খেলার খবর: ক্ষণ গণনার পর্ব প্রায় শেষ। এবার উন্মাদনায় ভাসার পালা। আর বাকি একদিন। রাত পোহালেই বিশ্বকাপ। প্রস্তুত মস্কো, প্রস্তুত রাশিয়া। বিশ্বকাপের মাতাল হাওয়ায় গোটা বিশ্বই এখন ফুটবলে বুঁদ। সবার মুখে মেসি, নেইমার, রোনাল্ডো।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে ঝড় উঠছে চায়ের কাপে। ঢাকা-মস্কো- সবখানেই একই ছবি। আগামীকাল যেখানে পর্দা উঠবে ২০১৮ বিশ্বকাপের, মস্কোর সেই লুঝনিকি স্টেডিয়াম সেজে উঠেছে নতুন সাজে। গোটা রাশিয়াতেই অবশ্য সাজ সাজ রব। তবে এই মুহূর্তে ফুটবলের তীর্থভূমি লুঝনিকিই। ৮০ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার বিশালাকার এই স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক রাশিয়ার মুখোমুখি হবে সৌদি আরব।
ম্যাচের আগে ৩০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে গোটা বিশ্বের সামনে মেলে ধরবে রাশিয়া। উদ্বোধনী মঞ্চে বিশ্বখ্যাত দুই শিল্পী রবি উইলিয়ামস ও আইদা গারিয়ুফুলিনার সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন ব্রাজিলীয় ফুটবল গ্রেট রোনালদোও। যারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও ম্যাচের টিকিট পাননি, তাদের জন্যও স্টেডিয়ামের বাইরে লাগানো হয়েছে বড় পর্দা। এ ছাড়া মস্কোর সব ফ্যান জোনেই বড় পর্দায় বিশ্বকাপ উপভোগের সুযোগ থাকছে।
মেসি, নেইমার, রোনাল্ডোরা রাশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে ঘাঁটি গাড়লেও বিদেশি সমর্থক ও পর্যটকদের ভিড়ে সবচেয়ে বেশি গমগম করছে মস্কো। বিশ্বকাপে ৩২টি দেশ অংশ নিলেও এই মুহূর্তে রাশিয়ার রাজধানীতে অবস্থান করছে অন্তত ১২০টি দেশের মানুষ। যাদের কাছে বিশ্বকাপের টিকিট আছে তাদের গলায় ঝুলছে ফ্যান আইডি কার্ড। তাতে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হলেও আবাসন সংকট ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে।
হোটেলগুলো ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে চার-পাঁচ গুণ পর্যন্ত। তারপরও হোটেলে রুম না পেয়ে অনেকে রাত কাটাচ্ছেন মস্কোর মেট্রো স্টেশনে। তাতে অবশ্য বিশ্বকাপ উন্মাদনায় ভাটা পড়ছে না কারও। রাস্তায় দলবেঁধে গলাখুলে গাইছে হরেক দেশের হরেক সমর্থক। ভিড় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মস্কোর পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যস্ততা। সম্ভাব্য সন্ত্রাসী আক্রমণ ও দাঙ্গাবাজ সমর্থকদের সামলাতে মস্কোতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩০ হাজার নিরাপত্তাকর্মী। সবমিলিয়ে অবিস্মরণীয় একটি বিশ্বকাপ আয়োজনে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখছে না রাশিয়া।
আয়োজক রাশিয়া হয়তো সফল হবে, তবে স্বাগতিক দলের বিশ্বকাপযাত্রা থেমে যেতে পারে গ্রুপপর্বেই। আন্তর্জাতিক ফুটবলে গত আট মাসে জয়ের মুখ দেখেনি রাশিয়া। নিজেদের দলের বিশ্বকাপ জয়ের বাস্তবসম্মত কোনো আশা না থাকায় প্রায় সব রুশ সমর্থকই দ্বিতীয় পছন্দের দলের জন্য গলা ফাটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন! সেই দ্বিতীয় পছন্দের তালিকায় সবার উপরে রয়েছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের নাম।
মস্কোর পাশের একটি শহরে আর্জেন্টিনার বেস ক্যাম্পে মেসিদের অনুশীলন দেখতে প্রতিদিনই সমর্থকদের ঢল নামছে। টিকিট না থাকায় যারা অনুশীলন দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না, তাদের হাহাকার দেখেই বোঝা যাচ্ছে রাশিয়ায় কতটা জনপ্রিয় আর্জেন্টিনা দল। সোচিতে মঙ্গলবার ব্রাজিল দলের প্রথমদিনের অনুশীলনেও দেখা গেছে একই ছবি। সেখানে নেইমারকে ঘিরে উন্মাদনা মেসির চেয়ে এতটুকু কম নয়।
একইভাবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ও মোহামেদ সালাহর কারণে পর্তুগাল ও মিসরের অনুশীলন দেখতে ছুটছেন অনেকে। বড় দলগুলোর মধ্যে কাল সবার শেষে রাশিয়ায় পা রেখেছে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি ও ইংল্যান্ড। এবার ফেভারিটের কাতারে জার্মানি ও ব্রাজিল রয়েছে শীর্ষে। এদিকে মস্কোয় আজ ফিফার কংগ্রেসে ২০৭টি সদস্য দেশের ভোটে ২০২৬ বিশ্বকাপের আয়োজক চূড়ান্ত হবে। যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডা যৌথভাবে আয়োজন করতে চায় ২০২৬ বিশ্বকাপ। তাদের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী আফ্রিকার দেশ মরক্কো।