খেলার খবর: ৫ টেস্ট, ১৩৪ রান, গড় ১৩.৪০। ২০১৪ সালের ইংল্যান্ড সফরে বিরাট কোহলির পরিসংখ্যান। গত চার বছরে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। কিন্তু উজ্জ্বল ক্যারিয়ারে একমাত্র দাগ হয়ে ছিল ওই সংখ্যাগুলো। এবার প্রথম ইনিংসেই যেন মাটিচাপা দিলেন সেবারের বিভীষিকা। ইংলিশ পেসারদের সুইং বোলিংয়ে যখন কাঁপছে দল, ব্যাটিং মাস্টারক্লাস দেখিয়ে ভারতীয় অধিনায়ক খেললেন ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস।
পেসারদের দারুণ বোলিংয়ে এজবাস্টন টেস্টে বড় লিড নেওয়ার পথে ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু কোহলির দুর্দান্ত সেঞ্চুরি প্রথম ইনিংসে দু্ই দলকে রেখেছে প্রায় সমতায়। ইংলিশদের ২৮৭ রানের জবাবে ভারত করেছে ২৭৪।
মাত্র ১৩ রানে এগিয়ে থেকে শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ড হারিয়েছে অ্যালেস্টার কুককে। বৃহস্পতিবার দিন শেষ করেছে দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেটে ৯ রান নিয়ে। দুই দিন শেষে এগিয়ে তারা ২২ রানে।
ভারতের ইনিংসের অর্ধেকের বেশি রান একাই করেছেন কোহলি। ১৪৯ রানের ইনিংসটির অর্ধেকর বেশি রানই আবার করেছেন শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে!
স্যাম কারান, জেমস অ্যান্ডারসনদের দারুণ বোলিংয়ে একসময় ভারত ছিল দুইশর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায়। ১৮২ রানে যখন পড়ল অষ্টম উইকেট, কোহলির রান তখন ৬৭।
সেখান থেকে শেষ দুই উইকেটে ভারত যোগ করেছে ৯২ রান, কোহলি একাই করেছেন ৮২।
কোহলির অসাধারণ ব্যাটসম্যানশিপের পাশাপাশি ইংলিশরা নিজেদের দুর্দশার দায় দিতে পারে নিজেদেরই। ২১ ও ৫২ রানে স্লিপে কোহলির ক্যাচ ছেড়েছেন ডাভিদ মালান। প্রথম ক্যাচটি ছিল একদমই সহজ। জীবন পেয়ে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন ভারত অধিনায়ক।
দিনের শেষের মতো শুরুটাও ছিল ভারতের। ৯ উইকেটে ২৮৫ রান নিয়ে দিন শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। ইনিংস শেষ হয় আর মাত্র ২ রান যোগ করেই।
ভারতের দুই ওপেনার দলকে এনে দেন ভালো শুরু। গতবারের ইংল্যান্ড সফরে ৫ টেস্টেও একটি অর্ধশত রানের উদ্বোধনী জুটি পায়নি ভারত। এবার মুরালি বিজয় ও শিখর ধাওয়ান প্রথম ইনিংসেই এনে দেন ফিফটি জুটি।
এরপরই স্যাম কারানের ছোবলে এলোমেলো ভারত। মাত্র দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা তরুণ বাঁহাতি পেসার ফেরান দুই ওপেনারকেই। মাঝে ফিরিয়ে দেন তিনে নামা লোকেশ রাহুলকে। ৯ রানের মধ্যে ভারত হারায় ৩ উইকেট।
অজিঙ্কা রাহানেকে নিয়ে কোহলি চেষ্টা করেছিলেন প্রতিরোধের। রাহানেকে ফিরিয়ে ৪১ রানের সেই জুটি ভাঙেন বেন স্টোকস। এই অলরাউন্ডার নিজের পরের ওভারে উপড়ে ফেলেন দিনেশ কার্তিকের মিডল স্টাম্প। ভারতের রান তখন ৫ উইকেটে ১০০।
আরেক পাশে খুব সাবলীল ছিলেন না কোহলিও। অসাধারণ এক স্পেলে ভারতীয় অধিনায়কের দারুণ পরীক্ষা নেন অ্যান্ডারসন। এই সময়টায়ই কোহলি জীবন পান প্রথমবার। তবে হাল না ছেড়ে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় এগিয়ে নেন দলকে। পরে খেলেছেন চোখধাঁধানো সব শট।
হার্দিক পান্ডিয়া ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনরা চেষ্টা করেছেন সঙ্গ দিতে। খুব বেশি সময় পারেননি টিকতে। ইংলিশরা তখন ছিল বড় লিডের আশায়। শেষ দুই জুটিতে সেই আশা গুঁড়িয়ে দেন কোহলি।
নবম উইকেট জুটিতে এসেছে ৩৫ রান, তাতে ইশান্ত শর্মার অবদান ৫। ইনিংসের সর্বোচ্চ ৫৭ রানের জুটি শেষ উইকেটে, তাতে উমেশ যাদবের অবদান কেবল ১! দারুণ বুদ্ধিমত্তায় স্ট্রাইক ধরে রেখে খেলেছেন কোহলি। দুর্দান্ত সব শটে বাড়িয়েছেন রান।
১৭২ বলে স্পর্শ করেছিলেন ২২তম টেস্ট সেঞ্চুরি। ভারত অধিনায়কের কাছে এই সেঞ্চুরি কতটা, সেটি বুঝিয়ে দিয়েছেন নজরকাড়া উদযাপনেও।
শেষ পর্যন্ত তার বিদায়েই ইনিংসের সমাপ্তি। নামের পাশে তখন ২২৫ বলে ১৪৯ রান। এক ইনিংসেই গতবারের গোটা সিরিজের চেয়ে ১৫ রান বেশি!
ভারত অধিনায়কের হাসি আরও চওড়া শেষ বেলায়। ঠিক যেন প্রথম ইনিংসের রিপ্লে দেখিয়ে অ্যালেস্টার কুককে বোল্ড করে দিলেন অশ্বিন। সেখানেই সমাপ্তি দিনের খেলা। দুই দিন শেষে দুই দলই সমানে সমান!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৮৭
ভারত ১ম ইনিংস: ৭৬ ওভারে ২৭৪ (বিজয় ২০, ধাওয়ান ২৬, রাহুল ৪, কোহলি ১৪৯, রাহানে ১৫, কার্তিক ০, পান্ডিয়া ২২, অশ্বিন ১০, শামি ২, ইশান্ত ৫, উমেশ ১*; অ্যান্ডারসন ২/৪১, ব্রড ০/৪০, কারান ৪/৭৪, রশিদ ২/৩১, স্টোকস ২/৭৩)।
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৩.৪ ওভারে ৯/১ (কুক ০, জেনিংস ৫*; শামি ০/০, অশ্বিন ১/৫)।