দেশের খবর: পারিবারিক দুর্নীতি রোধে কঠোর আইন আসছে। অবসরে যাওয়ার দুই বছরের মধ্যে কোনো সরকারি কর্মকর্তা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবেন না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ছেলেমেয়ে, স্ত্রী ও ভাইবোন ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো দরপত্র ও নিয়োগসহ কোনো কাজে অংশ নিতে পারবে না।
বিচারক বাবা তার আইনজীবী সন্তানের মামলা শুনানি করতে পারবে না। মন্ত্রণালয়ের সচিবের অনুমোদনে পাওয়া কোনো কোম্পানির পরিচালক হতে পারবে না তার স্ত্রী। এমন সব বিধান রেখে ‘স্বার্থ সংঘাত প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা আইন-২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এই আইনের কোনো ধারা লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
মতামত নিতে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে খসড়াটি পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পাশাপাশি আইনটি দুদক আইন-২০০৪ এর তফসিলভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অনুরোধ করেছে দুদক।
এ প্রসঙ্গে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বুধবার বলেন, দুদকের শীর্ষ কর্তাব্যক্তির চিন্তা থেকে আইনের খসড়াটি করা হয়েছে। এটি কার্যকর হলে পারিবারিক অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
বিশেষ করে স্বজনপ্রীতি করার সুযোগ থাকবে না। তিনি বলেন, আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী, সন্তান, ভাইবোনসহ নিকটাত্মীয়রা দফতরে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করেন। এসব অনিয়ম বন্ধ হবে। তিনি আরও বলেন, আইনে সুনির্দিষ্ট কিছু না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনা যায় না। আইনটি দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তে ব্যবহার করা হবে।
খসড়ায় যা রয়েছে: খসড়ায় স্বার্থ-সংঘাত বলতে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বা নিয়োজিত পরামর্শক বা উপদেষ্টাদের প্রভাবিত করতে পারে এমন বিষয় বোঝানো হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, ‘ক’ একটি প্রকল্পে নিয়োজিত থাকাকালে তার পুত্র ‘খ’ ওই প্রকল্পের টেন্ডারে অংশ নিয়ে কাজ না পেলেও ‘ক’-এর বিরুদ্ধে স্বার্থ-সংঘাতের অভিযোগ আনা হবে।
চিকিৎসকের অপরাধের বিষয়ে খসড়ায় উদাহরণ দিয়ে বলা হয়- ‘ক’ একটি হাসপাতালের চিকিৎসক। কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাছ থেকে ফ্ল্যাট নেয়ার বিনিময়ে বা কমিশনে বা অন্য কোনো কারণে ‘ক’ ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার জন্য রোগীদের পাঠালে এবং পাঠানোর তথ্য প্রমাণিত হলে ‘ক’ এবং ওই ডায়াগনস্টিকের মালিককে এ আইনের আওতায় অভিযুক্ত করা হবে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অন্য কারও কাছে পাঠালে ‘ক’ দোষী হবেন না।
খসড়ায় বলা হয়- অবসরের পর দুই বছরের মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গঠিত কমিটি বা সাবকমিটি বা কোনো পরামর্শক সভায় সরকারি কর্মকর্তা নিয়োজিত হতে পারবেন না। এটি হলে স্বার্থ-সংঘাত বিরাজ করবে বলে ধরে নেয়া হবে।
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে- ‘ক’ এনবিআরের চেয়ারম্যান থাকাকালে বিভিন্ন এনজিওকে কর অবকাশ প্রদানের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করে। অবসরে যাওয়ার পর ১৫ মাস পর ‘ক’ একটি এনজিওতে যোগদান করে। অবসরের আগে প্রণীত নীতিমালায় এনজিওটি কর অবকাশ পেলে ‘ক’- এর নিয়োগে স্বার্থ-সংঘাত বিরাজ করবে। অর্থাৎ ‘ক’ এই আইনের আওতায় অপরাধী বলে গণ্য হবেন।
অপরাধের ধরন তুলে ধরে খসড়ায় বলা হয়- যেমন সরকারি দফতরে চাকরিকালে ‘ক’ ওই দফতরের প্রকল্প পরিচালনাকারী বেসরকারি ফার্মের অবকাশ যাপন কেন্দ্রে সপরিবারে বিনা খরচে অবকাশ যাপন করলে ‘ক’ এবং ওই ফার্মের অংশীদাররা এই আইনের আওতায় অপরাধী হবে। ‘ক’ একটি নিয়োগ কমিটির সদস্য থাকাকালে তার পুত্র ‘খ’ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে এবং ওই তথ্য গোপন করা হলে ‘ক’ এ আইনের আওতায় অপরাধী হবেন।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ‘ক’-এর স্ত্রী ‘খ’ একটি তেল কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার। ওই তেল কোম্পানির সঙ্গে ‘ক’ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে চুক্তি করলে এবং মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক জেনেও চুক্তি বাতিল না করলে ‘ক’ এবং কর্মকর্তারা এই আইনের আওতায় অভিযুক্ত হবেন।
অপরাধের শাস্তি: কোনো ব্যক্তি এই আইনের কোনো ধারা লঙ্ঘন করলে তাকে সর্বোচ্চ সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা অপরাধের গুরুত্ব অনুসারে উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর বিধানে যা-ই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধগুলো আমলযোগ্য এবং জামিনযোগ্য হবে। এ আইনে শাস্তির কথা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই- এমন কোনো ধারা বা বিধান লঙ্ঘন করলে, লঙ্ঘনে সহায়তা করলে অথবা লঙ্ঘনে কাউকে প্ররোচিত করা হলে তাকে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।