অনলাইন ডেস্ক: যশোর রোডের ভারতীয় অংশে ৩৫৬টি অতি প্রাচীন গাছ কেটে ফেলার অনুমতি দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসাত থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের চেকপোস্ট পেট্রাপোল পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার রাস্তায় যানবাহন চলাচলে গতি ফিরিয়ে আনতে সরকার পাঁচটি উড়ালপুল বা ফ্লাইওভার তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে এক্ষেত্রে একটি শর্তও দেওয়া হয়েছে তা হলো- একটি গাছ কাটার পরিবর্তে ওই অঞ্চলেই নতুন করে ওই প্রজাতিরই পাঁচটি চারা গাছ রোপণ করতে হবে।
শুক্রবার আদালতের পক্ষ থেকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য ও বিচারপতি অরিজিৎ ব্যানার্জির ডিভিশন বেঞ্চ এক আদেশে রাজ্য সরকারকে আগামী তিন মাস পরে কাজের অগ্রগতি নিয়ে একটি রিপোর্টও দিতে বলেছে।
তবে আদালতের পক্ষে গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হলেও আগামী তিন সপ্তাহের জন্য সেই রায়ের ওপরই এদিন স্থগিতাদেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। কারণ ইতিপূর্বেই গাছ বাঁচাও কমিটির পক্ষে ভারতের শীর্ষ আদালতে ক্যাভিয়েট ফাইল করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে মামলাকারীদের সুপ্রিমকোর্টে যাওয়ার রাস্তাও খোলা রয়েছে। এই তিন সপ্তাহের মধ্যে গাছ না কাটার উপযুক্ত কারণ ও সম্প্রসারণের বিকল্প উপায় দর্শাতে না পারলে যশোর রোডের ৩৫৬টি গাছ কাটার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের কাছে আর কোনও বাধাই থাকবে না।
উল্লেখ্য, ভারত-বাংলাদেশ যোগাযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হলো যশোর রোড বা জাতীয় সড়ক-১১২। বারাসাত থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই যশোর রোড সম্প্রসারণ ও এর ওপর উড়ালপুল তৈরির জন্য গত বছরের এপ্রিলে রাস্তার দুই ধারে ছাতার মতো ছড়িয়ে থাকা শত বছরের পুরনো গাছগুলোর অনেকগুলোই নির্বিচারে কাটা পড়ে। এরপরই ওই গাছ কাটার প্রতিবাদ করে তার স্থগিতাদেশ চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করা হয়।
ওই মামলার প্রেক্ষিতেই কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিপারপতি নিশিথা মাত্রে ও বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ একটি স্থগিতাদেশ জারি করে গাছ কাটা বাতিল করে। যদিও এরই মধ্যে রাজ্য সরকারের পক্ষে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য হাইকোর্টে আবেদন জানান। কিন্তু রাজ্যের আবেদন খারিজ করে স্থগিতাদেশ বহাল রাখে আদালত।
রাজ্য সরকারের পক্ষে সে সময় আদালতে জানানো হয়, যশোর রোডের ধারে কোন গাছই হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি, তাছাড়া গাছ কাটার পরই তার পরিবর্তে নতুন গাছ রোপণ করা হচ্ছে।
অ্যাডভোকেট জেনারেল আরও জানান, যে শুধুমাত্র শতাব্দী প্রাচীন ও আবেগের কারণে উন্নয়নের কাজকে স্তব্ধ করা ঠিক নয়।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুই দেশের মধ্যে সংযোগের ক্ষেত্রে এই রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং রেললাইন বরাবর উড়ালসেতু নির্মাণ, পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল সহজতর করার জন্য গাছ কাটা খুব জরুরি। সে ক্ষেত্রে কয়েকজন মানুষের আপত্তিতে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ থেমে থাকতে পারে না, তাছাড়া মামলাকারীরা কেউই স্থানীয় নয়।
অ্যাডভোকেট জেনারেলের সেই আর্জির বিরোধিতা করে মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য সে সময় অভিযোগ করেন গাছ কেটে রাজ্য সরকার আইন লঙ্ঘন করছে।
আদালতকে তিনি জানান, তিনি উন্নয়নের বিরোধী নন কিন্তু শতাব্দী প্রাচীন গাছগুলোকে এই ঐতিহাসিক সড়কের একটা সাক্ষী হিসেবে গণ্য করা হয়। সেখানে এই গাছ কেটে ফেলা উচিত নয়। যদিও এরপর কয়েক দফায় আদালতের পক্ষে এই মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশও জারি করা হয়। অবশেষে শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট ৩৫৬টি গাছ কেটে ফেলার অনুমতি দিল। তবে আদালতের এই রায়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন পরিবেশবাদীরা।
গাছ বাঁচাও কমিটির সদস্য অনির্বাণ দাস জানান, আমাদের যদিও শীর্ষ আদালতের যাওয়ার সুযোগ রয়েছে, তবে হাইকোর্টের আদেশে গাছ কাটার ক্ষেত্রে আর কোন নিষেধাজ্ঞা থাকল না বলেই মনে হচ্ছে।
যশোর রোডের ভারতীয় অংশের ৩৫৬টি প্রাচীন গাছ কাটার অনুমতি হাইকোর্টের
পূর্ববর্তী পোস্ট