দেশের খবর: একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আরও একাধিক আন্দোলনের আশঙ্কা করছে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা। এ জন্য তারা সরকারকে সচেতন থাকার পাশাপাশি এ ধরনের পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ আগস্ট) তোপখানা রোডে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ আহ্বান জানানো হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন ছেড়ে ক্লাসরুমে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়। তবে বৈঠকে শরিকরা মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে তাদের ক্ষোভের কথা জানায়। আইনে সর্বনিম্ন শাস্তি উল্লেখ না থাকাসহ বেশ কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকার কথাও বলে শরিকরা। তারা আইনটি চূড়ান্ত করার আগে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেয়। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের প্রতিশ্রুতি ৯ দফা দাবি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়।
১৪ দলের আগের বৈঠকের মতো বৃহস্পতিবারের বৈঠকেও নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের কঠোর সমালোচনা করা হয়। গাড়ির চালকসহ পরিবহন শ্রমিকদের বেপরোয়া হওয়ার জন্য তারা পরোক্ষভাবে নৌমন্ত্রীকেই দায়ী করে। চালক হওয়ার জন্য ‘গরু-ছাগল-মানুষ আর রাস্তা চিনলেই হয়’ নৌমন্ত্রীর এই বক্তব্য উদ্ধৃত করে শরিক দলের এক সদস্য বৈঠকে বলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই পরিবহন শ্রমিকরা আশকারা পেয়ে যায়।’
সূত্র জানায়, বৈঠকে জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, জাসদ সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া ও কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান নির্বাচনের আগে আরও আন্দোলনের আশঙ্কা করেন। গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন কাঠামো, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তারা বলেন, ‘গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতনের দাবি নিয়ে সরকারকে নির্লিপ্ত মনে হচ্ছে। সরকারের প্রতিশ্রুতিতে এমপিওভুক্তি ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ঘরে ফিরে গেলেও তারা আউটপুট না পেলে, আবারও রাজপথে নামতে পারে। আর সুযোগ সন্ধানীরা এসব ইস্যু কাজে লাগাতে পারে। নির্বাচনের আগে সরকারকে এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কেবল প্রশাসনিক ভাবে না করে এইসব বিষয়গুলো রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।
বৈঠকের সভাপতি ও ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘বৈঠকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইন নিয়ে শরিকরা কিছু অস্পষ্টতার কথা বলেছে।’
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন, শিক্ষকদের এমপিওসহ বার্নিং ইস্যু দ্রুত সমাধান করার জন্য সরকারকে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বৈঠকের পরে ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সড়কে আর নৈরাজ্য সহ্য করা হবে না ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে।বিআরটিএ’র অবহেলা আর দেখতে চায় না জাতি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে নাসিম বলেন, ‘লাইসেন্স আর ফিটনেস ছাড়া কোনও গাড়ি যেন সড়কে চলতে না পারে, ট্রাফিক পুলিশকে সেই নির্দেশ দিতে হবে।’ মন্ত্রী এমপি যে-ই হোক, গাড়ির কাগজ না থাকলে কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন নাসিম। তিনি বলেন, ‘বাস মালিক শ্রমিকদেরকে প্রয়োজনে জেলে ঢোকাতে হবে।’
আনিসুর রহমান মল্লিকের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, উপদফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া প্রমুখ অংশ নেন।