দেশের খবর: রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ‘চওড়া হাসি’ দিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় এসেছেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, দলীয় নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পদত্যাগের দাবির চাপে পড়ে ক্ষমা ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন নৌমন্ত্রী।
পরে সচিবালয়ে তিনি বলেন, সেই দিন ওই ঘটনার পরে আমার হাসিমুখের অভিব্যক্তির জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আপনারা যারা আমার এই আচরণে দুঃখ পেয়েছেন তাদের কাছে আমি ক্ষমা চাই। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এতে আমি মর্মাহত। ব্যথিত এবং শোকাহত। আর যেন কোনও মায়ের বুক খালি না হয় আমরা সেই পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমিও সন্তানের পিতা। আমি কথা দিচ্ছি, অভিযুক্ত চালকদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা আমার হাসির ছবি দেখিয়েছেন, সে কারণে আমার নিজেরও খারাপ লেগেছে। কারণ, শিক্ষার্থীদের প্রতি আমারও সহমর্মিতা আছে। সুতরাং এই ছবি দেখার পরে আমি নিজেও মর্মাহত হয়েছি। এটা সিচুয়েশনের সাথে যায় না।
তবে, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান যে বক্তব্য দিয়েছে এটা তার নিজস্ব বক্তব্য এর সঙ্গে আওয়ামী লীগ একমত নয় বলে জানিয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার বেপরোয়া গাড়ি চালানোর দৌরাত্ম্যে বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর’।
এরপর নৌমন্ত্রী শাজাহান খানকে আরও সংযত হয়ে কথা বলার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সরকার বিব্রত হয় এমন যে কোন মন্তব্য পরিহার করতে হবে। কথা বলার সময় আরও সতর্ক থাকতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ না করে মহারাষ্ট্রের সড়ক দুর্ঘটনার রেফারেন্স দেওয়া ঠিক হয়নি।’
পরে বুধবার (১ আগস্ট) বিকেলে নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিমের (১৬) বাসায় গিয়ে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। এ সময় শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন নৌমন্ত্রী।
যদিও সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় পরিবহন শ্রমিকনেতা ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগসহ ৯টি দাবির বাস্তবায়ন চেয়ে গত পাচঁদিন ধরে আন্দোলন করছে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে নৌমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি নিশ্চয়তা দেয় তিনি পদত্যাগ করলে দুর্ঘটনা কমবে, তাহলে তার পদত্যাগে আপত্তি নেই।
এই আন্দোলনের মাধ্যমে সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। এর আগেও সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। তবে তা গত এক বছর ঝুলে থাকার পর আবার নতুন সড়ক পরিবহন আইনের অনুমোদন দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এটি তোলা হবে জাতীয় সংসদে।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুলাই দুপুরের দিকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। নিহত দুই শিক্ষার্থী হলো শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম ওরফে রাজীব (১৭) ও একই কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম ওরফে মিম (১৬)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১২ জন শিক্ষার্থী।
সড়ক দুর্ঘটনার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নৌমন্ত্রী হেসে বলেন- যারা যেটুকু অপরাধ, তার শাস্তি হবে ততটুকু। কিন্তু মন্ত্রীর মুখে ছিল চওড়া হাসি। এসময় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নৌমন্ত্রী ভারতের মহারাষ্ট্রে এক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩ জন নিহত হওয়ার সঙ্গে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে তুলনা করেন। এই বক্তব্যের কারণে উঠেছে তুমুল সমালোচনা।