দেশের খবর: একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক মহলে চলছে হিসাব নিকাশ। এর অংশ হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জোট শরিকদের নিয়েও চলছে আলোচনা। দলগুলোর একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন এ জোটকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না তারা।
নেতারা বলছেন, কয়েকজন জনবিচ্ছিন্ন ও রাজনীতি থেকে পরিত্যক্ত রাজনীতিক দিয়ে গড়া নতুন এ জোট নিয়ে জাতির মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এরা জাতীয় জীবনে বা জাতীয় রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি; আগামীতেও পারবেন না।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার দাবিকে বেআইনি উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘সংবিধানের মধ্যে থেকে নির্বাচন করার বিষয়ে আমাদের যে অবস্থান, তাতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মতো জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ারও স্বপ্ন ভেঙে যাবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এ জোটকে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ ছাড়া অন্য কিছু ভাবছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে জোটের নেতারা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার পাঁচ দফা দাবিকে বিএনপি-জামায়াতের দুষ্কর্ম রক্ষার ঢাল হিসেবে দেখছেন।’
সরকারবিরোধী বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনের লক্ষ্যে গত শনিবার রাজধানীতে ড. কামাল হোসেন ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশে বিএনপি নেতাদের পাশাপাশি অনেককেই দেখা গেছে। ওই সমাবেশ থেকে সরকারকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সংলাপে বসে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে সময় বেঁধে দিয়েছেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা। একই সঙ্গে তফসিল ঘোষণার আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে সংসদ ভেঙে দেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
সরকার এ দাবি না মানলে আগামী ১ অক্টোবর থেকে সারা দেশে সভা-সমাবেশ করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। এক সময়ের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা সাবেক নেতাদের এ উদ্যোগের পর রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। তবে তাদের এ উদ্যোগকে খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন না আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক দলের নেতারা।
১৪ দলের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জোটের আরেক শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন।
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘এক-এগারো আর বিএনপি-জামায়াতি ও বামাতিরা আবার এক হয়েছে। তারা সরকার পতনের আলটিমেটামও দিয়েছে। লক্ষ্য একটাই, নির্বাচন বানচাল করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণকে এত বোকা ভাববেন না। তারা তাদের অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই এই উত্তর-দক্ষিণের ঐক্যের আন্দোলন তো বটেই, নির্বাচনসহ সব ক্ষেত্রেই প্রত্যাখ্যান করবে। তারপরও আমরা তাদের নির্বাচনে আহ্বান করছি।’
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের ৫ দফা দাবি কার্যত বিএনপি-জামায়াতের দুষ্কর্ম রক্ষার ঢাল। বিএনপি-জামায়াতকে রক্ষা করতে তিনি ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘ডা. কামাল হোসেন ও বি. চৌধুরী সাহেবদের বিএনপি-জামায়াতকে রাজনৈতিক ময়দানে পুনর্বাসন করার প্রকল্প মূলত দণ্ডিত খালেদা জিয়াকে দম ফেলার সুযোগ করে দেওয়া এবং রাজনীতির মাঠে হালাল করা। ভোটের আগে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি, তথাকথিত নির্দলীয় সরকারের দাবি এবং সংসদ বাতিলের দাবি এ মুহূর্তে বর্তমান সরকারের পক্ষে মানা সম্ভব নয়। কারণ শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরির পাঁয়তারা করছেন বি. চৌধুরীরা।’