রূপে গুণে কোনো অংশেই কমতি নেই বিদ্যা সিনহা মিমের। কমতি ছিল শুধু চলচ্চিত্রের নায়িকা হয়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়া। সেটিও এখন মুঠোয় বন্দি করে নিয়েছেন তিনি। নাটকের অভিনেত্রী এবং মডেল হিসেবে তার সাফল্যের ইতিহাস রচিত হয়েছে আগেই। বড় পর্দার রেসে যুক্ত হয়েছেন আগেই। সাফল্য আসি আসি করেও যেন আসছিল না।
এবার সেটিও হাতের মুঠোয়। শাকিব খানের সঙ্গে ‘আমি নেতা হব’ মুক্তির পর হাতে আসছে একের পর এক নতুন ছবির প্রস্তাব। সম্প্রতি অভিনয় করছেন কলকাতার নায়ক জিতের বিপরীতে। বিস্তারিত লিখেছেন অনিন্দ্য মামুন
বিদ্যা সিনহা সাহা মিম। কেউ বলে ডালিউড কুইন। কেউ আবার রূপে মুগ্ধ হয়ে খেতাব দিয়ে দেন স্বপ্নকন্যা। নজরকাড়া চাহনির পাশাপাশি ঠোঁটের কোণে সর্বদা লেগে থাকে মুক্তো ঝারানো হাসির আভা। যেন দেবী সরস্বতীরই প্রতিমূর্তি। এখন দ্যুতি ছড়াচ্ছেন ঢাকাই ছবিতে।
যে স্থানে গত বছরও মিমকে ভাবা হয়নি সেখানেই এখন তিনি অবস্থান করছেন। একের পর এক নতুন চমক দিয়ে যাচ্ছেন। কিছু চমকের অপেক্ষায়ও রেখেছেন ভক্তদের। যদিও শোবিজ অঙ্গনে পা রাখার পর থেকেই ধীরে ধীরে মডেলিং ও অভিনয়ে সাবলীল পারফর্ম দিয়ে মিডিয়ায় বেশ আলোচিত হয়ে আসছিলেন তিনি। তবে লক্ষ্য ছিল বড় পর্দা। সেখানে খুব একটা উপস্থিতি ছিল না তার। স্বপ্ন দেখে গেছেন, করে গেছেন পরিশ্রমও।
সঠিক পথে পরিশ্রম যে সৌভাগ্যের প্রসূতি এ কথাটি মিমের বেলায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রমাণিত। তাই পরিশ্রমের ওপর ভর করেই ছুটছেন মিম; পাচ্ছেন সাফল্যও। নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মনের মধ্যে পুষে রেখেছিলেন। ক্রমেই সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে হেঁটেছেন পরিকল্পনামাফিক। স্বপ্ন ছুঁতে বা চিত্রনায়িকার খেতাব পেতে বেশি সময় লাগেনি। তার চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হয়ে ওঠার প্রথম সিঁড়ি ছিলেন বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। ব্যাস আর কী লাগে! প্রয়াত এ লেখকের পরিচালনায় ২০০৮ সালে ‘আমার আছে জল’ ছবিতে অভিনয় করার পর থেকেই শুরু তার জার্নি। পরে জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘আমার প্রাণের প্রিয়া’ নামের ছবিতে দেশের শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেন। ২০০৯ সালে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পরই মিমের লিপে ‘কি জাদু করেছ বল না, ঘরে আর থাকা যে হল না’ গানটি বাংলা ছবির দর্শকদের মুখে লেগে থাকে।
এরপরও বারবার পেছনে তাকাতে হয়েছে এ নায়িকাকে। ফিরে যেতে হয়েছে ছোট পর্দায়। এরপর ২০১৪ সালে ‘জোনাকির আলো’ ও ‘তারকাঁটা’ নামে দুটি ছবি মুক্তি পায়। সমালোচকদের কাছে ছবি দুটি প্রশংসা কুড়ালেও ব্যবসায়িকভাবে সাফল্য দেখাতে পারেনি। তাতে কী? যা হওয়ার তা ঠিকই হয়েছে। ‘জোনাকির আলো’ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার হাতে উঠে যায় মিমের। আর সেই সঙ্গে নায়িকা হিসেবে দর্শকদের হৃদয়ে স্থান করে নেন।
