খেলার খবর : মিরপুরে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে ৮ উইকেটে তোলে ২৭১ রান। জবাবে জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২৪৩।
সিরিজের প্রথম ম্যাচটা হেরে গেছে জিম্বাবুয়ে। ১ উইকেট হাতে রেখে যখন মাঠ ছাড়ছে দলটি, বাংলাদেশের দেওয়া ২৭২ রানের লক্ষ্যটা তখনো ২৯ রান দূরে। অন্তত কাগজে-কলমে তা–ই লেখা থাকবে। কয়েক বছর পর ম্যাচের স্কোরকার্ড দেখলেও মনে হবে, ২৮ রানে হারা এ ম্যাচে লড়াই করেছে জিম্বাবুয়ে। কিন্তু সত্যটা হলো, জিম্বাবুয়ে ম্যাচটা হেরে গেছে ইনিংসের অষ্টম ওভারেই, মোস্তাফিজের বলে যখন চেফাস ঝুবাওর স্টাম্প উড়ল। বাংলাদেশের বোলারদের সামনে এতটাই অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে জিম্বাবুয়ে যে ম্যাচটা যে আরও ওভার লম্বা হয়েছে, এতে দর্শকের বিরক্তি শুধু বেড়েছে। ম্যাচের ফল নিয়ে এক ফোঁটা আগ্রহ জন্ম নেয়নি বাকি সময়ে।
মোস্তাফিজের প্রথম বলটা বুঝতে পারেননি ঝুবাও। এর আগে ঝড় তুলেছিলেন এই বাঁহাতি ওপেনার। ১২৬ ক্যারিয়ার স্ট্রাইকরেট নিয়ে এ ম্যাচ খেলতে নামা এই ব্যাটসম্যান আজ প্রথম ২৩ বলেই ৩৫ রান তুলেছেন। মাশরাফি ও মেহেদী হাসান মিরাজের প্রথম ৭ ওভারেই ৪৮ রান তুলে উড়ছিল জিম্বাবুয়ে। ঝুবাও ফিরলেন, সঙ্গে নিয়ে গেলেন লড়াইয়ের সব ঝাঁজও। এ জুটিটাই যে ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি হয়ে থাকল।
এরপর থেকেই ধুঁকে ধুঁকে এগিয়েছে জিম্বাবুয়ের ইনিংস। নাজমুল ইসলামের দুর্দান্ত দুটি বলে বোল্ড আউট হয়েছেন দলের মূল তিন ব্যাটিং ভরসার দুজন—ব্রেন্ডন টেলর ও সিকান্দার রাজা। অন্য ভরসা আউট হওয়ার জন্য কোনো বোলারের ধার ধারেননি, মুশফিকুর রহিমের দারুণ গ্লাভস ওয়ার্কে রান আউট হয়েছেন অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। দলকে টানার চেষ্টা করেছেন ক্রেগ আরভিন। কিন্তু মিরাজের বল বুঝতে না পেরে সেই আরভিনও যখন ফিরছেন, সফরকারীদের রান তখন সবে এক শ ছুঁয়েছে।
২৫.১ ওভারে প্রতিপক্ষের ৫ উইকেট তুলে নিয়ে একটু ‘বিশ্রামে’ গেলেন বাংলাদেশের বোলাররা। সেই সুযোগে ইনিংসের তৃতীয় সর্বোচ্চ জুটির দেখা মিলল। পিটার মুর ও শন উইলিয়ামসের ৪৫ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটির সময়টুকুতেও এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়নি, জিম্বাবুয়ে জেতার চেষ্টা করছে। ইনিংস লম্বা করার এই ব্যর্থ চেষ্টা থেকে দর্শককে মুক্তি দিয়েছেন মিরাজ। মুর (২৬) আউট হলেন দলের ১৪৫ রানে। উইলিয়ামস এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থেকে তিরিপানো ও মাভুটার বিদায়ও দেখলেন। মাভুটাকে অবশ্য দোষ দেওয়া যাচ্ছে না। নিজের বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে মিরাজ যে অমন ক্যাচ নেবেন সেটা ভাবা সম্ভব ছিল না জিম্বাবুইয়ান লেগ স্পিনারের পক্ষে।
১৬৯ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর ইনিংসের সেরা সময় কাটিয়েছে জিম্বাবুয়ে। ১০ ওভারে ১০৩ রান নেওয়ার প্রায় অসম্ভব লক্ষ্যে ছুটতে চেষ্টা করেছেন উইলিয়ামস ও জারভিস, এটা হয়তো বলা যাচ্ছে না। কিন্তু টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের মতো বাংলাদেশের বোলারদের আধিপত্যও মেনে নেননি এ দুজন। বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডারদের মধ্যেও এ সময় ফুটে উঠেছিল অর্থহীন এক ম্যাচ খেলার আলস্য। শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৩৭ রান করে আউট হয়েছেন কাইল জারভিস। ৮ বল বাকি থাকতে ৬৭ রানের নবম উইকেট জুটিটা থামল। উইলিয়ামস থামেননি, ইনিংসের শেষ বলে গিয়ে ফিফটি বুঝে নিয়েছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। প্রথম ৪২ বলে ২২ রান করা উইলিয়ামস ৫৮ বলেই ছুঁয়েছেন ফিফটি।
এ ম্যাচ থেকে প্রাপ্তির খাতায় ইমরুল কায়েসের ক্যারিয়ার সেরা ১৪৪ রান আর সাইফউদ্দিনের প্রথম ফিফটিটাই যাচ্ছে। ১৩৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলা একটি দল যে ২৭১ রান করল, এর পেছনে এ দুজনের রেকর্ড গড়া ১২৭ রানের জুটিটাই মূল ভূমিকা রেখেছে। তবে এমন দাপুটে ম্যাচেও কিছু প্রশ্ন থেকে গেল। ইনিংসের সিকিভাগ পেরোনোর আগে যে ম্যাচের ভাগ্য লেখা হয়ে গেছে, সে ম্যাচেও কেন মাশরাফির বোলিং কোটা পূরণ করতে হবে সেটা বোঝা যায়নি। যেমন যায়নি মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, নাজমুল ইসলামদের কোটা পূরণ না করার কারণ।