দেশের খবর: পুলিশের বিতর্কিত ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা। প্রতিবেদনে ডিআইজি মিজানের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ জারির সুপারিশ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ৭ জুন অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী কমিশনে তার প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দেন।
দুদক সূত্র বলছে, তার সুপারিশের আলোকে শিগগিরই ডিআইজি মিজানের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দেয়া হচ্ছে। ডিআইজি মিজানের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে ৩ মে দুদকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজের কোনো অবৈধ সম্পদ নেই দাবি করলেও দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। তবে এ ব্যাপারে দুদকের ওই অনুসন্ধান কর্মকর্তা কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এ বছরের জানুয়ারিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে স্ত্রী-সন্তান রেখে আরেক নারীকে জোর করে বিয়ে ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই এক নারী সংবাদ পাঠিকাকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
পরে তাকে ডিএমপি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি ফেব্রুয়ারিতে তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
ডিআইজি মিজান পুলিশের উচ্চপদে থেকে তদবির, নিয়োগ, বদলিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে নানা উপায়ে বহু কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে দুদকের হাতে। সেসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য ১০ ফেব্রুয়ারি দুদকের উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। এরই মধ্যে দুদক জানতে পারে, ডিআইজি মিজান তার এক ভাগ্নের নামে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুই হাজার বর্গফুটের একটি বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট কিনে ভাড়া দিয়েছেন। তার এক ভাইয়ের নামে বেইলি রোডে কিনেছেন আলিশান ফ্ল্যাট। উত্তরায় স্ত্রীর নামে আছে ফ্ল্যাট ও প্লট। হবিগঞ্জে রয়েছে তার বাগানবাড়ি।
এভাবে তার সম্পদের একটা লম্বা তালিকা পায় দুদক। তিনি তার দুই সন্তানের পেছনে কানাডায় লেখাপড়ার খরচ বাবদ প্রতি মাসে ৪-৫ লাখ টাকা ব্যয় করেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে ৩ মে তাকে দুদকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জানা গেছে, তিনি দুদকের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। যদিও তিনি দুদক কর্মকর্তাদের বলেছেন, তার যা সম্পদ আছে, সবই তার আয়কর নথিতে দেখানো আছে।
ডিআইজি মিজান যে ভাগ্নে ও ভাইয়ের নামে রাজধানীর বেইলি রোড ও সেগুনবাগিচায় সম্পদ গড়েছেন, তাদের দু’জনকেও দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে মিজানের ভাগ্নে বলেছেন, ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রির দু’মাস আগে তিনি পুলিশের এসআই পদে নিয়োগ পেয়েছেন।
নিয়োগ পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে সেগুনবাগিচায় দুই হাজার বর্গফুটের বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব কি না বা ফ্ল্যাট কেনার ২ কোটি টাকার উৎস কী? দুদকের এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি তিনি। দুদক থেকে তাকে বলা হয়েছে, আপনাকে ২ কোটি টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনার টাকা কে দিয়েছে, তার জবাব দিতে। তিনি সময় নিয়েছেন।
দুদকের কর্মকর্তারা জানান, এনবিআর থেকে ডিআইজি মিজানের আয়কর নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া মিজান ও তার পরিবারের পোষ্যদের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, ঢাকা-বরিশাল জেলা রেজিস্ট্রার, বিআরটিএ, রাজউক, রিহ্যাবসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অফিসে। তথ্য হাতে আসার পর ডিআইজি মিজান যে হিসাব দাখিল করবেন, তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে তিনি কোনো তথ্য গোপন করেছেন কিনা।
ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি তদন্তও চলমান রয়েছে।