তালা প্রতিনিধি: সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফরিদ হোসেন এর বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তালা উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় সভাপতিত্ব করেন তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার। তিনি জানান, “উপজেলা সমন্বয় সভা চলাকালে একজন ইউপি চেয়ারম্যান ও একাধিক সরকারি কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে, এমনকি মারতে উদ্যত হন ইউএনও ফরিদ হোসেন। তাঁর আকস্মিক উচ্ছৃঙ্খল ও মারমুখী আচরণে হতভম্ব হয়ে যান সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিসহ সভায় উপস্থিত সকলে। টিআর, কাবিখা ও এডিপি প্রকল্প বিষয়ে বক্তব্য রাখায় ইউএনও মো. ফরিদ হোসেন জনপ্রতিনিধিদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।” তিনি এ’ প্রতিবেদককে জানান, “বৃহস্পতিবার সকালে তালা উপজেলা পরিষদ হলরুমে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত চলছিল। সভায় উপজেলা পর্যায়ের সকল সরকারি কর্মকর্তা এবং ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ’র চেয়ারম্যানসহ ঠিকাদারী ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। সভার মাঝ পর্যায়ে চলতি অর্থ বছরের এডিপি প্রকল্পসমূহ পাশ হবার প্রাক্কালে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম- তাঁর দপ্তরের জন্য একটি বাথরুম বিধি অনুযায়ী দাবি করলে ইউএনও মো. ফরিদ হোসেন তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও অপদস্থ করেন। একই সময় উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার আলহাজ্ব মো. হাদীউজ্জামানকে অনুরুপ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ অপদাস্থ করেন। এসময় উপজেলার ২নং নগরঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিপুসহ কয়েকজন চেয়ারম্যান টি.আর ও কাবিখা প্রকল্প পাশ হবার বিষয়ে বক্তব্য রাখলে ইউএনও তাদের উপর চড়াও হয়ে গালিগালাজ করেন। পরবর্তীতে ধানদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ’র চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর হোসেন- তাঁর ইউনিয়নে ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়া অগ্রিম প্রকল্পগুলো সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পাশ করানোর জন্য ইউএনও’র কাছে দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখলে “তুমি কে” বলে চেয়ারম্যানকে ধমক দেন। এসময় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর নিজেকে ধানদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বলে পরিচয় দিলে ইউএনও তেড়ে গিয়ে চেয়ারম্যানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মারতে জন্য উদ্যত হয়। এসময় সভায় উপস্থিত দু’জন চেয়ারম্যান ইউএনও’র নগ্ন হামলা ঠেকিয়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইউএনও ফরিদ হোসেন সভায় উপস্থিত সকলকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ ডাকাডাকি করতে থাকলে আমি (উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার) সকল সরকারি কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানদের সম্মান রক্ষার্থে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। এমতাবস্থায় একপর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদ হোসেন’র মধ্যকার উত্তেজনাকর পর্যায়ে পৌছলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। ঘটনায় গোটা উপজেলা সদরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার ঘটনাটি অস্বীকার না করে বিষয়টি এড়িয়ে যান। এব্যপারে জানার জন্য ধানদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন’র মোবাইলে ফোন করলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। উপজেলার ০২নং নগরঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামার লিপু- ইউএনও’র ন্যাক্কারজনক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। ০৯নং খলিশখালী ইউপি চেয়ারম্যান সাংবাদিক মো. মোজাফ্ফর রহমান ইউএনও’র আক্রমনের ঘটনা স্বীকার করেন এবং ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে সরকারি কাজ নির্বিঘেœœ করা যায় না।
উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার বলেন, “তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদ হোসেন’র বিতর্কিত একাধিক কাজের কারণে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
এদিকে, বিগত ১৪মে বিকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদ হোসেন তালার ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সংগঠন “তালা ক্লাব” ও তালা বাজার বণিক সমিতির কক্ষ তালাবদ্ধ করে দিয়ে “এই তালা যে খুলবে তার হাত কেটে নেয়া হবে” বলে প্রকাশ্যে হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। এতে তালার আপামর মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এঘটনায় তালার সুশীল সমাজ নেতৃবৃন্দ স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ’র নিকট অভিযোগ করলে তিনি অভিযোগকারীদের সাথে বৈঠকে বসেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল হান্নানকে সাথে নিয়ে সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ তালা ক্লাব’র বদ্ধ তালা খুলে দেন।
পরবর্তীতে সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ উপজেলা চেয়ারম্যান’র কক্ষে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে রুদ্ধদার বৈঠক করেন।
এঘটনায় তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদ হোসেন বলেন, “চেয়ারম্যান সাহেবরা প্রকল্প দিতে অনেক দেরি করেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান একক স্বাক্ষরে প্রকল্পে দিচ্ছেন। এগুলো জেলায় পাঠানো হলে তা আবার ফেরত আসছে। এটা টিআর প্রকল্প, উনারা এগুলোর টাকা তুলে নিয়ে লুটপাট করে খান। এবছর জেলা কমিটিতে অনুমোদন হয় নাই। জেলা কমিটি অধিকতর যাচাই-বাছাই করে প্রকল্প গ্রহণ করার জন্য বলেছেন। আমি মিটিংয়ে এগুলো বলেছি। তখন ধানদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমার সামনে জেলা প্রশাসক সাহেব সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। এসময় আমি তার প্রতিবাদ করেছি মাত্র। মূল কথা হলো আমি কেন প্রকল্প লুটপাটের বিষয়ে ধরবো। এখানে মারতে উদ্যত ও ধমক এক কোন বিষয় না।
এবিষয়ে তালা-কলারোয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, ইউএনও ও চেয়ারম্যানদের সাথে অপ্রীতিকর ঘটনার কথা শুনেছি। এ বিষয়ে ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাত করবেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট