বিদেশের খবর: আসামের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) নিয়ে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার কারণ নেই বলে জানিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। ভারত সফররত বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও সাংসদ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি ভারতের মন্ত্রীর এই আশ্বাসের কথা জানিয়েছেন। নজিবুল বশর বলেন, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতে ভারতের প্রতিমন্ত্রী এই আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে কাউকে পুশব্যাক করা হবে না’।
ভারত সরকারের আমন্ত্রণে সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি তিন দিনের সফরে গত সোমবার ভারতে আসেন। ওই দিনই তিনি কিরেন রিজিজু ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের সঙ্গে দেখা করেন। গতকাল মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) এক আলোচনা সভায় অংশ নেন। নয়াদিল্লির রাউস অ্যাভিনিউয়ে ওআরএফের কার্যালয়ে সম্মেলন কক্ষে এ আলোচনা সভা হয়।
সেখানে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার পর প্রশ্নোত্তর পর্বে নজিবুল বশর জানান, ভারতের এনআরসি থেকে বাদ পড়া লোকজন নিয়ে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কারণ নেই বলে আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু।
আসামের এনআরসি থেকে ৪০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা বাদ পড়েছেন। এ নিয়ে অশান্ত রয়েছে আসাম। স্থানীয় বিজেপি নেতা ও কট্টরপন্থী গোষ্ঠীর মতে, বাদ পড়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগ ‘বাংলাদেশি’ ও ‘রোহিঙ্গা’।
প্রশ্নোত্তর পর্বে নজিবুল বশর বলেন, ‘রিজিজুকে আমি বলি, “১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। এর ওপর যদি আসাম থেকে ৪০ লাখ ফেরত পাঠান, তাহলে তো মরেই যাব!” এ ব্যাপারে রিজিজু আশ্বাস দেন, আমাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আসামের নাগরিক নিবন্ধন তৈরি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তা ছাড়া সবকিছু হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে।’
ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা তুলে ধরে নজিবুল বশর বলেন, ‘তাঁকে (এম জে আকবর) বলেছি, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে ভারত সক্রিয় না হলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মতো ভারতকেও ভুগতে হবে। ওই অঞ্চল হয়ে দাঁড়াবে সন্ত্রাসবাদীদের আঁতুড়ঘর।’
ঢাকায় গত ২৯ জুলাই কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থী আন্দোলন প্রসঙ্গে নজিবুল বশর বলেন, যা হয়েছে তা নিতান্তই দুর্ভাগ্যজনক। ওটাকে দুর্ঘটনা না বলে হত্যা বলা উচিত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আন্দোলন বিপথ চালিত হয়ে পড়ে। জামায়াত ও বিএনপি ঢুকে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে অশান্তি বাড়ানো হয়। পুলিশও কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাত্রাছাড়া আচরণ করেছে। সাংবাদিকদের পেটানো, আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার ‘লজ্জাজনক’।
শাসক আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটে রয়েছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। জাতীয় সংসদে দলটির দুজন সদস্য রয়েছেন। সুফি আদর্শে তাঁরা দল গড়েছেন জানিয়ে নজিবুল বশর বলেন, তাঁরা কট্টরবাদী ইসলামের বিরোধী। ধর্মীয় মৌলবাদের বিরোধী। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে তাঁরা মাঠে দাঁড়িয়ে লড়াই করেন। এবারের ভোটেও তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতাসংগ্রামের চেতনাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ভোটে লড়বেন।