পরের বছর ২০১৫ সালে ‘পদ্ম পাতার জল’ ও যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘ব্ল্যাক’ মুক্তি পেলেই আপাদমস্তক নায়িকার খেতাব মিলে তার ললাটে। পরে ‘সুইটহার্ট’, ‘ভালোবাসা এমনই হয়’, ‘আমি তোমার হতে চাই’ ছবিগুলো মুক্তি পায়। এখন মিম পুরোপুরি সিনেমা নিয়েই ব্যস্ত। তবে মানহীন কাজের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই তার। বছরে একাধিক ছবি মুক্তির চেয়ে ভালো মানের একটি ছবিতে অভিনয়ের পক্ষে এ তারকা। তাই তো অভিনয়ের ব্যাপারে ভেবেচিন্তে নিজের সিদ্ধান্ত জানাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ছবির প্রস্তাব তো অনেক আসে। কিন্তু নিজের চরিত্রের সঙ্গে না যাওয়াতে সেগুলোতে অভিনয় করা হয় না। সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন নেই আমার। ভালো কাজ দিয়ে সবার মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।’ ২০১৮ সালের শুরু থেকেই মিমের বৃহস্পতি তুঙ্গে। বছরের শুরুর দিকেই দীর্ঘ আট বছর বিরতির পর শাকিব খানের বিপরীতে ‘আমি নেতা হব’ ছবিটি মুক্তি পায়। এ ছবির রেশ কাটতে না কাটতেই গত সপ্তাহে মুক্তি পেল ‘পাষাণ’ ছবিটি।
এ ছাড়া মিমের নতুন আরও একটি চমক হচ্ছে, কলকাতার নায়ক জিতের বিপরীতে ‘সুলতান’ ছবিতে অভিনয় করছেন তিনি। এ ছবিটি আগামী ঈদে মুক্তির লক্ষ্যে নির্মিত হচ্ছে। সব ঠিক থাকলে এ ছবিটি মিমের ভাগ্য বদলের ছবি হতে পারে বলেও মন্তব্য করছেন অনেকে। জিত-মিমের পর্দার রোমান্স দেখতে এখন কেবল দর্শকদের অপেক্ষা করতে হবে আগামী ঈদ পর্যন্ত। এদিকে ‘দাগ’ নামের একটি ছবিও মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
পর্দায় রোমান্স করে বেড়ানো এ নায়িকা বাস্তব জীবনেও কি প্রেম করছেন? এমন প্রশ্ন অনেক ভক্তের মনেই এখন উঁকি দেয়। এ প্রশ্ন শুনেই হেসে উঠলেন মিম। বললেন, ‘আমার প্রেমে তো অনেকেই পড়েছেন। আমিই প্রেমে সায় দেয়ার মতো সময় পাইনি। কাজের সঙ্গেই আমার প্রেমের সম্পর্ক। কোন সিনেমা ভালো লাগল, সেই সিনেমার হিরোর প্রেমে পড়েছি। কোন সিনেমার গল্প ভালো লাগল, তাই নিয়ে ভেবেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে এটাই তো প্রেম।
এর বাইরে প্রেম করার সময় কোথায়?’ তাহলে বিয়ে করছেন কবে? ‘আপাতত বিয়ে নিয়ে তেমন কোনো ভাবনা নেই, আরও তিন-চার বছর যাক না। মনের মতো কিছু চলচ্চিত্রে কাজ করি। যে কাজগুলো আমাকে দীর্ঘদিন দর্শকের মাঝে বাঁচিয়ে রাখবে’- বললেন মিম। নিজের জন্য মঙ্গল এমন বিষয়গুলো কেমন বোঝেন আপনি? জবাবে মিম বলেন, ‘আমি আসলে জীবনকে খুব সহজ করে দেখি। জটিল কোনো কিছুই আমার ভালো লাগে না।
যে কারণে নিজের মঙ্গল হয় এমন কাজ অর্ধেক হলেও বুঝি। যদি কোনো বিষয় খুব বেশি জটিল মনে হয় তখন মায়ের সহযোগিতা নিই। কারণ আমার বেশিরভাগ কাজেরই পরামর্শদাতা তিনি। বলা যায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমি মাকে ছাড়া একেবারেই অচল। তাই আমার সব কাজে মা-ই থাকেন সবচেয়ে বেশি।’