দেশের খবর: কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালেই চিকিৎসা করানো হবে।
তিনি রাজি থাকলে মঙ্গলবার সকালে তাকে নাজিমুদ্দির রোডের পুরাতন কারাগার থেকে শাহবাগের বিএসএমএমইউ হাসপাতালে আনা হবে।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন এ কথা জানিয়েছেন।
চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে ঢাকার বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতাল বা লন্ডনে পাঠানোর দাবির মধ্যেই এ সিদ্ধান্তের কথা জানালেন কারা মহাপরিদর্শক।
সোমবার দুপুরে কারা অধিদফতরে সৈয়দ ইফতেখার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা উনাকে (খালেদা জিয়া) আগামীকাল সকালে বিএসএমএমইউতে নিয়ে যাব। বিএসএমএমইউ তৈরি রাখতে বলেছি। তবে উনি যদি রাজি থাকেন। উনার রাজি হওয়ার একটা বিষয় আছে।
খালেদা জিয়ার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, জেল কোড অনুযায়ী সরকারি অর্থ খরচ করে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, বিএসএমএমইউ চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী সর্বোচ্চ সরকারি প্রতিষ্ঠান। যদি সেখানে তার চিকিৎসার বিষয়ে কোনো সুযোগ-সুবিধার অভাব থাকে, তাহলে বেসরকারি হাসপাতালে নেয়ার প্রশ্ন আসে।
গত শনিবার খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা দেখে এসে বলেছিলেন- গত ৫ জুন বিএনপি নেত্রীর ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ হয়েছিল বলে তারা ধারণা করছেন। সে কারণে তিনি পড়ে গিয়েছিলেন।
এরপর রোববার দুপুরেই খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে পরীক্ষা করানোর উদ্যোগের কথা জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। পরে তিনি বলেন, ঠিক কখন খালেদা জিয়াকে পরীক্ষার জন্য নেয়া হবে, তা আইজি প্রিজন্স নির্ধারণ করবেন।
এরপর আজ আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন জানালেন, খালেদা জিয়াকে মঙ্গলবার বিএসএমএমইউতেই চিকিৎসা করানো হবে।
তবে রোববারই এক সংবাদ সম্মেলন করে বিএসএমইউতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিরোধিতা করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, পিজিতে (বিএসএমএমইউ) উনার যে চিকিৎসা, সেই চিকিৎসার ব্যাপারে খালেদা জিয়া সন্তুষ্ট নন। সেখানে তার যথাযথ চিকিৎসা হবে না, সেখানে তিনি চিকিৎসা করাতে চান না, সেখানে তিনি চিকিৎসা নেবেন না। আমরা মনে করি, পিজিতে তার যথাযথ চিকিৎসা হবে না।
এদিকে রোববার সন্ধ্যায় এক ইফতার মাহফিলে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার সভাপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাঠানোর দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘আজ (রোববার) পত্রিকায় দেখলাম, খালেদা জিয়ার চিকিৎসকেরা বলেছেন, তিনি (খালেদা) সাত মিনিট অজ্ঞান ছিলেন। এ কথা সঠিক হয়ে থাকলে তার নিশ্চয়ই টিআইএ হয়েছিল। অর্থাৎ তার সাময়িকভাবে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে গিয়েছিল। এ ধরনের রোগীর ভবিষ্যতে ব্রেন স্ট্রোক বা প্যারালাইসিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। সেহেতু ভালো চিকিৎসার জন্য নিউরোলজিক্যাল সেন্টারে তার চিকিৎসা হওয়া উচিত।’
বদরুদ্দোজা চৌধুরী আরো বলেন, ‘যেহেতু খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলের নেতা ছিলেন, সুতরাং অন্য বিবেচনা বাদ দিয়ে শুধু রাজনৈতিক ও সামাজিক বিবেচনায় তার সঠিক চিকিৎসা হওয়া উচিত।’
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে খালেদা জিয়া পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন।পুরাতন এই কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে খালেদা জিয়াকে প্রথমে জেল সুপারের পরিত্যক্ত কক্ষে রাখা হয়েছিল। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মহিলা ওয়ার্ডে।
বন্দি জীবনে খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার দাবি করার পর গত এপ্রিলের শুরুতে তাকে বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে বিএসএমএমইউতে আনা হয়েছিল।
তবে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে ওই দিনই তাকে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে ফেরত নেয়া হয়।
এরপর এপ্রিল ও মে মাসে একাধিকবার বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, কারাগারে খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
দলটি তাকে ঢাকায় ইউনাইটেড হাসপাতালে বা বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য দাবি জানায়। এরমধ্যেই গত ৫ জুন খালেদা জিয়ার কারাগারে ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ করার খবর আসে।