে অধিকাংশ রেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে জামাতের উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের শীর্ষ স্থানীয় নেতা কর্মি ও সম্পদশালীদেরকে। দুস্থ ও অসহায়দের সস্তায় চাউল দেওয়ার উদ্দেশ্যে সরকার রেশন কার্ড প্রথা চালু করলেও সরকার ও মন্ত্রালয়ের কঠোর হুশিয়ারী উপেক্ষা করে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ০৯ নং ওয়ার্ড মেম্বর মতিয়ার রহমান কার্ড বিতরণ করেছেন জামায়াত নেতা, নিজ দলীয় ও অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে। অভিযুক্ত ওয়ার্ডের নৈকাটি গ্রাম ঘুরে দেখাগেছে, আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারী জি ফুল বাড়িয়া মাদ্রাসার শিক্ষক নাশকতাসহ একাধিক মামলার আসামি নৈকাটি গ্রামের মোঃ মোশাররফ হুজুরের ছেলে প্রতাপনগর মাদ্রাসার শিক্ষক মোঃ মামুন হোসেন পেয়েছেন ১০টাকা কেজি দরে চাউল ক্রয়ের রেশন কার্ড (কার্ড নং-২০৬৭)। মামুন হোসেনের মা জোবেদা খাতুন নৈকাটি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষিকা ও উপজেলা মহিলা জামায়াতের শীর্ষ স্থানীয় নেত্রী। একই গ্রামের মৃত: নুর মুহম্মদ গাজীর পুত্র বুধহাটা ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি, নাশকতাসহ একাধিক মামলার আসামি (বর্তমান কারাগারে) নৈকাটি মাদ্রাসার শিক্ষক মাও: মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ গাজী পেয়েছেন রেশন কার্ড (কার্ড নং-১৯৫৩)। অনুরুপ ভাবে রেশন কার্ড পেয়েছেন মৃত: ইনতাজ মোড়লের পুত্র সাবেক ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি মোঃ ইয়াছিন আলী মোড়ল (কার্ড নং-২০৫২)। বাদ যায়নি তার তিন সহদর মহাসিন মোড়ল, ফেরদাউস ম্ড়োল ও হারুনুর রশিদ (কার্ড নং- যথাক্রমে ২০৭০, ২০২৪ ও ১৮৯৭)। মাও: আব্দুল ওয়াদুদ গাজীর শ্বাশুড়ি জামায়াতের সক্রিয় সদস্যা, একাধিক মামলার আসামি নৈকাটি গ্রামের বাবুর মা ফিরোজা পেয়েছেন কার্ড(কার্ড নং-১৯৪৩)। কার্ড পেয়েছেন মাও: আব্দুল ওয়াদুদ গাজীর তিন মামা শ্বশুর জামায়াতের সক্রিয় সদস্য মৃত: জাফর মোড়লের পুত্র সফিকুল মোড়ল, ছাইফুল মোড়ল ও নাজমুল মোড়ল (কার্ড নং- যথাক্রমে ২০৬১, ১৯৪২ ও ২০৫৭)। কার্ড দেওয়া হয়েছে ১৫ বিঘা ঘের মালিক মোঃ শাহাদাৎ আলী মোড়লের পুত্র জাহাঙ্গীর আলমকে (কার্ড নং-২০৬৬)। নৈকাটি পশ্চিম পাড়ার পুলিশের চাকরী জীবির পিতা মৃত: আব্দুর রহমান সরদারের পুত্র নেছার সরদার পেয়েছেন রেশন কার্ড (যার নং-২০৫৫)। এমনকি নিজ দলিয় ইসমাইল সরদারের পুত্র রুহল আমিন সরদারকে দেওয়া হয়েছে ২টি কার্ড (যার নং-২০৫৪ ও ১৯৩৯)। এছাড়া বয়োস্ক ভাতার পাশাপাশি রেশন কার্ড পেয়েছেন মৃত: আনছার মোড়লের পুত্র করিম মোড়ল, মৃত: ইসমাইল মি¯ী¿র পুত্র মোস্তাক মিস্ত্রী ও হরমুজ গাজীর পুত্র রশিদ গাজী (যাদের কার্ড নং- যথাক্রমে ১৯১৪, ১৯২৫ ও ১৮৪৭) একই ভাবে ওয়ার্ডের রেশন কার্ড পাওয়ার যোগ্য বহু অসহায় দুস্থদের বঞ্চিত করে বহু ধনী শ্রেণির লোককে দেওয়া হয়েছে এই রেশন কার্ড। নৈকাটি উত্তর পাড়ার সবচেয়ে দুস্থ ও অসহায় ৪টি পরিবারের ৩টি পরিবার মৃত: রহিম সরদারের স্বামী পরিত্যক্তা কন্যা মাহাফুজা খাতুন(৬৫), আফাজদ্দীন সরদারের পুত্র কুরমান সরদার(৪৫), মৃত: ঈশার আলী মোড়লের পুত্র সফিকুল মোড়ল রেশন কার্ড পাওয়ার যোগ্য হয়েও তারা কার্ড পাননি। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বব মতিয়ার রহমান জানান, ওগুলো ভুল বসত হয়েগেছে। বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলি আ ব ম মোছাদ্দেক জানান, আমি বার বার আমার ইউপি সদস্যদেরকে বলেছি সরকারি অনুদান বিতরণে কোন রকম অনিয়ম যেন না হয়। সব সময় আমার নির্দেশ ছিলো গরিবের হক তাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া জন্য। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুষমা সুলতানা জানায়, পত্রিকায় নিউজ দেখে রেশন কার্ড বিতরণে অনিয়মের বিষয়টি জানতে পারলাম। বুধহাটা ইউপির ০৯ ওয়ার্ডের রেশন কার্ড বিতরণে অনিয়মের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তদন্ত টিম গঠন করা হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট