খেলার খবর: আরেকটি ব্যাটিং ব্যর্থতা নিয়ে তাঁর কথায় দুঃখ-হতাশা মিশে থাকল। আবার অধিনায়ক যখন, তখন আশার আলোও দেখতে হয় তাঁকে। তিনি মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেই অতীতে দৃশ্যমান আলোর রেখাও ভরসা দিতে দাঁড়িয়ে যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুঃস্বপ্নের টেস্ট সিরিজের পর ওয়ানডে সাফল্যের গল্পকারের ঠোঁটে তাই এ কথাও ভীষণ মানিয়ে গেল, ‘আরো দুটি খেলা আছে। আমাদের জন্য টুর্নামেন্ট এখনো শেষ হয়ে যায়নি।’
এটা ঠিক যে এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তবে আজই শেষ হওয়ার সম্ভাবনাও আগের দুই ম্যাচের ব্যর্থতায় উঁকি দিয়ে আছে। দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে আজ যখন আরেকটি ভারত-পাকিস্তান মহারণ চলবে, তখন আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টে টিকে থাকার লড়াইয়ে বাংলাদেশের সামনে আফগানিস্তান। যাদের সামনে গত সাড়ে তিন বছরে বহু কীর্তির মালা গাঁথা বাংলাদেশকে ইদানীং বড্ড অসহায় দেখাচ্ছে।
দেখিয়েছিল গত জুনে ভারতের দেরাদুনে হওয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজেও। এবার ওয়ানডে বলে আফগান স্পিনারদের সামনে টি-টোয়েন্টির সময় স্বল্পতাজনিত ঝুঁকিও থাকার কথা ছিল না। কিন্তু আবুধাবিতে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ বুঝিয়েছে এই ফরম্যাটেও রশিদ খানরা নাভিশ্বাস তুলে ছাড়তে জানেন বাংলাদেশের। এর সঙ্গে সুপার ফোরের ভারত ম্যাচে বিধ্বস্ত হওয়ার স্মৃতিও যোগ হওয়ায় মানসিকভাবে নিজেদের চাঙ্গা করা মুশকিলই।
তবু হতাশা ভুলে সামনেই তাকাতে চাইলেন মাশরাফি, ‘আমার মনে হয় এই অবস্থা থেকে এখনো ফেরা সম্ভব। এত হতাশ হওয়ারও কিছু দেখছি না। অবশ্যই দুই ম্যাচের হার হতাশার। বিশেষ করে এই ম্যাচের (ভারত) হার তো আরো হতাশার। তবে আমাদের সুযোগ এখনো আছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিততে পারলে পাকিস্তান ম্যাচে ফিফটি-ফিফটি সুযোগ চলে আসবে।’
সেই সুযোগটি আসতেও তো আজ আফগানিস্তানকে হারাতেই হবে। তবু আবুধাবির ধীরগতির উইকেটে আফগান স্পিনাররা যেভাবে বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়েছেন, তাতে আশার চেয়ে আশঙ্কাই বেশি। কিন্তু ওই যে পেছনে আছে বাজে সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্মৃতি। আছে বাংলাদেশের সবশেষ সিরিজেই। সে জন্যই মাশরাফির সঙ্গে সুর মেলান সাকিব আল হাসানও।
এই অলরাউন্ডারের মতে, ‘এর আগেও আমরা এমন পরিস্থিতিতে পড়েছি এবং ঘুরেও দাঁড়িয়েছি। আমি বিশ্বাস করি সেই সামর্থ্য আমাদের আছে। আমরা স্বাভাবিক যে ক্রিকেটটা খেলে অভ্যস্ত, চেষ্টা করতে হবে সে রকমই খেলার। যদিও এমন অবস্থান থেকে স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলা কঠিনও। তবে মনে হচ্ছে ঘুরে দাঁড়াতে না পারার মতো পরিস্থিতিতে আমরা নেই।’ যদিও গ্রুপের দুই ম্যাচ জেতা আফগানিস্তান সুপার ফোরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকেও কাঁপিয়ে দিয়েছে। দুয়ে মিলে দল হিসেবে দারুণ ছন্দেও আছে তারা।
সেই ছন্দ বিবেচনায় আপাতত আফগানদেরই এগিয়ে রাখছেন সাকিব। একই সঙ্গে তাঁর সার্বিক বিবেচনা আবার দল হিসেবে বাংলাদেশকেই এগিয়ে রাখছে, ‘ছন্দের কথা চিন্তা করলে অবশ্যই আফগানিস্তান এগিয়ে। এই টুর্নামেন্টে খুবই ভালো ক্রিকেট খেলছে। তবে আমি বিশ্বাস করি আমরা ওদের চেয়ে ভালো দল। আমাদের পারফরম্যান্সও তাই সেভাবেই করতে হবে।’
অবশ্য নিজেদের এগিয়ে রাখার ব্যাপারটি ব্যাখ্যার দাবি রাখে। সেই ব্যাখ্যা সাকিব দিয়েছেনও, ‘ওদের চেয়ে আমরা বেশি জিতেছি। ওদের চেয়ে বড় দলগুলোর বিপক্ষে আমরা বেশি জিতেছি। র্যাংকিংয়েও আমরা বেশি এগিয়ে ওদের চেয়ে। স্বাভাবিকভাবেই আমরা ওদের চেয়ে এগিয়ে।’ এই এশিয়া কাপের পারফরম্যান্স বিবেচনায় এগিয়ে থাকা আফগানদের সামনে স্পিনে নাকালও হয়েছে বাংলাদেশ। যেটি দেরাদুনের সিরিজেও হয়েছিল। দুয়ে মিলে প্রশ্নটা আসছেই যে এ রকম ব্যর্থতা দক্ষতার ঘাটতির জন্য নাকি সমস্যাটা মানসিকতায়?
পরদিনই যখন জীবন-মরণ ম্যাচ, তখন সাকিব এর গভীরে ঢুকতেই রাজি হলেন না কাল, ‘আমার মনে হয় না এত গভীরভাবে চিন্তা করার মতো পরিস্থিতি এখন। আমরা কোন ধরনের ক্রিকেট খেলে অভ্যস্ত এবং আমাদের কোন ধরনের ক্রিকেট খেলা উচিত, এদিকেই এখন মনোযোগী হওয়া উচিত। কাদের বিপক্ষে খেলছি, এটা নিয়ে না ভেবে আমাদের কাজগুলো ঠিকভাবে করার দিকেই মনোযোগ রাখতে হবে। আমরা আমাদের দিনে পৃথিবীর যেকোনো দলকেই হারানোর সামর্থ্য রাখি।’
এশিয়া কাপে টিকে থাকতে হলে সেই সামর্থ্য আজ দেখাতেই হবে!
আজ টিকে থাকার লড়াই বাংলাদেশের
পূর্ববর্তী পোস্ট