নাবিলা সাদিয়া। সোশাল হ্যান্ডেলের ছবি দেখলে মনেই হবে না এই মেয়ে বাংলাদেশের। ছবিতে পশ্চিমা প্রলেপ। তথ্য উপাত্তের স্থানে একটি বলিউড ফিল্মের অভিনেত্রী হিসেবে কাজের উল্লেখ। ‘আর ইউ বাংলাদেশি?’ এমন প্রশ্ন পাঠানো হয়েছিল নাবিলা সাদিয়ার সোশাল হ্যান্ডেলের মেসেঞ্জারে। ওদিক থেকে উত্তর এলো ‘ইয়েস’।
এরপরই বিস্তর জানা গেল নাবিলা সম্পর্কে। বাংলাদেশের উত্তর জনপদের ছোট শহর সৈয়দপুরে শৈশব-কৈশোর কাটানো নাবিলা এখন অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় থাকেন। ‘আমার জন্ম যশোরে হলেও যশোরের কিছুই মনে নেই। আমার বেড়ে ওঠা, পড়াশোনার শুরু সবকিছুই সৈয়দপুরে। ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত সেখানেই আমার পড়াশোনা এরপর চলে আসি অস্ট্রেলিয়ায়।’ অস্ট্রেলিয়া থেকে কথাগুলো বলছিলেন নাবিলা সাদিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ ক্যানবেরায় ব্যাচেলর্স ইন ইনফরমেশন টেকনোলজিতে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই সেখানের একটি মডেল এজেন্সিতে যুক্ত হন নাবিলা সাদিয়া। একই সাথে একটি নাচের প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। ক্যানবেরা স্কুল অব বলিউড ড্যান্সিং-এর মেন্টর হিসেবে কাজ করছেন তিনি। মডেলিং ক্যারিয়ারকে যখন ধীরে ধীরে এগিয়ে নিচ্ছিলেন তখনই বলিউডের নতুন একটি ছবিতে কাজের প্রস্তাব আসে।
নাবিলা বলেন, আমি স্ক্রিন টেস্ট দিয়ে উত্তীর্ণ হই। ছবিটির পরিচালক দেবেশ প্রতাপ সিং। ছবিটি গ্যাংস্টার ও আন্ডার ওয়ার্ল্ড নিয়ে। যেখানে একজন নায়কের বিপরীতে দুজন মেয়ের চরিত্র। রিনা ও মিনা চরিত্রের মধ্যে আমার প্রথমে মিনা চরিত্রে কাজ করার কথা থাকলেও হিন্দি টানের কারণে আমাকে রিনা চরিত্র করতে হয়।’
পারিশান পারিন্দা নামের এই ছবিটিতে আন্তর্জাতিক শিল্পীদের নিয়ে কাজ করা হয়। যার মধ্যে সিঙ্গাপুর ও নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বেশ ক’জন শিল্পী অভিনয় করেন। ‘এই ছবিতে অভিনয়ের পরই অস্ট্রেলিয়ায় আমার বিভিন্ন কাজের অফার আসতে থাকে।’ বলেন নাবিলা। ছবিটির শুটিং গত বছর শেষ হলেও ভারত ও অস্ট্রেলিয়ায় মুক্তি পায় চলতি বছরের মার্চে।
ভারতের শীর্ষ টেলিভিশন জিটিভি অস্ট্রেলিয়ায় উপমহাদেশের প্রতিযোগীদের নিয়ে আয়োজন করে ‘সুপারস্টার অস্ট্রেলিয়া’ যেখানে নাবিলা সাদিয়া শীর্ষ দশে অবস্থান করেন। এ ছাড়াও সুন্দরীদের প্রতিযোগিতা ‘মিস ইন্ডিয়া ওয়ার্ল্ডওয়াইড ২০১৭’ তে প্রথম রানার আপ হন। এই অর্জনের কারণে বলিউড অভিনেতা জন আব্রাহামের সাথে ডিনার পার্টিতে অংশ নেওয়া হয়। জন আব্রাহামের সাথে একটি গানের নাচে অংশ নেন নাবিলা।
নাবিলা সাদিয়া ইতিমধ্যে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন। কাজ করছেন অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়াতে। কিছুদিন আগেই বাংলাদেশ ঘুরে গিয়েছেন। দুই মাসের সফরে বেশকিছু কাজও করেছেন তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজ হলো আদনান আল রাজীবের নির্দেশনায় গ্রামীণফোন ফোরজির টেলিভিশন বিজ্ঞাপন, ইশতিয়াক আহমেদের নির্দেশনায় একটি কবিতার দৃশ্যায়নের মডেল হয়েছেন, যেখানে তরুণ অভিনেতা ইভান সাইর তাঁর বিপরীতে ছিলেন। এ ছাড়াও ভিকি জায়েদের পরিচালনায় একটি নাটকেও অভিনয় করেছেন নাবিলা।
শৈশব থেকেই সৈয়দপুরের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা সাদিয়া নাবিলা নাচ-গানে ছিলেন অনন্য। যেকোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তাঁর ছিল উজ্জ্বল উপস্থিতি। ফের বাংলাদেশেই ফিরতে চান তিনি। এ দেশের শোবিজে নিজেকে মেলে ধরতে চান এই অভিনেত্রী ও মডেল। নাবিলা সাদিয়া বলেন, ‘আমি যেহেতু মিডিয়াতে কাজ করছি, সেই কাজটি যদি আমার নিজ দেশে করতে পারি তাহলে তো ফিরবোই।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কয়েকটি কাজ করেছি, আমার ভালো লেগেছে। অবশ্যই আমার ফিল্মে কাজ করার ইচ্ছে। এমন অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে কিংবা সুযোগ হলে আমি বাংলাদেশেই স্থায়ী হতে চাই। হাজার হলেও আমার নিজের দেশ, নিজের দেশে কাজ করার বিষয়টি নিশ্চই অনেক আনন্দের।’